সোমবারের পর মঙ্গলবারও একই ছবি দেখা গেল লোকসভায়। অধিবেশন শুরু হতেই তুমুল হই হট্টগোল শুরু হয় সংসদে। বিরোধী সাংসদের এহেন ভূমিকায় বিরক্ত প্রকাশ করেন স্পিকার ওম বিড়লা। শেষ পর্যন্ত ৫০ জন সাংসদকে সাসপেন্ড করলেন তিনি। চলতি অধিবেশনে এই নিয়ে মোট ১৪২ জন বিরোধী দলের সাংসদকে বরখাস্ত করা হল। যা ভারতের সংসদের ইতিহাসে বেনজির ঘটনা। চলতি অধিবেশনের মতো আর কোনও অধিবেশনে কখনও এত জন সংসদকে একসঙ্গে সাসপেন্ড করা হয়নি। অনেকেই মনে করছেন মঙ্গলবার কার্যত বিরোধীশূন্য হয়ে গেল সংসদ।
সংসদের মধ্যে স্মোক বম্ব নিয়ে দুই ব্যক্তির হানা দেওয়ার ঘটনা নিয়ে উত্তাল গোটা দেশ। এই ঘটনায় বিশেষ আলোচনা চেয়ে একাধিকবার সুর চড়িয়েছে বিরোধীরা। হামলা নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের জবাবদিহি চেয়েছেন তাঁরা। এই ঘটনায় সোমবার সংসদের দুই কক্ষ মিলিয়ে সাসপেন্ড হন ৭৮ জন সাংসদ। পরের দিনও সংসদে বজায় থাকল একই ধারা। একসঙ্গে বহিষ্কৃত হলেন ৫০ জন বিরোধী সাংসদ। গোটা অধিবেশনের জন্যই সাসপেন্ড করা হয়েছে তাঁদের।
এদিন সাসপেন্ড হওয়া সাংসদদের মধ্যে আছেন, কংগ্রেস নেতা শশী থারুর, মণীশ তিওয়ারি, কার্তি চিদাম্বরম, এনসিপি-র সুপ্রিয়া সুলে, সমাজবাদী পার্টির ডিম্পল যাদব, ন্যাশনাল কনফারেন্সের ফারুক আবদুল্লা প্রমুখ। তার আগে, শুক্রবার সাসপেন্ড হয়েছিলেন লোকসভার ১৪ জন এবং রাজ্যসভার একজন সাংসদ।
শুক্রবার পর্যন্ত সংসদের শীতকালীন অধিবেশন চলার কথা। আপাত ভাবে দেখা যাচ্ছে শীতকালীন অধিবেশনের বাকি তিন দিন সংসদের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় শাসক শিবিরকে প্রশ্নবাণে বিদ্ধ করতে থাকছেন ১০০ জনেরও কম বিরোধী সাংসদ। নিম্নকক্ষ লোকসভায় থাকছেন প্রায় ১০০ জন বিরোধী সাংসদ। এই বিরোধী সাংসদদের মধ্যে রয়েছেন অন্ধ্রপ্রদেশের শাসকদল জগন্মোহন রেড্ডির ওয়াইএসআর কংগ্রেসের সাংসদেরা। এই তালিকায় রয়েছেন ওড়িশার শাসকদল নবীন পট্টনায়কের বিজেডির রাজ্যসভা এবং লোকসভার সদস্যেরাও। খাতায়কলমে বিরোধী শিবিরের অংশ হলেও এই দুই দলের সাংসদদের সাম্প্রতিক অতীতে একাধিক বার বিভিন্ন বিতর্ক কিংবা বিল পাশের ক্ষেত্রে শাসক বিজেপির পাশে দাঁড়াতে দেখা গিয়েছে। সেই অঙ্ক মাথায় রাখলে সংসদে বিরোধী শিবির আরও ‘সংখ্যালঘু’ হবে।
তবে লোকসভায় বিজেপি এবং এনডিএ জোটভুক্ত দলগুলির সদস্যসংখ্যা ৩০০-র বেশি। শাসক শিবিরের কোনও সাংসদই সাসপেন্ড হননি এই অধিবেশনে। অন্যদিকে, সাসপেন্ড হওয়া সাংসদদের দাবি, “বিরোধী শূন্য লোকসভা তৈরি করতে চাইছে বিজেপি। রাজ্যসভাতেও তাই করবে। সংসদীয় গণতন্ত্রের মৃত্যু সংবাদ লিখে ফেলতে হবে মনে হচ্ছে।” দেশকে পুলিশি রাষ্ট্রের পথে এগিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলেই মত বিরোধীদের।