চলতি মাসের শুরুতেই রাশিয়া সফর করে এসেছেন মোদি ৷ এবার ইউক্রেন সফরে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি । ভারতীয় বিদেশমন্ত্রক সূত্রে খবর, আগস্টেই ইউক্রেন সফরে যাচ্ছেন মোদি । তবে বিদেশমন্ত্রকের তরফে এই নিয়ে সরকারিভাবে এখনও কিছু জানানো হয়নি ৷ বিদেশমন্ত্রকের একটি সূত্র জানাচ্ছে, রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধে ইতি টানার প্রক্রিয়া নিয়ে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে আলোচনা হতে পারে প্রধানমন্ত্রীর। পাশাপাশি, দ্রুত যুদ্ধবিরতির জন্য কিয়েভ ও মস্কোর মধ্যে দূতের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে পারেন মোদি।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনকে মোদি আলিঙ্গন করায় এক্স হ্যান্ডেলে ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। বলেছিলেন, ”বৃহত্তম গণতন্ত্রের প্রধানমন্ত্রী একজন যুদ্ধাপরাধীকে আলিঙ্গন করছেন। শান্তিরক্ষার ক্ষেত্রে এটা বড় ধাক্কা।” ইউক্রেন যদি আমেরিকার নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট নেটোতে যোগ দেওয়ার চেষ্টা থেকে সরে আসে, তবে মস্কো যুদ্ধবিরতি কার্যকর করতে পারে বলে বার্তা দিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। সম্প্রতি রাশিয়া ঘুরে এসেছেন মোদি। এই পরিস্থিতিতে মোদির সফরে রুশ-ইউক্রেন রক্তক্ষয়ী সংঘাত বন্ধ হওয়ার আশা দেখছেন কূটনীতি বিশেষজ্ঞদের একাংশ।
বিদেশ মন্ত্রকের একটি সূত্র জানাচ্ছে, সংঘাতে ইতি টানতে ভারতের তরফে প্রয়োজনীয় প্রয়াস নেওয়া হবে বলে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টকে জানিয়েছেন মোদি। গত জুন মাসে জি৭ সম্মেলনে যোগ দিতে ইটালি গিয়ে জেলেনস্কির সঙ্গে পার্শ্ববৈঠক করেছিলেন তিনি। তার আগে জাপানেও দু’জনের একান্তে আলোচনা হয়েছিল। একাধিক বার ফোনে দু’জনের কথা হয়েছে।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সময় রাশিয়া থেকে সস্তায় বিপুল পরিমাণ তেল কিনেছে ভারত। সেই সময় ইউরোপের বহু দেশ রাশিয়া থেকে তেল কেনা বন্ধ করে দিয়েছিল। তারা চেয়েছিল রাশিয়াকে আর্থিক চাপে ফেলতে। এর পিছনে যে মার্কিন ইন্ধন ছিল তা অস্বীকারের উপায় নেই। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চায়নি ভারত রাশিয়া থেকে তেল কিনুক। কিন্তু ভারত সে কথা শোনেনি। বলতে গেলে সস্তার সেই তেল মোদি সরকারকে বাঁচিয়ে দিয়েছিল। কারণ রাশিয়া থেকে সস্তায় তেল কিনলেও দেশের মানুষের জন্য তা সস্তা করা হয়নি।
মোদি সরকার ধাক্কা খেয়ে বুঝেছে ফিরতে হবে সেই কংগ্রেসের তৈরি করা বিদেশনীতিতে। নেহরু জমানা থেকে রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের যে সম্পর্ক সেই সম্পর্ক ধরে রাখা যে অত্যন্ত জরুরি তা এতদিনে বুঝেছে মোদি সরকার। ট্রাম্প জমানায় মোদি সরকার ভেবেছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বুঝি বাড়তি কিছু সুবিধা দেবে। কিন্তু ট্রাম্প জমানার শেষ দিকেই শেষ মোহ ভঙ্গ হয়। ফলে ভারত ফের পুরোনো বন্ধুর দিকে ফিরে তাকিয়েছে। অনেকে একে মোদি সরকারের দক্ষ কূটনীতির বদলে ‘মজবুরি নীতি’ বলে খোঁচা দিয়েছে। তাদের বক্তব্য রাজনৈতিক ফায়দা লাভের জন্য মোদি সরকার কূটনৈতিক সম্পর্কের গুরুত্বকে আমল দেয়নি। পরে তার খেসারত দিতে হয়েছে দেশকে।
অন্যদিকে, মোদির এই বিদেশ সফর নিয়ে সমালোচনায় মুখর হয়েছে কংগ্রেস। এক্স হ্যান্ডেলে কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ লেখেন – ‘মনিপুরবাসী জানতে চায়, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কি সে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিং – এর সঙ্গে কোনোদিন বৈঠকে বসেছেন? ৩ মে, ২০২৩ সালে মনিপুরে যে অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি তৈরী হয়েছিল তা নিয়ে তিনি কি কোনোদিন বীরেন সিং – এর সঙ্গে
কথা বলেছেন?’ তিনি আরও লেখেন – ‘আমি জানতে চাই মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিং কি মনিপুরে যাওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন? তাহলে প্রধানমন্ত্রী কবে মনিপুর যাবেন – ইউক্রেন সফরে যাওয়ার আগে নাকি ইউক্রেন সফর থেকে ঘুরে এসে?’