দেশজুড়ে বাড়ছে জনসংখ্যা। এই পরিস্থিতিতে একাধিক সন্তান চাইছে না কোনও পরিবার। হিন্দু বা মুসলিম, সব পরিবারই এখন একাধিক সন্তানের বিপক্ষে। সম্প্রতি ন্যাশনাল ফ্যামিলি হেলথ সার্ভের নতুন রিপোর্টে উঠে এসেছে এই তথ্য। রিপোর্ট অনুযায়ী, দেশে গর্ভধারণের হার ২.২ শতাংশ থেকে নেমে ২ শতাংশ হয়ে গিয়েছে। এই নতুন সমীক্ষায় দেশের সব ধর্মাবলম্বী মানুষই আছেন। এই জাতীয় পরিবার স্বাস্থ্য সমীক্ষা বা NFHS-এর রিপোর্টে জানা গিয়েছে, দেশে গর্ভধারণের সব থেকে কমেছে মুসলিম ধর্মাবলম্বী নাগরিকদের।
প্রতি পাঁচ বছর পর হওয়া ওই সমীক্ষায় বলা হয়েছে, পাঁচ বছর আগে (২০১৫- ‘১৬-এনএফএইচএস-৪) সন্তান ধারণের বয়সে থাকা মুসলিম মহিলাদের গড় সন্তান সংখ্যা ছিল ২.৬। সদ্য সমাপ্ত (২০১৯-২০২১এনএফএইচএস-৫) সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে সেই হার কমে হয়েছে ২.৩। ১৯৯২-৯৩ সালে হওয়া প্রথম এনএফএইচএস-এর সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যাচ্ছে সন্তান ধারণে সক্ষম মুসলিম মহিলাদের মাথাপিছু সন্তান সংখ্যার গড় অর্ধেকে নেমে এসেছে। তখন ওই সংখ্যা ছিল ৪.৪ জন।
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক জানিয়েছে, সব ধর্মের মধ্যে মুসলিমদের মধ্যেই এই মানদণ্ডে জন্মহার হ্রাস পেয়েছে সবচেয়ে বেশি।
বিশেষজ্ঞরা এই পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলছেন, বিগত কয়েক দশক যাবৎ এই ব্যাপারে উল্টো প্রচার হয়ে আসছিল। ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়ানোর উদ্দেশে লাগাতার মুসলিম জনসংখ্যার বিস্ফোরণের কথা বলা হচ্ছিল। মাস কয়েক যাবৎ হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলি প্রচার শুরু করেছে, অচিরেই মুসলিমরা জনসংখ্যায় হিন্দুদের ছাপিয়ে যাবে। তারা হিন্দু দম্পতিদের বেশি করে সন্তান নেওয়ার জন্য প্রচার শুরু করেছে। আবার উত্তরপ্রদেশ, অসমের মতো রাজ্যগুলি মুসলিম জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে রাজ্য ভিত্তিক জনসংখ্যা নীতি প্রণয়নের পথে হাঁটছে।
আরও পড়ুন: বাবার শেষ ইচ্ছাকে সম্মান দিতে ঈদগাহকে কোটি টাকার জমি দান করলেন দুই হিন্দু বোন
দেশের প্রাক্তন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার এস ওয়াই কুরেশি বছর দুই আগে প্রকাশিত তাঁর গবেষণা গ্রন্থ ‘দ্য পপুলেশন মিথ, ইসলাম ফ্যামিলি প্ল্যানিং পলিটিকস ইন ইন্ডিয়া’-তে তথ্য পরিসংখ্যান দিয়ে দেখিয়েছিলেন, মুসলিম জনসংখ্যা বৃদ্ধি নিয়ে হিন্দুত্ববাদী শিবিরের অভিযোগ ভিত্তিহীন। তিনি কিছু এলাকাভিত্তিক সমীক্ষা রিপোর্ট তুলে ধরে দেখান, নাগরিক জীবনের সুবিধা বঞ্চিত এলাকা এবং দারিদ্র্য পীড়িত অঞ্চলে সব ধর্মের মধ্যেই পরিবার পিছু সন্তান সংখ্যা বেশি।
কলকাতার সোশ্যাল নেটওয়ার্ক ফর অ্যাসিস্ট্যান্স টু পিপল একই কাজ করেছে বাংলায়। তারাও নানা সময়ে করা সমীক্ষা রিপোর্ট তুলে ধরে দেখিয়েছে, জনসংখ্যা নিয়ে মুসলিমদের কাঠগড়ায় তোলা নিছকই ধর্মীয় বিদ্বেষ ছাড়ানো এবং রাজনীতির উদ্দেশে করা হচ্ছে।
দেশে গর্ভধারণের হার কেন কমছে?
- ৬৭ শতাংশ মানুষ এখন গর্ভনিরোধক পদ্ধতির সঙ্গে পরিচিত
- গতবার সমীক্ষায় দেশের ৫৪ শতাংশ মানুষ গর্ভনিরোধক ব্যবহার করতেন
- এখনও দেশের ৯ শতাংশ পরিবার গর্ভনিরোধক ব্যবহার করেন না
শিক্ষাও এর একটা বড় কারণ
একাধিক সন্তানের জন্ম না হওয়ার নেপথ্যে মায়ের শিক্ষাও গুরুত্বপূর্ণ।
সমীক্ষায় জানা গিয়েছে, মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে ১৫-৪৯ বছরের ৩১.৪৯ শতাংশ মহিলারা অশিক্ষিত। ৪৪ শতাংশ মহিলা শিক্ষিত। হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে ২৭.৬ শতাংশ মহিলা অশিক্ষিত। শিক্ষিত মহিলা ৫৪ শতাংশ।
আরও পড়ুন: Sedition Law: রাষ্ট্রদ্রোহ আইনের পুনর্বিবেচনা হবে, সুপ্রিম কোর্টে হলফনামা মোদী সরকারের