বিরোধী দলনেতা মল্লিকার্জুন খাড়গের আরএসএস সংক্রান্ত মন্তব্যের জেরে উত্তাল হয়ে উঠল রাজ্যসভা। যার প্রেক্ষিতে মুখ খুললেন রাজ্যসভার চেয়ারম্যান তথা উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড়ও।
সোমবার রাজ্যসভার অধিবেশন শুরু থেকেই উত্তপ্ত ছিল খাড়্গের একটি মন্তব্য ঘিরে। রাজ্যসভার চেয়ারম্যান তথা উপ-রাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনকড়ের উদ্দেশে বিরোধী দলনেতা খাড়্গে বলেন, ‘আশাকরি আপনি এবার বিরোধীদের বলার সুযোগ দেবেন।’ খাড়্গের বলা শেষ হওয়ার আগেই রাজ্যসভার নেতা স্বাস্থ্যমন্ত্রী তথা বিজেপি সভাপতি জেপি নাড্ডা পয়েন্ট অব অর্ডার উত্থাপন করতে চান। খাড়্গেকে থামিয়ে নাড্ডাকে বলার সুযোগ দেন চেয়ারম্যান। নাড্ডা বিরোধী দলনেতা খাড়্গের সমালোচনা করে বলেন, ‘আপনি যে কথা বললেন, তা একজন চেয়ারম্যান সম্পর্কে বলা যায় না। চেয়ারম্যান বিরোধীদের বলতে দেন না, এটা অসত্য কথা।’
খাড়্গের কথায় উত্তেজিত ধনকড় পুরনো প্রসঙ্গ টেলে বলেন, ‘কংগ্রেস সাংসদ জয়রাম রমেশ আমাকে চিয়ার লিডার পর্যন্ত বলেছেন।’ খাড়্গের অভিযোগ অস্বীকার করে ধনকড় বলেন, ‘আগের বার আমি আপনাকে আমার চেম্বারে বৈঠকে ডেকেছিলাম। আপনি আসননি।’ জবাবে খাড়্গে হাল্কা চালে বলেন, ‘এজন্য আপনি দুঃখ পেয়ে থাকলে আমিও ক্ষমাপ্রার্থী।’
এই পর্যন্ত অম্লমধুর পরিবেশ বজায় ছিল। পরিস্থিতি বদলে যায় খাড়্গে হাত খুলে ব্যাট করা শুরুর পর। একের পর এক ইস্যুতে সরকারকে আক্রমণ শানান রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা। টেনে আনেন আরএসএস প্রসঙ্গ। কংগ্রেস সভাপতি বলেন, ‘আরএসএস ভয়ঙ্কর শক্তি। তারা দেশের যাবতীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দখল করেছে। আরএসএস বিভাজনের সংস্কৃতিতে বিশ্বাস করে।’ তারই মধ্যে খাড়গে অভিযোগ করেন, রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস) এবং এর সদস্যদের বিভিন্ন সরকারি সংস্থার শীর্ষপদে নিয়োগ করা হচ্ছে।
এই কথায় উত্তেজিত হয়ে পড়েন ধনকড়। রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতাকে থামিয়ে দিয়ে বলেন, ‘কোনও সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত থাকা কি অপরাধ? আরএসএস দেশের কল্যাণে কাজ করে। গোটা বিশ্বে এই সংগঠনের সুনাম আছে।’ ধনকড় হুঁশিয়ারির সুরে খাড়্গেকে বলেন, ‘আমি আপনার আরএসএস সংক্রান্ত বক্তব্য সভার কার্যবিবরণী থেকে বাদ দিয়ে দেব।’ তাতেও না দমে খাড়্গে রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সঙ্ঘ দেশের জন্য কীভাবে, কতটা ক্ষতিকর তা নিয়ে সরব থাকেন। সভায় তুমুল হট্টগোল শুরু হয়ে যায়।সরকারপক্ষ খাড়গের বক্তৃতায় বারবার বাধা দেয়।
আরএসএস প্রসঙ্গ থেকে খাড়্গে চলে যান প্রধানমন্ত্রীকে আক্রমণে। লোকসভা নির্বাচনের প্রচারের সময় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বক্তৃতাকেও মঙ্গলবার খাড়গে তাঁর বক্তব্যের নিশানা করেন। তিনি অভিযোগ করেন, প্রধানমন্ত্রী ‘ভুল তথ্য ছড়িয়ে’ সমাজে ‘বিভাজন’ তৈরির চেষ্টা করেছেন। খাড়গে রাজ্যসভায় বলেন, ‘এবছর রাষ্ট্রপতির প্রথম ভাষণ ছিল জানুয়ারিতে। দ্বিতীয়টি জুনে। প্রথম ভাষণটি ছিল নির্বাচনের জন্য। আর, দ্বিতীয়টিও ছিল ঠিক একইরকম। দুটো ভাষণের মধ্যে কোনও ফারাক ছিল না। শুধু তাই নয়, রাষ্ট্রপতির ভাষণে সমস্যা সমাধানের কোনও দিকনির্দেশও ছিল না।’ এর পাশাপাশি, রাষ্ট্রপতির ভাষণকে একহাত নিয়ে রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা বলেন, ‘আমরা আত্মবিশ্বাসী ছিলাম যে রাষ্ট্রপতি সংবিধান এবং গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে ওঠা চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে কিছু বলবেন। তিনি তাঁর ভাষণে দলিত, সংখ্যালঘু এবং অনগ্রসর শ্রেণির জন্য কিছু বলবেন। কিন্তু, তাঁর ভাষণে সেসব কিছুই ছিল না। আগের মতো, তাঁর নতুন ভাষণটিও ছিল সরকারের প্রশংসাসূচক শব্দে ভরা।’
বিরোধী দলনেতা মণিপুরের সংঘাত ইস্যুতেও প্রধানমন্ত্রীকে একহাত নেন। তিনি অভিযোগ করেন, প্রধানমন্ত্রী কাজের কাজ কিছু করে দেখাতে পারেন না। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, ‘শুধু স্লোগান দিতেই পারেন। মোদী সরকার তার ব্যর্থতা লুকিয়ে রাখতে পারদর্শী। রাষ্ট্রপতি জোর দিয়ে জানিয়েছিলেন যে আমরা ভারতের ভবিষ্যতের জন্য একসঙ্গে কাজ করব। কিন্তু আমাদের ১০ বছরের অভিজ্ঞতা হল যে এই সমস্ত ঘোষণা বাস্তবে কেবল বক্তৃতাতেই থেকে গেছে।’
কবিতার লাইন ধার করে খাড়্গে প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে বলেন, ‘এত অহঙ্কার ভাল নয়। নিয়তি বদলায়। আয়না স্থির থাকে। অবয়ব বদলে যায়।’ কংগ্রেস সভাপতি বলেন, লোকসভা ভোটের ফলে স্পষ্ট, বিজেপি কী চেয়েছিল আর মানুষ কী চায়। খাড়্গের কথায়, ‘মানুষ সংবিধান রক্ষার পক্ষে রায় দিয়েছে।’