রাষ্ট্র বিরোধিতার অভিযোগে, তথা জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্নে মালয়ালম নিউজ চ্যানেল মিডিয়াওয়ানের (MediaOne) উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল কেন্দ্র। বুধবার সেই নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্তকে বাতিল করল সুপ্রিম কোর্ট (Supreme Court)। কথায় কথায় জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্ন তোলা যাবে না, সাফ জানাল শীর্ষ আদালত। উল্লেখ্য, দিল্লি হিংসার একপেশে খবর সম্প্রচারের অভিযোগ উঠেছিল এই চ্যানেলের বিরুদ্ধে। এরপরেই কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকের রোষের মুখে পড়ে চ্যানেলটি। যদিও আদালতের পর্যবেক্ষণ, সংবাদমাধ্যম সরকারের নীতি ও কর্মের সমালোচনা করলে তাকে দেশবিরোধী তকমা দেওয়া যাবে না। স্বচ্ছ গণতন্ত্রে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা অপরিহার্য।
জাতীয় নিরাপত্তার পরিপন্থী, এই অভিযোগ তুলে মালয়ালম ভাষার টিভি চ্যানেল মিডিয়াওয়ানের সম্প্রচার বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছিল কেন্দ্রের তথ্য এবং সম্প্রচার মন্ত্রক। এই নির্দেশ বহাল রেখেছিল কেরল হাই কোর্টও। বুধবার সুপ্রিম কোর্ট সেই নির্দেশ খারিজ করে দিয়ে জানাল, পুনরায় সম্প্রচার চালু করতে কোনও অসুবিধা নেই ওই চ্যানেলের। বুধবার এই মামলার শুনানিতে দেশের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় বলেন, ‘জনগণের অধিকারকে অস্বীকার করে জাতীয় নিরাপত্তার প্রসঙ্গ তোলা ঠিক নয়।’ সংবাদমাধ্যমের বিরুদ্ধে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের ব্যবস্থা নেওয়ার পদ্ধতিরও তীব্র সমালোচনা করেন বিচারপতি চন্দ্রচূড়।
আরও পড়ুন: Rahul Gandhi: জেলযাত্রার রায়কে চ্যালেঞ্জ, সোমবার আদালতে যেতে পারেন রাহুল
কেরল হাই কোর্ট টিভি চ্যানেলটির সম্প্রচার বন্ধ করার নির্দেশ বহাল রাখার পরই দেশের শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন চ্যানেল কর্তৃপক্ষ। চ্যানেলটির সম্পাদক প্রমোদ রামন এবং কেরলের একটি সাংবাদিক সংগঠনও আলাদা করে মামলা দায়ের করেছিল। জাতীয় নিরাপত্তার কথা বলেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক চ্যানেলটির লাইসেন্স পুনর্নবীকরণে অনুমতি দেয়নি। কেরল হাই কোর্ট কী ভাবে কেবল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফে আদালতে জমা দেওয়া মুখবন্ধ খামে থাকা তথ্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিল, তা নিয়েও সোমবার প্রশ্ন তোলে সুপ্রিম কোর্ট।
উল্লেখ্য, মিডিয়াওয়ান সেই টিভি চ্যানেলগুলির একটি, যারা ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে দিল্লি এবং দেশের অন্যান্য অংশে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন বিরোধী বিক্ষোভের সংবাদ পরিবেশন করেছিল ব্যাপক হারে। বিচারপতিদের বক্তব্য, নিষেধাজ্ঞা আরোপের সিদ্ধান্তের স্বপক্ষে ন্যায্য বস্তুগত তথ্য বা প্রমাণ দিতে পারেনি কেন্দ্র। বলা হয়, “জঙ্গিযোগের হদিশ মেলেনি। হাওয়ায় ভাসিয়ে জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্ন তোলা যাবে না। এমন কিছুই মেলেনি যা জাতীয় নিরাপত্তা বিরোধী বা আইনশৃঙ্খলায় বিঘ্ন ঘটাতে পারে। ”
প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বে বেঞ্চের সাফ কথা, সরকারকে এমন অবস্থানের অনুমতি দেওয়া যাবে না, যে সংবাদমাধ্যমগুলিকে সরকারকে সমর্থন করতেই হবে। সরকারের সমালোচনা কোনও টিভি চ্যানেলের লাইসেন্স বাতিলের কারণ হতে পারে না।