বিতর্কিত আইএএস ট্রেনি অফিসার পূজা খেদকারকে আইএএস ট্রেনিং অ্যাকাডেমিতে রিপোর্ট করতে বলা হয়েছিল। ২৩ জুলাইয়ের মধ্যে তাঁকে সেখানে উপস্থিত হতে হত। কিন্তু সময়সীমা পার হয়ে গেলেও ট্রেনিং অ্যাকাডেমিতে যাননি পূজা। তাঁকে আগেই অবশ্য জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল, আইএএস অফিসার হিসেবে তাঁর ট্রেনিং বাতিল করা হয়েছে।
কয়েক সপ্তাহ আগে মহারাষ্ট্রের পুণের সহকারী জেলাশাসক হিসাবে নিযুক্ত পূজার বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিজের ব্যক্তিগত ব্যবহারের গাড়িতে মহারাষ্ট্র সরকারের স্টিকার, লালবাতি ব্যবহারের অভিযোগ ওঠে। এ ছাড়া অতিরিক্ত জেলাশাসকের কক্ষ ‘দখল’ করা এবং জেলাশাসকের সহকারীর কাছে বেআইনি দাবিদাওয়া পেশ করে সেই দাবি পূরণের জন্য হুমকি দেওয়ার অভিযোগও ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে। সেখান থেকে বিতর্কের সূত্রপাত। তার পর পূজার একের পর এক ‘কীর্তি’ প্রকাশ্যে আসতে শুরু করে।
ইউপিএসসি পরীক্ষা দেওয়ার আগে এমবিবিএস পড়ার সময়ে ভুয়ো শংসাপত্র দাখিল করে নিজেকে ‘অনগ্রসর’ (ওবিসি) শ্রেণিভুক্ত বলে দেখিয়েছিলেন পূজা। ২০০৭ সালে মেডিক্যাল কলেজে পড়ার সময়ে জাতিগত সংরক্ষণের সুবিধা নিতে ওবিসি নোম্যাডিক ট্রাইব-৩ ক্যাটেগরিতে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি, যা শুধুমাত্র বানজারি সম্প্রদায়ের জন্য সংরক্ষিত থাকে। সংরক্ষণের সুবিধা পেতে ভুয়ো জাতিপরিচয়গত শংসাপত্রের পর এ বার ভুয়ো প্রতিবন্ধী শংসাপত্রের আবেদন করেন তিনি! দু’বার ইউপিএসসি পরীক্ষায় সেই ভুয়ো মেডিক্যাল সার্টিফিকেট জমাও দেন— এক বার দৃষ্টিশক্তির সমস্যার কথা উল্লেখ করে, আর এক বার মানসিক অসুস্থতার কথা উল্লেখ করে। তবে নিয়োগের আগে ২০২২ সালে এমস-এ প্রতিবন্ধকতার পরীক্ষার বন্দোবস্ত করা হলেও ছ’বার নানা অজুহাতে পূজা তা এড়িয়ে গিয়েছিলেন বলে অভিযোগ। এত গলদ সত্ত্বেও তিনি কী ভাবে চাকরি পেলেন, তা নিয়েই প্রশ্ন উঠছে।
তাঁকে নিয়ে বিতর্ক ক্রমশ বাড়তে থাকায় পূজার ট্রেনিং বাতিল করা হয় এবং খোদ ইউপিএসসি তাঁর বিরুদ্ধে মামলা রুজু করে। মুসৌরির লাল বাহাদুর শাস্ত্রী ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অফ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন তাঁকে তলব করেছিল। কিন্তু সেই তলবে সাড়া না দিয়ে পূজা নিজের জন্য যে আরও বিপদ বাড়ালেন তা বলাই যায়। এর আগে গত ১৬ জুলাই মহারাষ্ট্রের অ্যাডিশনাল চিফ সেক্রেটারি পূজাকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছিলেন যে, সরকারের সঙ্গে তাঁর ট্রেনিং বাতিল করা হয়েছে এবং আগামী ২৩ জুলাইয়ের মধ্যে তাঁকে মুসৌরিতে রিপোর্ট করতে হবে। সেই চিঠিরও কোনও উত্তর দেননি পূজা, এমনটাও সূত্রের খবর।
পরিস্থিতি এমন তৈরি হয়েছে যে, পূজার চাকরি চলে যাওয়াটা এখন সময়ের অপেক্ষা। তাঁর নিয়োগ বাতিল করতে ইতিমধ্যেই শোকজ নোটিশ জারি করেছে ইউনিয়ন পাবলিক সার্ভিস কমিশন (ইউপিএসসি)। ওই শিক্ষানবিশ আমলার বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেছে দিল্লি পুলিশও। খোঁজ চলছে পূজার।