দেশের পরীক্ষার্থীদের জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ‘নজিরবিহীন উদ্যোগ’ পরীক্ষা পে চর্চা অনুষ্ঠানের খরচ গত ৬ বছরে ১৭৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৮ সালে শুরু হওয়া পরীক্ষা পে চর্চার প্রথম অনুষ্ঠানে খরচ পড়েছিল ৩.৬৭ কোটি টাকা। ২০২৩ সালে ওই অনুষ্ঠানে খরচ হয়েছে ১০.০৪ কোটি। তথ্য জানার অধিকার আইনে (RTI) এক আবেদনের ভিত্তিতে সরকার এই হিসাব পেশ করেছে।
‘দ্য ওয়্যার’-এর দাবি অনুযায়ী আরটিআইয়ে (RTI) শিক্ষামন্ত্রক জানিয়েছে, ২০১৮ সালে যখন পরীক্ষা পে চর্চা শুরু হয়। তখন এই অনুষ্ঠানের জন্য সরকারি কোষাগার থেকে খরচ হয় ৩.৬৭ কোটি টাকা। ২০১৯-এ খরচ হয়েছিল ৪.৯৩ কোটি, ২০২০ সালে পরীক্ষা পে চর্চায় খরচ হয়েছিল ৫.৬৯ কোটি টাকা। ২০২১ সালে ৬ কোটি এবং ২০২২ সালে ৮.৬১ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। অর্থাৎ ধারাবাহিকভাবে প্রতি বছর পরীক্ষা পে চর্চায় কোটি কোটি টাকা খরচ করছে কেন্দ্র।
মানবাধিকার কর্মী কানহাইয়া কুমার আবেদনে ২০২৪ সালের খরচও জানতে চেয়েছিলেন। কিন্তু, কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রকের অধীন বিদ্যালয় শিক্ষা ও সাক্ষরতা দফতরের তরফে জানানো হয়, এই অনুষ্ঠান এখনও সম্পূর্ণ হয়নি। যদিও চলতি বছরের গত ২৯ জানুয়ারি নয়াদিল্লির প্রগতি ময়দানে সপ্তম পরীক্ষা পে চর্চা অনুষ্ঠানটি হয়েছিল।
আরটিআই আবেদনে খরচের বিস্তারিত হিসাব চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু, প্রতিবছরের পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসাব দিতে পারেনি দফতর। এডসিল নামে শিক্ষামন্ত্রকের একমাত্র রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ২০২১ সালের সম্পূর্ণ এবং ২০২২ সালের আংশিক হিসাব প্রকাশ করেছে। ২০২১ সালে ৩৬টি ছবি বানাতে খরচ পড়েছিল ২.১৮ কোটি, নির্মাণ খরচ হয়েছিল ১.৯ কোটি, বিজ্ঞাপনে ৬৬ লক্ষ, ১০.৫ লক্ষ ভিডিও কনফারেন্সিং, ৩.৫ লক্ষের বইপত্র এবং ২.৪৫ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছিল বস্তা বস্তা এসএমএস পাঠানোর জন্য।
২০২২ সালের মোট খরচের ৮.৬১ কোটি টাকার মধ্যে ১৪.৫ লক্ষ টাকা ব্যয় করা হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়া প্রোমোশন খাতে। গতবছর লোকসভায় কেন্দ্রীয় শিক্ষা রাষ্ট্রমন্ত্রী অন্নপূর্ণা দেবী এক লিখিত বিবৃতিতে জানিয়েছিলেন, পরীক্ষা পে চর্চার প্রথম পাঁচটি অনুষ্ঠানে খরচ পড়েছিল ২৮ কোটি টাকার বেশি।
এই ধরনের অনুষ্ঠানের জন্য বিপুল পরিমাণ খরচের বিষয়ে প্রশ্ন তুলে কানহাইয়া কুমার বলেন, ‘পরীক্ষা পে চর্চার জন্য প্রতিবছর রাজকোষ থেকে জলের মতো টাকা চলে যাচ্ছে। অথচ, এইসব ছাত্রছাত্রীদেরই ভবিষ্যৎ এবং কঠিন পরিশ্রম নষ্ট হচ্ছে নিটের মতো নানান পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের মতো অনিয়মের ফলে। পড়ুয়ারা যখন প্রশ্নফাঁস নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য জানতে ব্যাকুল, তখন তিনি মুখে কুলুপ এঁটেছেন। পরীক্ষার্থীদের প্রতি এতটুকু সমবেদনাও খরচ করেননি। দেশের পড়ুয়ারা চাইছেন, পরীক্ষা পে চর্চা বন্ধ করে প্রধানমন্ত্রী এখনই প্রশ্নফাঁস পে চর্চা করুন।’
রাহুল গান্ধীর বক্তব্য, ‘‘নিট-এর হাজার হাজার পরীক্ষার্থী তাঁদের পরিবারের সঙ্গে এই ভয়ংকর গরমের মধ্যে রাস্তায় নেমেছেন। আর নরেন্দ্র মোদী চুপচাপ তামাশা দেখছেন।’’ সরব তৃণমূল কংগ্রেসও। রাজ্যসভায় দলের সাংসদ জহর সরকারের প্রশ্ন, ‘‘নিট পরীক্ষার এক মাস আগে প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়ে গিয়েছিল। গ্রেফতার হওয়া পরীক্ষার্থী অনুরাগ যাদব নিজেই সে কথা জানিয়েছে। তা হলে কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী কাকে বাঁচাতে চাইছিলেন?’’ সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরির প্রশ্ন, ‘‘যদি কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী নৈতিক দায় নিয়ে থাকেন, তা হলে তাঁর পদত্যাগ করা উচিত। কিন্তু তিনি তাকরছেন না।’’