‘ঔপনেবেশিক শাসনের’ প্রতীক মুছে ফেলতে এবার দেশদ্রোহ আইন (Sedition Law) লুপ্ত করতে চলেছে ভারত সরকার। শুক্রবার সংসদে এমনই ঘোষণা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের। পরিবর্তে ‘ভারতীয় ন্যায় সংহিতা অ্যাক্ট’ পাশ করাতে চায় সরকার।
শাহ জানিয়েছেন, ১৮৬০ সালের ‘ইন্ডিয়ান পেনাল কোড’, ‘ক্রিমিনাল প্রসিডিওর কোড’ এবং ‘ইন্ডিয়ান এভিডেন্স অ্যাক্ট’ বদলে হতে চলেছে ভারতীয় ন্যায়সংহিতা, ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা এবং ভারতীয় সাক্ষ্য। তিনটি বিলই স্ট্যান্ডিং কমিটির বিবেচনার জন্য পাঠানো হয়েছে। শাহ জানিয়েছেন, রাষ্ট্রদ্রোহ আইন সম্পূর্ণ ভাবে বাতিল করা হচ্ছে। প্রস্তাবিত আইনে ‘রাষ্ট্রদ্রোহ’ কথাটি নেই। এটি ভারতের সার্বভৌমত্ব, একতা এবং অখণ্ডতাকে বিপন্ন করার জন্য ১৫০ নম্বর ধারা দ্বারা প্রতিস্থাপিত করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। বর্তমানে, রাষ্ট্রদ্রোহ আইনে সাজা হিসাবে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। কিছু ক্ষেত্রে তিন বছরের জেলের সাজাও দেওয়া হয়। নয়া প্রস্তাবে তিন বছর জেলের সাজা হতে পারে।
গণপিটুনির ঘটনার ক্ষেত্রে তাকে হত্যার পরিভাষার সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়েছে। যেখানে জাতি, ধর্ম, লিঙ্গ, জন্মস্থান, ভাষা, ব্যক্তিগত বিশ্বাস বা অন্য কোনও কারণে হত্যার ঘটনার ক্ষেত্রে অভিযুক্ত প্রত্যেকের মৃত্যুদণ্ড বা কারাবাসের সাজার সংস্থান রয়েছে। এ ক্ষেত্রে ন্যূনতম সাজার সংস্থান রাখা হয়েছে সাত বছর। সর্বোচ্চ ক্ষেত্রে মৃত্যুদণ্ড। এ ছাড়াও জরিমানাও করা হবে।
আরও পড়ুন: Uttar Pradesh: যোগী রাজ্যে চোর সন্দেহে জোর করে মূত্রপান দুই নাবালককে, মলদ্বারে ঘষা হল লঙ্কা
নয়া প্রস্তাবে ঘৃণা বা উস্কানিমূলক ভাষণকেও অপরাধের শ্রেণিভুক্ত করা হয়েছে। যদি কোনও ব্যক্তি ঘৃণা ভাষণ বা উস্কানিমূলক ভাষণ দেন, তা হলে তাঁর তিন বছরের জেলের সাজা প্রাপ্য। সঙ্গে রয়েছে জরিমানা। এ ছাড়া যদি কোনও ধর্মীয় সমাবেশে কোনও অংশ বা শ্রেণির মানুষের বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক ভাষণ দেন, তাহলে পাঁচ বছরের সাজার সংস্থান রাখা হচ্ছে।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের তথ্য় অনুযায়ী, ২০১৪ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত আইপিসি-এর ১২৪এ ধারায় দেশদ্রোহের ৩৯৯টি অভিযোগ রুজু হয়েছিল। এতেই শেষ নয়। ২০১৪ সালে যেখানে দেশদ্রোহের ৪৭টি মামলা রুজু হয়েছিল, সেখানে ২০২০ সালে ওই সংখ্যা গিয়ে দাঁড়িয়েছিল ৭৩-এ। তবে আইনজ্ঞদের মতে, আপাতভাবে দেশদ্রোহের মামলা রুজু হওয়ার হার বেড়ে গেলেও ওই মেয়াদে অপরাধ প্রমাণের হার তার সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ নয়। তথ্য বলছে, এই মেয়াদের মধ্যে দেশদ্রোহের মামলার মোটে ৮টিতে অপরাধ প্রমাণ হয়েছে। গত বছর দেশের শীর্ষ আদালত, এই সংক্রান্ত সমস্ত মামলার শুনানি সাসপেন্ড করে। সঙ্গে কেন্দ্রকে নির্দেশ দেয়, দেশদ্রোহ আইনটিকে পুনরায় খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে। অনেকের মতে, এই নির্দেশের মধ্যে কোথাও একটা দেশে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং মতপ্রকাশ ও মতবিরোধের স্বাধীনতার মতো দুটি দিকের ভারসাম্য বজায় রাখার বার্তা ছিল। সেই পথেই কি নতুন বিল পাশ করাতে চায় কেন্দ্রীয় সরকার? প্রশ্ন নানা মহলে।
আরও পড়ুন: Ayushman Bharat: ৭.৫ লাখ সুবিধাভোগীর ফোন নম্বর – ‘৯৯৯৯৯৯৯৯৯৯’! ‘আয়ুষ্মান ভারতে’ বিরাট গরমিল