নীতি আয়োগের বৈঠক শুরুর ঘণ্টাদুয়েকের মধ্যে ওয়াকআউট করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাংলাকে বঞ্চনার প্রসঙ্গে কথা শুরু করতেই থামিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। বন্ধ করে দেওয়া হয় মাইক। বৈঠক থেকে বেরিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আমি বলা শুরু করতেই থামিয়ে দেওয়া হয়েছে। মাইক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এটা খুব অপমানজনক। আর কোনওদিন বৈঠকে যাব না।”
বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র সাত জন মুখ্যমন্ত্রী কেন্দ্রীয় বাজেটে বঞ্চনার অভিযোগ তুলে বৈঠক বয়কট করলেও বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শনিবার সকালে রাইসিনায় হাজির হয়েছিলেন। কিন্তু কিছু ক্ষণের মধ্যেই বৈঠক ছেড়ে বেরিয়ে রাষ্ট্রপতি ভবনের বাইরে তিনি বলেন, অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডুকে ২০ মিনিট বলার সুযোগ দেওয়া হয়। গোয়া, অসম, ছত্তিশগড়ের মুখ্যমন্ত্রীরাও ১০ থেকে ১২ মিনিট বলার সুযোগ পান। কিন্তু, আমি বলতে শুরু করার পাঁচ মিনিটে মধ্যেই মাইক বন্ধ করে দেওয়া হয়। বৃহত্তর স্বার্থে এই বৈঠকে যোগ দিয়েছিলাম। যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় এমন পক্ষপাতিত্ব অনুচিত। এটা অপমানজনক।’
তাঁর দাবি, অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা, গোয়ার মুখ্যমন্ত্রী প্রমোদ সাওয়ান্ত, ছত্তীসগঢ়ের মুখ্যমন্ত্রী বিষ্ণুদেও সাইও বলায় যথেষ্ট সুযোগ পেয়েছেন। তাঁর মাইক বন্ধের ঘটনাকে সরাসরি ‘অপমান’ বলেও চিহ্নিত করেছেন মমতা। তিনি বলেন, ‘‘বিরোধীদের মধ্যে একমাত্র আমিই বৈঠকে হাজির ছিলাম। কিন্তু বলতে দেওয়া হল না। আমি আরও কিছু বলতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তার আগেই মাইক বন্ধ করে অপমান করা হল।’’
#WATCH | On NITI Aayog meeting in Delhi, West Bengal CM Mamata Banerjee says, “…I said you (central government) should not discriminate against state governments. I wanted to speak but I was allowed to speak only for 5 minutes. People before me spoke for 10-20 minutes. I was… pic.twitter.com/nOgNQ9jnRd
— ANI (@ANI) July 27, 2024
এদিনের বৈঠকে প্ল্যানিং কমিশন ফিরিয়ে আনার দাবি জানান মমতা। তাঁর বক্তব্য, নীতি আয়োগের সেই অর্থে নীতি লাগু করার আর্থিক ক্ষমতা নেই। যা যোজনা কমিশনের ছিল। ফলে নীতিমালা তৈরি হলেও তা কী করে লাগু করবে নীতি আয়োগ, প্রশ্ন মুখ্যমন্ত্রীর।
শনিবার সকাল ১০টা নাগাদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির পৌরহিত্যে নীতি আয়োগের বৈঠক শুরু হয়। কেন্দ্রীয় বাজেটে বঞ্চনার অভিযোগ তুলে বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র সাত মুখ্যমন্ত্রী বৈঠক বয়কট করেছিলেন। তবে যোগ দেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। “দেশের স্বার্থে, রাজ্যের স্বার্থে”, তিনি নীতি আয়োগের বৈঠকে যোগ দেন বলেই জানান। প্রসঙ্গত, শুক্রবার দিল্লি যাওয়ার আগেই কেন্দ্রের বিরুদ্ধে বিমাতৃসুলভ আচরণের অভিযোগ তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। তাঁর অভিযোগ ছিল, বাজেটে বাংলাকে বঞ্চনা করা হয়েছে। মমতা বলেছিলেন, ‘‘বাজেটে যে ভাবে বিরোধী রাজ্যগুলিকে বঞ্চনা করা হয়েছে, সেটা মানতে পারছি না। এক দিকে ইকনমিক ব্লকেড, পলিটিক্যাল ব্লকেড, এর সঙ্গে বাংলা-সহ বিভিন্ন রাজ্যকে টুকরো টুকরো করে দেওয়ার যে পরিকল্পনা, তার চরম নিন্দা করছি। মন্ত্রী সংসদে দাঁড়িয়ে বাংলা ভাগের কথা বলছেন!’’
সেই সঙ্গে মমতা বলেছিলেন, ‘‘বিভিন্ন সূত্র থেকে জানতে পারছি, ওদের দলের অনেক নেতাও বিহার-ঝাড়খণ্ড-অসম-বাংলাকে ভাগ করা নিয়ে বিভিন্ন ধরনের বিবৃতি দিচ্ছেন। কড়া নিন্দা করছি এর। বিহার, ঝাড়খণ্ড, অসম এবং বাংলাকে ভাগ করা মানে গোটা দেশকে ভাগ করা। আমরা একে সমর্থন করি না।’’ মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, বাংলা ভাগের দাবির প্রতিবাদ জানাতেই নীতি আয়োগের বৈঠকে যোগ দেবেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘বৈঠকে থাকব কিছু ক্ষণ। কিছু বলতে দিলে বলব। আর না হলে প্রতিবাদ করব। বাংলার হয়ে কথা বলব।’’ তাঁর ওই মন্তব্যেই বৈঠক থেকে ওয়াক আউটের ইঙ্গিত ছিল বলে বিজেপির একাংশের অভিযোগ। এর আগেও মোদী সরকারের বিরুদ্ধে মুখ্যমন্ত্রীদের বৈঠকে তাঁকে বলতে না দেওয়ার অভিযোগ তুলেছিলেন মমতা। শনিবার দেখা গেল, মমতার অনুমানই সঠিক। তাঁর অভিযোগ, তাঁকে মাত্র ৫ মিনিট বলতে দেওয়া হয়েছিল। তার পর বন্ধ করে দেওয়া হয় মাইক। যার প্রতিবাদে তিনি বৈঠক ছাড়েন।