প্রায় বছর ঘুরতে চললেও মণিপুরে (Manipur) থামছে না জাতি সংঘাত। কুকি বনাম মেতেই গোষ্ঠীর লড়াইয়ে বারবার রক্তাক্ত হচ্ছে উত্তর পূর্বের রাজ্যটি। তফসিলি উপজাতি ইস্যুতে দীর্ঘদিন ধরেই কার্যত বারুদের স্তূপের উপর ছিল মণিপুর। হাই কোর্টের একটি রায় স্ফুলিঙ্গের কাজ করে। মুহূর্তে ঘটে যায় বিস্ফোরণ। সোমবার সেই নিরদেশ পালটে দিল মণিপুর হাই কোর্ট।
নতুন রায়ে বলা হল, মেইতেইদের তফসিলিবর্গভুক্ত হওয়ার বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্র ও রাজ্য কথা বিনিময় করবে। আগে মণিপুর হাইকোর্ট রাজ্যকে সরাসরি নির্দেশ দিয়েছিল যে, তারা যেন অবিলম্বে মেইতেইদের শিডিউল ট্রাইব তালিকাভুক্ত করে, যেটা কুকিদের রোষের কারণ হয়েছিল। এখন যেটা দাঁড়াল, তাতে কোর্টের আর কোনও ভূমিকাই থাকছে না। রাজ্যকে এবার এ বিষয়ে সরাসরি নির্দেশ দেবে কেন্দ্র। মানে, বিষয়টিতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব এখন কেন্দ্রেরই।
গত বছরের মে মাসে মণিপুর হাই কোর্ট নির্দেশ দিয়েছিল, মেতেইদের তফসিলি উপজাতির তালিকাভুক্ত করা যায় কিনা সেই নিয়ে চার সপ্তাহের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিতে হবে রাজ্য সরকারকে। আদালতের এই রায়ের পরেই অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে গোটা মণিপুর। মেতেইদের পক্ষে আদালতের রায়ের বিরোধিতায় ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে কুকিরা। দুপক্ষের সংঘর্ষে প্রাণ হারান দুশোর বেশি মানুষ।
মণিপুরে ট্রাইবাল বা আদিম জনগোষ্ঠীর মধ্যে লড়াই নতুন কিছু নয়। কয়েকশো বছর ধরে তা চলছে। তবে এবার তা ভিন্ন মাত্রা ধারণ করেছে। বিশ্লেষকদের অনেকেই বলছেন, মণিপুরে সংখ্যাগুরু মেতেইরা তফসিলি উপজাতির তকমা দাবি করে বারুদের স্তূপে আগুন দিয়েছে। এর ফলে, কুকি-ঝাোমি ও টাংখুল নাগাদের মতো রাজ্যের সংখ্যালঘু আদিবাসীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে শুরু করেছে। কারণ, সংখ্যাগুরুর বিরুদ্ধে ‘শিডিউল ট্রাইব স্ট্যাটাস’ই তাদের রক্ষাকবচ। সেটা না থাকলে পাহাড় ও উপজাতিদের জন্য সংরক্ষিত অন্যান্য এলাকায় অবাঞ্ছিত প্রবেশ ঘটবে মেতেইদের। সংখ্যাগুরুর ভৌগলিক ও সাংস্কৃতিক আগ্রাসনে অস্তিত্ব লোপ পাবে সংখ্যালঘুর।
মেইতেইরা মণিপুরের সবচেয়ে বড় জনগোষ্ঠী। মোট জনসংখ্যার ৫৩ শতাংশই মেইতেই। মূলত ইম্ফল উপত্যকায় বাস মেইতেইদের। ওদিকে কুকি ও জো সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষরা থাকেন পাহাড়ি অঞ্চলে। মেইতেইদের সংরক্ষণের অধিকার দাবির বিরোধিতা করেছে কুকিরা। এই নিয়ে ২০২৩ সালের ৩ মে প্রথম সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছিল। তারপর থেকেই অশান্তির আঁচে ক্রমশ পুড়েছে মণিপুর।
তবে শেষ পর্যন্ত নিজেদের রায়ই বাতিল করল মণিপুর হাই কোর্ট। আদালত জানিয়েছে, তফসিলি উপজাতি তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়টি কেন্দ্র সরকারের এক্তিয়ারভুক্ত। আদালত সেই কাজে হস্তক্ষেপ করতে পারে না। এই মামলায় সুপ্রিম কোর্টের পুরনো রায়েরও উল্লেখ করেছে মণিপুর হাই কোর্ট। ইতিমধ্যেই মেতেইদের তফসিলি উপজাতি তালিকার অন্তর্ভুক্ত করা নিয়ে মণিপুর সরকারের থেকে সুপারিশ চেয়েছে কেন্দ্র। তার ভিত্তিতেই সিদ্ধান্ত নেবে মোদি সরকার। তবে এই নিয়ে এখনও কোনও সুপারিশ পাঠায়নি মণিপুর সরকার।