অগ্নিগর্ভ মণিপুরের রাজধানী ইম্ফল৷ একাধিক বাড়ি, দোকান, গাড়িতে আগুন লাগিয়ে তাণ্ডব বিক্ষোভকারীদের৷ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মোতায়েন সেনা৷ বন্ধ করা হয়েছে ইন্টারনেট পরিষেবা৷ জারি কার্ফু৷
পরিস্থিতি এতটাই অগ্নিগর্ভ যে নিজের রাজ্যের হয়ে সাহায্য চেয়ে ট্যুইট করেছেন অলিম্পিক মেডেল জয়ী বক্সার মেরি কম৷ তিনি লিখেছেন, ‘আমার রাজ্য জ্বলছে৷ দয়া করে সাহায্য করুন৷’ এবিষয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীঅমিত শাহের সরাসরি হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন তিনি৷
উল্লেখ্য, ইম্ফাল উপত্যকায় সংখ্যাগরিষ্ঠ হল মৈতেই জনজাতি। তবে তারা সম্প্রতি দাবি তুলেছে যে তাদের তফসিলি উপজাতির তকমা দিতে হবে। তাদের এই দাবির বিরোধ জানিয়েছে স্থানীয় আদিবাসীরা। এই আবহে মণিপুরের অল ট্রাইবাল স্টুডেন্ট ইউনিয়ন একটি মিছিলের আয়োজন করেছিল বুধবার। সেই মিছিল ঘিরেই হিংসা ছড়িয়ে পড়ে চূড়াচাঁদপুর জেলায়। এর আগে এই জেলাতেই মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিংয়ের সভাস্থলে আগুন লাগিয়ে দিয়েছিল ইন্ডিজেনাস ট্রাইবাল লিডারস ফোরামের সদস্যরা। সেবার অবশ্য তাদের অভিযোগ ছিল, সংরক্ষিত জঙ্গল ও জলাভূমি থেকে অসংবেদনশীল ভাবে মানুষজনকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এই আবহে তারা সংরক্ষিত জঙ্গল ও জলাভূমির সমীক্ষার বিরোধ করেছিল। সরকারের কাছে এই সমীক্ষা বন্ধের আর্জি জানানো হয়েছিল। তবে সরকার তাদের কথা শোনেনি বলে অভিযোগ। এদিকে সংগঠনের আরও অভিযোগ, রাজ্য সরকার একাধিক গীর্জা ভেঙে দিয়েছে। এতে তাদের ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত পৌঁছেছে।
আরও পড়ুন: Indian Railways: রেলভাড়ায় ছাড় পাবেন না প্রবীণ নাগরিকরা, চূড়ান্ত রায় সুপ্রিম কোর্টের
এই পরিস্থিতিতে গতকাল বিক্ষোভকারীদের নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়তে বাধ্য হয়েছিল। এই ঘটনার পর ইম্ফল পশ্চিম জেলার কাঞ্চিপুর এবং ইম্ফল পূর্বে সোইবাম লেইকাইতে মৈতেই জনজাতির মানুষজন আদিবাসীদের ওপর হামলা করার জন্য পথে নামে। তবে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। আদিবাসীদের সেই এলাকা থেকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় সেনার মদতে। যাতে নতুন করে অঞ্চলে অশান্তি না ছড়ায় এর জন্য সেনা এবং অসম রাইফেলকে মোতায়েন করা হয়েছে। জারি করা হয়েছে ১৪৪ ধারা।
মণিপুরে প্রায় ৫১ শতাংশ মানুষ মেইতেই সম্প্রদায়ের। তফসিলি জাতির তকমা না থাকায় সে রাজ্যের পার্বত্য অঞ্চলের স্থায়ী বাসিন্দা হওয়ার অনুমতি পায় না তারা। মেইতেইদের অভিযোগ, মায়নমার এবং বাংলাদেশ থেকে অবৈধ অনুপ্রবেশকারী রাজ্যে ঢোকার ফলে তাদের অধিকার খর্ব হচ্ছে। মেইতেইদের দাবির বিরোধিতা করছে অন্য তফসিলি সম্প্রদায়গুলি।
বুধবার রাত থেকে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়৷ বাধ্য হয়ে সেনা নামানোর সিদ্ধান্ত নেয় সে রাজ্যের সরকার৷ মণিপুরের ৮ জেলা জুড়ে জারি হয়েছে কার্ফু৷ ৫ দিনের জন্য বন্ধল করা হয়েছে ইন্টারনেট পরিষেবাও৷ সেনাশিবিরে আশ্রয় নিয়েছে প্রায় ৪ হাজার গ্রামবাসী৷ পরিস্থিতি শান্ত রাখতে শুরু হয়েছে ফ্ল্যাগমার্চ৷
আরও পড়ুন: Wrestler Protest : অমিত শাহের পুলিশের সঙ্গে কুস্তিগীরদের হাতাহাতি