টাটা, ভারতের অন্যতম সফল এবং প্রতিভাবান শিল্পপতি, দেশের ব্যবসায়িক দুনিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ নাম। তিনি টাটা গ্রুপের সাবেক চেয়ারম্যান হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং গ্রুপটিকে শুধু ভারতের নয়, বিশ্বব্যাপী এক শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর করেছেন। তার নেতৃত্বে টাটা গ্রুপ অসংখ্য বহুজাতিক সংস্থার মালিক হয়েছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো টাটা মোটরস, টাটা স্টিল, টাটা কনসালট্যান্সি সার্ভিসেস এবং আরও অনেক।
শৈশব ও শিক্ষা
রতন টাটা ১৯৩৭ সালের ২৮ ডিসেম্বর মুম্বাইয়ের এক প্রভাবশালী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতামাতা ছিলেন নাভাল টাটা এবং সুনা টাটা। তিনি প্রথমে মুম্বাইয়ের ক্যাম্পিয়ন স্কুল এবং পরে যুক্তরাষ্ট্রের কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থাপত্য এবং স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক সম্পন্ন করেন। এরপর তিনি হার্ভার্ড বিজনেস স্কুল থেকে অ্যাডভান্সড ম্যানেজমেন্ট প্রোগ্রামও করেন, যা তার ভবিষ্যত ব্যবসায়িক জীবনে অত্যন্ত সহায়ক ছিল।
টাটা গ্রুপে যাত্রা শুরু
রতন টাটার টাটা গ্রুপে প্রথম কর্মজীবন শুরু হয়েছিল ১৯৬১ সালে। তার ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গি এবং উদ্ভাবনী চিন্তাধারার ফলে তিনি শীঘ্রই সংস্থায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে শুরু করেন। ১৯৯১ সালে, তিনি টাটা গ্রুপের চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন এবং ধীরে ধীরে বিভিন্ন ক্ষেত্রে টাটাকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যান। তার নেতৃত্বে টাটা মোটরস বিশ্বের প্রথম সাশ্রয়ী মডেল ‘টাটা ন্যানো’ চালু করে এবং টাটা স্টিলের ব্রিটিশ কোম্পানি কোরাসকে অধিগ্রহণ করে।
সমাজসেবা ও মানবিক উদ্যোগ
রতন টাটা শুধু একজন ব্যবসায়িক নেতা নন, তিনি একজন সমাজসেবীও। তিনি বরাবরই সামাজিক দায়িত্ব পালনকে গুরুত্ব দিয়েছেন। তার নেতৃত্বে টাটা ট্রাস্ট এবং টাটা ফাউন্ডেশন সমাজের দরিদ্র এবং পিছিয়ে পড়া মানুষের জন্য শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রেখেছে।
রতন টাটার অনুপ্রেরণা
রতন টাটার জীবন আমাদের শিখিয়েছে কীভাবে কঠোর পরিশ্রম, নিষ্ঠা এবং সততার মাধ্যমে বড় সাফল্য অর্জন করা যায়। তিনি একজন অত্যন্ত সাদামাটা জীবনযাপনকারী ব্যক্তি এবং তার শৌর্য-বীর্য পৃথিবীজুড়ে অগণিত মানুষকে অনুপ্রাণিত করেছে।
রতন টাটার অবদান শুধু ভারত নয়, সারা বিশ্বের ব্যবসায়িক দুনিয়ার জন্য এক অনন্য উদাহরণ। তিনি প্রমাণ করেছেন যে, একটি কোম্পানির সফলতা শুধু আর্থিক লভ্যাংশেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং সামাজিক উন্নয়ন এবং মানবতার প্রতি দায়বদ্ধতার মধ্যেও নিহিত।