আর জি কাণ্ড নিয়ে বৃহস্পতিবার ফের রাজ্য ও কলকাতা পুলিশকে তুলোধনা করল সুপ্রিম কোর্ট। কলকাতা পুলিশের যে অফিসার ধর্ষণ-খুনের কেস রুজু করেছেন তাঁকে পরবর্তী শুনানির দিন আদালতে হাজির হয়ে সময়সারণী জানানোর নির্দেশ দিয়েছে শীর্ষ আদালত।
গত সোমবারের শুনানিতে আরজি কর হাসপাতালে মহিলা চিকিৎসককে খুন ও ধর্ষণের ঘটনায় সিবিআইয়ের কাছে তদন্তের অগ্রগতি সংক্রান্ত স্টেটাস রিপোর্ট চেয়েছিল শীর্ষ আদালত। ওই ঘটনায় তদন্ত কোন পর্যায়ে রয়েছে, কতটা এগিয়েছে তা জানতে চেয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। গত সোমবারের শুনানিতে আরজি কর হাসপাতাল ভাঙচুরের ঘটনায় কী পদক্ষেপ করা হয়েছে, তা নিয়েও বৃহস্পতিবার রাজ্যকে রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট। বৃহস্পতিবার সকাল ১১টার কিছু পরে শুরু হয় শুনানি। সেখানেই রাজ্যের দেওয়া টাইমলাইন নিয়ে বারবার প্রশ্ন তোলে সুপ্রিম কোর্ট।
সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা বলেন, “প্রথমে পরিবারকে বলা হয় আত্মহত্যা। পরে বলা হয় মৃত্যু। তখন সন্দেহ তৈরি হতে তার পর থেকে ভিডিয়োগ্রাফি করা হয়।” সবচেয়ে অবাক করেছে, চিকিৎসকের দেহ সৎকারের পরে রাত ১১টা ৪৫ মিনিটে এফআইআর করা হয়েছে।” রাজ্য আদালতে জানায়, কী কী হয়েছে, প্রতি মিনিটের টাইমলাইন তাদের কাছে রয়েছে। তার পরেই প্রধান বিচারপতি ময়নাতদন্তের রিপোর্ট দেখতে চান।
প্রধান বিচারপতি বলেন, “একটা জিনিস নিয়ে খটকা লাগছে। সকাল ১০টা ১০ মিনিট নাগাদ টালা থানা অভিযোগ দায়ের করল। রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ ঘটনাস্থল সিল করল পুলিশ? এত ক্ষণ সেখানে কী হয়েছিল?” বিচারপতি পারদিওয়ালা জানতে চান, কখন ময়নাতদন্ত হল? রাজ্য জানায়, সন্ধ্যা ৬টা ১০ থেকে ৭টা ১০-এর মধ্যে। বিচারপতি পার্দিওয়ালা রাজ্যের কাছে জানতে চান, অস্বাভাবিক মৃত্যু কখন দায়ের করা হয়? রাজ্য জানায়, দুপুর ১টা ৪৫ মিনিটে অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা দায়ের হয়েছিল। বিচারপতি পারদিওয়ালা বলেন, “এটা কি অস্বাভাবিক মৃত্যু? যদি হয়, তবে ময়নাতদন্তের কী প্রয়োজন ছিল? এখানে দেখতে পাচ্ছি রাত সাড়ে ১১টায় জেনারেল ডায়েরি হয়। তার ১৫ মিনিটের মাথায় এফআইআর হল? আদালতের কাছে সঠিক ভাবে বক্তব্য রাখুন।” বিচারপতি পারদিওয়ালা আরও বলেন, “অবাক হচ্ছি, ময়নাতদন্তের আগেই বলে দেওয়া হল অস্বাভাবিক মৃত্যু?”
বিচারপতি পার্দিওয়ালা বলেন, “পুলিশের অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপারিন্টেন্ডেন্ট কে? তদন্তে তাঁর ভূমিকা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। এমন ভাবে তদন্ত হল?” গোটা ঘটনায় বিস্মিত বিচারপতি বললেন, “ময়নাতদন্তের পর অস্বাভাবিক মৃত্যুর অভিযোগ দায়ের। ৩০ বছরের কেরিয়ারে দেখিনি।” সলিসিটর জেনারেল বলেন, “রাজ্য বলছে মৃতার বাবা এফআইআর দায়ের করার অনুমতি দেননি।”
এদিন সর্বোচ্চ আদালতে স্ট্যাটাস রিপোর্ট জমা দেওয়া সিবিআইয়ের আইনজীবী তুষার মেহতা বলেন, নির্যাতিতার দেহ শেষকৃত্যের পরে এফআইআর হয়েছে। এতেই বোঝা যায় গোটা ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে। সিবিআইয়ের আরও বক্তব্য ছিল, আমরা ঘটনার পাঁচদিন পর তদন্তভার হাতে পেয়েছি। এর মধ্যে সবকিছু বদলে ফেলা হয়েছে।
এদিন ফের কর্মবিরতি ছেড়ে চিকিৎসকদের কাজে ফিরতে বললেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড়।