লোকসভা ও রাজ্যসভা মিলিয়ে মোট ৭৮ জন সাংসদকে একদিনে সাসপেন্ড করা হল। ভারতের সংসদের ইতিহাসে এমন ঘটনা আগে ঘটেছে কিনা সন্দেহ। সোমবার সংসদে যা হল, এক কথায় বেনজির ঘটনা।
লোকসভায় ঝাঁপ কাণ্ডে সংসদের নিরাপত্তা নিয়ে বড় প্রশ্ন উঠে গেছে বলে মনে করছেন বিরোধীরা। সেই নিয়ে আলোচনার দাবিতে সরব হন তাঁরা। সোমবার সকাল থেকে এই ইস্যুতে দফায় দফায় লোকসভা ও রাজ্যসভাতে বিক্ষোভ দেখান বিরোধী সাংসদরা। যার জেরে এদিন লোকসভা ও রাজ্যসভা মিলিয়ে মোট ৭৮ জন সাংসদকে একদিনে সাসপেন্ড করা হল।
বুধবার সংসদের মধ্যে স্মোক বম্ব নিয়ে দুই ব্যক্তির হানা দেওয়ার ঘটনা নিয়ে উত্তাল গোটা দেশ। এই ঘটনায় বিশেষ আলোচনা চেয়ে একাধিকবার সুর চড়িয়েছে বিরোধীরা। গত শুক্রবারও এই ইস্যুতে বিক্ষোভ দেখিয়ে সাসপেন্ড হয়েছিলেন ১৫ জন সাংসদ। সেই ধারা অব্যাহত থাকল সোমবারও। দুপুর পর্যন্ত অধিবেশন মুলতুবি থাকার পরে আলোচনা শুরু হয়।
এদিন লোকসভায় টেলিকম বিল পেশ করে সরকার। সেই নিয়ে আলোচনা শুরু হতেই সংসদের মধ্যে তুমুল বিক্ষোভ দেখান বিরোধী সাংসদরা। তাঁদের দাবি সংসদের নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনা হোক। এমনকী এ ব্যাপারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের বিবৃতি দাবি করেন বিরোধীরা। তাই নিয়ে স্লোগান দিতে শুরু করেন তাঁরা। যার নেতৃত্বে ছিলেন লোকসভায় কংগ্রেস নেতা দলনেতা অধীর চৌধুরী। কংগ্রেস সাংসদদের মতই স্লোগান তুলছিলেন তৃণমূল, ডিএমকে সাংসদরাও। এই নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে স্পিকার ওম বিড়লা ৩৩ জন সাংসদকে সাসপেন্ড করেন।
সাসপেন্ড হওয়া সাংসদদের তালিকায় রয়েছেন বাংলার অনেক তৃণমূল সাংসদও। কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, অপরূপা পোদ্দার, প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়, সুনীল মণ্ডল, সৌগত রায়, কাকলি ঘোষ দস্তিদার, প্রতিমা মণ্ডল, অসিত মাল, শতাব্দী রায়কে সাসপেন্ড করেছেন স্পিকার। এ ছাড়া এই তালিকায় রয়েছেন ডিএমকের তিন সাংসদ টিআর বালু, এ রাজা এবং দয়ানিধি মারান। এছাড়াও লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা অধীর চৌধুরীও (Adhir Ranjan Chowdhury) সাসপেন্ড হয়েছেন। জানা গিয়েছে, শীতকালীন অধিবেশনে আর যোগ দিতে পারবেন না তাঁরা।
রাজ্যসভাতেও একই ইস্যুতে হই হট্টগোল শুরু হয়। যা নিয়ে বারবার স্পিকার জগদীপ ধনকড়কে দেখা গেছে বিরোধী সাংসদদের সতর্ক করেন। কিন্তু তারপরও বিক্ষোভ থামান না সাংসদরা। তারপরই দেখা যায় ধনকড় ৩৪ জন সাংসদকে সাসপেন্ড করে দেন। শীতকালীন অধিবেশনের বাকি দিনগুলোতে এই সাংসদরা সংসদের আলোচনায় অংশ নিতে পারবেন না। শুধু ৩৪ জন নন, এছাড়াও প্রিভিলেজ কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে আরও ১১ জন সাংসদকে সাসপেন্ড করা হয় রাজ্যসভা থেকে।
সাসপেন্ড হওয়ার পর সংবাদমাধ্যমের সামনে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন সাংসদরা। তাঁদের মতে, সংখ্যাগরিষ্ঠের বাহুবল কাজে লাগিয়ে বিরোধীদের কণ্ঠস্বর দমিয়ে রাখতে চাইছে সরকার। বিরোধীদের উপর বুলডোজার চালানো হচ্ছে।