যৌন নিগ্রহের মামলায় কলকাতা হাই কোর্টের পর্যবেক্ষণ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করল সুপ্রিম কোর্ট। কিশোর-কিশোরীদের যৌন চাহিদা নিয়ে উচ্চ আদালত যে মন্তব্য করেছে, তা ‘আপত্তিকর’ এবং সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২১-এ বর্ণিত কিশোর-কিশোরীদের অধিকারের ‘পরিপন্থী’ বলেই জানিয়ে দিল শীর্ষ আদালত। ডিভিশন বেঞ্চের স্পষ্ট বক্তব্য, ব্যক্তিগত মতামত বা দর্শনের উপর ভিত্তি করে কখনওই কিছু বলা উচিত নয় বিচারপতিদের।
প্রসঙ্গত, এক কিশোরীর সঙ্গে ‘সম্পর্ক’ ছিল এক যুবকের। সম্পর্কে থাকাকালীন ওই কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে যুবকের বিরুদ্ধে। গত ১৮ অক্টোবরে পকসো আইনে ২০ বছরের সাজাপ্রাপ্ত ওই যুবককে বেকসুর খালাস করে কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি চিত্তরঞ্জন দাস এবং বিচারপতি পার্থসারথি সেনের বেঞ্চ পর্যবেক্ষণে জানিয়েছে, কিশোরীদের নিজের শরীরে অধিকার, সম্মান এবং নিজের মূল্য রক্ষা করতে হবে। যৌন উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, কারণ দু’মিনিটের সুখের জন্য সেই নিয়ন্ত্রণ হারালে সে-ই সমাজের চোখে ‘ব্যর্থ’ হবে। নিজের গোপনীয়তা এবং শরীরের অধিকার নিজেকেই রক্ষা করতে হবে। কিশোরদেরও কিছু পরামর্শ দেয় আদালত। জানিয়েছে, কিশোরী এবং মহিলাদের যে কর্তব্যের কথা হাই কোর্ট জানিয়েছে, তাকে সম্মান করতে হবে। এক জন মহিলা, তাঁর আত্মসম্মান, তাঁর মর্যাদা, ব্যক্তিগত গোপনীয়তা, শারীরিক অধিকারকে সম্মান করতে হবে কিশোরদের। উচ্চ আদালতের এই পর্যবেক্ষণেই আপত্তি জানিয়েছে শীর্ষ আদালত। স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলা দায়ের হয়েছিল সুপ্রিম কোর্টে। শুক্রবার বিচারপতি অভয় এস ওকা এবং পঙ্কজ মিত্তলের বেঞ্চে সংশ্লিষ্ট মামলাটির শুনানি হয়েছে।
দেশের শীর্ষ আদালত সাফ জানিয়েছে, এই ধরনের মন্তব্য সংবিধানের ২১ ধারার পরিপন্থী। আদালতের বিচারব্যবস্থার ক্ষেত্রে এই ধরনের ব্যক্তিগত মনোভাবকে ব্যক্ত করা যায় না। ডিভিশন বেঞ্চের মতে, বিচারপতিরা যেন তাঁদের ব্যক্তিগত মনোভাব ব্যক্ত না করেন। মামলা শোনার পর ন্যায্য রায়ই দেওয়া উচিত বিচারপতিদের। পশ্চিমবঙ্গ সরকারকেও এ নিয়ে নোটিস জারি করা হয়েছে।
এর আগে ইলাহাবাদ হাই কোর্টের একটি রায়েও স্থগিতাদেশ জারি করেছিল শীর্ষ আদালত। ইলাহাবাদ হাই কোর্টের একটি মামলায় ধর্ষিতা মাঙ্গলিক কি না, তা জানতে জ্যোতিষীদের কাছে রিপোর্ট চেয়েছিল কোর্ট। আদালতের এই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন নির্যাতিতা। এর পরেই স্থগিতাদেশ জারি করে সুপ্রিম কোর্ট।