সৈয়দ আলি মাসুদ
তৃতীয়বারের জন্য প্রধানমন্ত্রী পদে শপথ নিলেন নরেন্দ্র মোদী। এই শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে রবিবার সকাল থেকেই সাজো সাজো রব ছিল দিল্লিজুড়ে। এদিন সন্ধেয় নির্ধারিত সময়েই শুরু হয় শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান। জহরলাল নেহরু ছাড়া ভারতের আর কোনও প্রধানমন্ত্রীর টানা তিন বার শপথ নেওয়ার কৃতিত্ব নেই।
মোদীর পাশাপাশি মন্ত্রিসভার সদস্য হিসেবে শপথ নিতে দেখা গেল রাজনাথ সিং, অমিত শাহ, নির্মলা সীতারমণ, জেপি নাড্ডা, শিবরাজ সিং চৌহান, মনহরলাল খট্টর, কুমারস্বামী-সহ একঝাঁক নতুন মুখকে। তবে নয়া মন্ত্রিসভার শপথগ্রহণ পর্ব সম্পন্ন হলেও শরিকদের সমর্থনে গঠিত মোদী-৩ সরকার এখন দুই ‘এন’ ক্র্যাচে নির্ভর। ‘ইস বার ৪০০ পার’ স্লোগান দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। একমাত্র রাজীব গান্ধীর সময় কংগ্রেস পেয়েছিল ৪০০ আসন। সে কারণেই কি মোদী ৪০০ পার করার নাড়া বেঁধেছিলেন। নাকি ‘ইসবার’ শব্দবন্ধের সঙ্গে মিলিয়ে বলেছিলেন, ‘৪০০ পার’, ‘উনিজি’ ছাড়া আর কেউ বলতে পারবে না। তবে যে রেসাল্ট সামনে এসেছে তাতে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে – অধরাই থেকে গিয়েছেন রাজীব। কিন্তু আর কি কোনও উপায় আছে – সেই স্বপ্ন ছোঁয়ার?
২০১৪ সালে মোদী গুজরাত থেকে দিল্লি এসে নয়া বিধান চালু করেন। স্পষ্ট করে দেন, ৭৫ বছরের ঊর্ধ্বে কাউকে আর মন্ত্রিত্ব দেওয়া হবে না। তাদের পোশাকি নাম দেওয়া মার্গদর্শক। লোকে বলে আসলে দর্শক। দুর্জনে বলে, আদবানি-যোশীদের অক্ষম বানানোর জন্য এই নিয়ম বানানো হয়েছিল। নিঃসন্দেহে আরএসএস তাতে সম্মতি দিয়েছিল। সেদিন হয়তো মোদী ভেবেছিলেন তাঁর ৭৫ বছর বয়স হতে ঢের বাকি। কেউ হয়তো তাঁকে বলেনি – ‘আজকের ফুলমালা কালকেই বাসি’। আজ প্রধানমন্ত্রী পদে তিনি শপথ নিলে ঠিকই কিন্তু এক বছর পরেই তাঁর ৭৫ হয়ে যাওয়ার কথা। তবে কি নিজের আদর্শে অবিচল থেকে মঝপথেই প্রধানমন্ত্রী পদ ছেড়ে দেবেন তিনি? নাকি সেদিন ফের চোখে জল এনে জনগণের দাবির কথা বলে কুরসি আঁকড়ে থাকার কৌশল নেবে। এই প্রশ্নই এখন আলোচনার বিষয় রাজনৈতিক মহলে। তবে তাঁকে এই ১০ বছর ধরে যাঁরা দেখছেন তাঁদের বলছেন, দ্বিতীয় সম্ভাবনাই বেশি।
মনস্তত্ত্ববিদরা বলেন, কেউ যদি লাগাতার অন্য কাউকে খাটো প্রমাণ করার চেষ্টা করেন তাহলে অবচেতনে তিনি ওই ব্যক্তির মতো হওয়ার চেষ্টা করেন। অনেকে বলেন, মোদী চেয়েছিলেন নেহরুর মতো করে ইতিহাস তাঁকে মনে রাখুক। তিনি চেয়েছিলেন, ইন্দিরা গান্ধির মতো ‘রাফ-অ্যান্ড টাফ’ হতে। পাকিস্তানকে সবক সেখাতে। সে স্বপ্ন অনেকখানি সফল করেছেন তিনি। কিন্তু যে স্বপ্ন আপাতত অধরা থেকে যাচ্ছে তা হল, ৪০০ পার। রাজীব গান্ধিকে ছুঁতে পারা বুঝি এই জীবনে আর হল না।
তবে ‘মোদী হ্যায় তো মুমকিন হ্যায’এই স্লোগানে আস্থাশীল ভক্তদের বক্তব্য, উনিজি যে নিয়ম করেছিলেন তিনি চাইলে যে নিয়ম ভাঙতেই পারেন। তাদের অনেকের দাবি, ইস বার যদি নাও হয় তবে আগলে বার ৪০০ পার হবেই। রাজীবকে না ছুঁয়েই কি মোদী হাল ছেড়ে দেবেন? নাকি নিজের জন্য লিখবেন নয়া কানুন, বলবে ভবিষ্যৎ।