বাহবিচ্ছেদ হলে হিন্দু মহিলাদের মতোই মুসলিম মহিলারাও স্বামীর কাছে খোরপোশ দাবি করতে পারবেন। এমনটাই জানাল সুপ্রিম কোর্ট (Suprme Court)। বুধবার বিচারপতি বি ভি নাগারত্ন ও বিচারপতি অগাস্টাইন জর্জ মাসিহর বেঞ্চ এই রায় দিয়েছে।
সম্প্রতি তেলঙ্গানা হাইকোর্ট আবেদনকারী মহম্মদ আবদুস সামাদকে তাঁর প্রাক্তন স্ত্রীকে মাসে ১০ হাজার টাকা খোরপোশ দেওয়ার নির্দেশ দেয়।তিনি বিবাহবিচ্ছিন্না স্ত্রীর আনা ভারতীয় দণ্ডবিধির ১২৫ ধারা মোতাবেক খোরপোশের আবেদনকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিলেন। এদিন সেই আর্জি খারিজ হয়ে যায় সর্বোচ্চ আদালতেও। আদালত জানিয়ে দেয়, বিবাহবিচ্ছিন্নাদের অধিকার রক্ষা আইন, ১৯৮৬ অনুসারে মুসলিম মহিলাদের ধর্মনিরপেক্ষতার চোখে আলাদা করে দেখা যায় না।
আবেদনকারী হাইকোর্টে বলেছিলেন যে, মুসলিম পার্সোনাল ল অনুসারে ২০১৭ সালে তাঁদের ডিভোর্স হয়েছিল। কিন্তু, সেই আর্জি নাকচ করে দিয়ে উচ্চ আদালত জানিয়ে দেয় প্রাক্তন স্ত্রীকে মাসে ১০ হাজার টাকা করে খোরপোশ দিতে হবে এবং পারিবারিক আদালতকে ৬ মাসের মধ্যে এই মামলার নিষ্পত্তি করার নির্দেশ দেয়।
এদিন বিচারপতি নাগারত্ন বলেন, ”আমরা ফৌজদারি আবেদন খারিজ করে দিচ্ছি। সেই সঙ্গে এই সিদ্ধান্তে আসছি যে ফৌজদারি আইনের ১২৫ ধারা সমস্ত মহিলার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য, কেবল বিবাহিত মহিলাদের ক্ষেত্রেই নয়।” সেই সঙ্গেই তিনি আরও বলেন, ”অনেক স্বামীরা বুঝতেই পারেন না যে তাঁদের স্ত্রী, যাঁরা গৃহবধূ, তাঁদের উপরে মানসিক দিক থেকে কতটা নির্ভরশীল। সময় এসেছে ভারতীয় পুরুষদের গৃহবধূদের ভূমিকা ও আত্মত্যাগকে স্বীকৃতি দেওয়ার।”
প্রসঙ্গত, এই রায়ের তাৎপর্য বোঝার জন্য ১৯৮৫ সালের শাহ বানো মামলাকে ফিরে দেখা দরকার। ওই রায়ে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছিল, ফৌজদারি আইনের ১২৫ ধারা সকলের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য, ধর্মমত নির্বিশেষে। কিন্তু মুসলিম মহিলা (বিবাহবিচ্ছেদের অধিকার রক্ষা) আইন ১৯৮৬ – আইনে বলা হয়েছিল, মুসলিম মহিলারা কেবলমাত্র ইদ্দতের (অর্থাৎ বিবাহবিচ্ছেদের তিন মাস পর) পর্যন্তই খোরপোষ পেতে পারেন। ২০০১ সালে সুপ্রিম কোর্ট ১৯৮৬ আইনের সাংবিধানিক বৈধতা বহাল রাখে। তবে জানিয়ে দেয়, একজন পুরুষ তাঁর বিবাহবিচ্ছিন্না স্ত্রীকে খোরপোশ দিতে বাধ্য, যতক্ষণ না তাঁর ফের বিয়ে হচ্ছে বা তিনি উপার্জনক্ষম হচ্ছেন।