কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা স্টার্ট-আপ সংস্থা মাইন্ডফুল এআই ল্যাবের সিইও সূচনা শেঠকে সোমবার কর্নাটকের চিত্রদুর্গ থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। জানা গেছে, গোয়ার ক্যান্ডোলিমের একটি অ্যাপার্টমেন্টে নিজেরই ছেলেকে খুন করার অভিযোগ উঠেছে সূচনার বিরুদ্ধে। পুলিশ শনিবার উত্তর গোয়ার ক্যান্ডোলিমের একটি বিলাসবহুল রিসর্টে ছেলেকে নিয়ে চেক-ইন করেন সূচনা। সোমবার তিনি একা রুম থেকে চেক আউট করেন এবং হোটেল কর্মীদের বেঙ্গালুরু যাওয়ার জন্য একটি ট্যাক্সি বুক করতে বলেন। ফ্লাইটে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া সত্ত্বেও তিনি ট্যাক্সি নেওয়ার জন্য জোর দিয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন রিসর্টের কর্মীরা।
রিসর্টের কর্মীরা খেয়াল করেন, মহিলার সঙ্গে তাঁর ছেলে নেই। এরপর যখন তাঁর ঘরে যান তাঁরা, তখন সেখানে রক্তের ছাপ পাওয়া যায়। সন্দেহ হতেই তারা গোয়া পুলিশকে বিষয়টি জানায়। পুলিশের তরফে ট্যাক্সি ড্রাইভারের মারফত যোগাযোগ করা হয় সূচনা শেঠের সঙ্গে। তখনও গাড়িতেই ছিলেন সূচনা। তাঁকে ছেলের ব্যাপারে প্রশ্ন করতেই মহিলা জানান, তাঁর ছেলে এক বন্ধুর সঙ্গে তার বাড়িতে রয়েছে। এরপর পুলিশকে তিনি একটি ঠিকানা দেন। কিন্তু খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, সেটি একটি ভুল ঠিকানা।
এরপর পুনরায় পুলিশ ওই ট্যাক্সিচালককে ফোন করে এবং তাঁর ফোনের লোকেশন টাওয়ার ধরে জায়গা ট্র্যাক করে। বিষয়টি বুঝতে পারেননি সূচনা। গোয়া পুলিশ ওই ট্যাক্সিচালককে নিকটবর্তী থানায় গাড়ি নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল। সেই মতো ওই চালক বেঙ্গালুরু থেকে ২০০ কিমি দূরে চিত্রদূর্গ থানায় গাড়ি নিয়ে যায়। ততক্ষণে চিত্রদূর্গ থানার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে গোয়া পুলিশ। সেই খবরের ভিত্তিতে কর্নাটক পুলিশ সূচনাকে গ্রেফতার করে। সূচনার ব্যাগে তল্লাশি চালাতে তাঁর ছেলের দেহও উদ্ধার হয়। যা দেখে হতবাক হয়ে যায় পুলিশ।
সূচনা হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেলো। ডেটা গবেষক হিসাবে তাঁর ১২ বছরের অভিজ্ঞতা রয়েছে। আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্সি (AI)-তে ১০০ জন বুদ্ধিমতী মহিলার মধ্যে একজন ছিলেন। বর্তমানে বেঙ্গালুরুর এক AI ল্যাবের সিইও। তাঁর স্বামী বেঙ্কট রমনও এআই ডেভলপার।
জানা গিয়েছে,২০১০ সালে বিয়ে করেন সূচনা। তবে বনিবনা না হওয়ায় ২০২০ সালে ডিভোর্সের সিদ্ধান্ত নেন যুগলে। তবে একরত্তি ছেলে কার কাছে থাকবে, তা নিয়ে শুরু হয়েছিল মামলা। শেষমেশ আদালত জানায়, ছেলে মায়ের কাছেই থাকবে। তবে সপ্তাহান্তে একবার তার সঙ্গে দেখা করতে পারবেন বাবা।
রবিবার ছিল সেই দেখা করার দিন। কিন্তু কিছুতেই বাবার সঙ্গে ছেলেকে দেখা করতে দেবেন না, সূচনা সেটা ঠিক করেই নিয়েছিলেন। শুধুমাত্র প্রাক্তন স্বামীর সঙ্গে দেখা করতে দেবেন না বলে মা হয়ে ৪ বছরের শিশুকে মেরে ফেলতে হাত কাঁপেনি সূচনার, এখনও পর্যন্ত এমনটাই জানাচ্ছে পুলিশ। তাকে আপাতত গোয়ায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সেখানেই তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন তদন্তকারীরা। তাঁর স্বামীকে খবর পাঠিয়েছে পুলিশ। তিনি এসে পৌঁছলে শিশুটির মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হবে।