বিবাহিত ধর্ষণকে অপরাধ ঘোষণা করার দাবি নিয়ে যখন সর্বোচ্চ আদালতে মামলা দায়ের হয়েছে, তখন কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদী সরকার তাদের প্রাথমিক হলফনামায় জানিয়ে দিল, এই দাবি সঙ্গত নয়। বিয়ে একটি প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা। তার মধ্যে ধর্ষণের বিষয়টি ঢুকিয়ে অপরাধ আখ্যা দিলে ব্যাপারটা অতিশয় রূঢ় হয়ে যাবে।
কেন্দ্রের প্রথম যুক্তি হল, বিবাহিত সম্পর্কে মহিলাদের অধিকার নিয়ে দেশে যা আইন রয়েছে, তাই ওই ধরনের ঘটনা ঠেকানোর জন্য যথেষ্ট। তার জন্য আলাদা করে ওই ঘটনাকে অপরাধের তালিকাভুক্ত করার দরকার নেই। দ্বিতীয়ত, কেন্দ্র বলেছে, ওই ধরনের ঘটনাকে অপরাধের তালিকায় ফেলা সুপ্রিম কোর্টর ক্ষমতার আওতাভুক্ত নয়। কেন্দ্রের তৃতীয় যুক্তিটি হল, বৈবাহিক সম্পর্কে ধর্ষণের ঘটনা যত না আইনি বিষয়, তার থেকে অনেক বেশি একটি সামাজিক বিষয়। তাই ওই বিষয়ে সমস্ত পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে তবেই সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে।
তবে কেন্দ্রের সরকার পুরো দায় একার ঘাড়ে নিতে চায়নি। বরং কেন্দ্রের বক্তব্য, সব কটি রাজ্যের সঙ্গে আলোচনা করে এ ব্যাপারে সামগ্রিক একটা অবস্থান নেওয়া দরকার।
প্রসঙ্গত, সুপ্রিম কোর্টে যে সমস্ত পিটিশন দাখিল করা হয়েছিল, তাতে বর্তমানে বাতিল ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৫ ধারা অনুযায়ী ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে কোনও স্ত্রীর সঙ্গে তঁার ইচ্ছার বিরুদ্ধে স্বামীর যৌনক্রিয়াকে ধর্ষণ বলে গণ্য করা হবে না। এমনকী নতুন প্রবর্তিত ন্যায় সংহিতাতেও বিষয়টিতে একইভাবে স্বামীকে ছাড়ের কথা রয়েছে।
বৈবাহিক ধর্ষণ প্রসঙ্গে সাম্প্রতিক সময়ে কর্নাটক ও দিল্লি হাই কোর্টের দুই রায়ে দেশজুড়ে হয় ব্যাপক আলোচনা। কর্নাটক হাই কোর্ট এক রায়ে জানায়, যুগে যুগে স্বামীর পোশাক পরিধানকারী পুরুষ নিজেদের স্ত্রীর দেহ, মন ও আত্মার শাসক হিসাবে দেখে আসছে। প্রচলিত এই চিন্তাধারা ও প্রথা মুছে ফেলা উচিত।এই পুরনো, পশ্চাদপসরণমূলক এবং পূর্বকল্পিত ধারণার উপর ভিত্তি করেই এই ধরনের ঘটনাগুলি দেশে ছড়িয়ে পড়ছে। এই ধরনের অসাম্যের অস্তিত্ব নিয়ে চিন্তা করার দায়িত্ব আইন প্রণেতাদের। স্বামী বলেই জোরপূর্বক মিলনে লিপ্ত হওয়া যায় না। আবার দিল্লি হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ এই বিষয়ে বিভক্ত রায় দেয়।