মাদ্রাসাগুলোর আর্থিক অনুদান বন্ধ করে দেওয়া হোক। সম্প্রতি কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারগুলোর কাছে এমনই প্রস্তাব রেখেছিল জাতীয় শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশন (ন্যাশনাল কমিশন ফর প্রোটেকশন অফ চাইল্ড রাইটস বা এনসিপিসিআর)। যা নিয়ে মামলা গড়ায় সুপ্রিম কোর্টে। আজ এই মামলায় স্থগিতাদেশ জারি করেছে শীর্ষ আদালত।
সম্প্রতি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত একটি রিপোর্ট তৈরি করেছে জাতীয় শিশু অধিকার রক্ষা কমিশন। তাতে মাদ্রাসার ‘ঐতিহাসিক ভূমিকা’ এবং শিশুদের শিক্ষার অধিকারে তার প্রভাব নিয়ে তথ্য দেওয়া হয়েছে। প্রায় ১১ অধ্যায়ের ওই রিপোর্টে কমিশনের মূল পরামর্শ ছিল, বিভিন্ন রাজ্যে মাদ্রাসাগুলিতে আর্থিক সহায়তা দেওয়া বন্ধ করা হোক এবং সেগুলিকে বন্ধ করে দেওয়া হোক। কমিশনের চেয়ারম্যান প্রিয়াঙ্ক কানুনগো শিশু শিক্ষার গুরুত্ব নিয়ে মন্তব্য করেছিলেন, ‘‘শিক্ষার অধিকার আইনের (আরটিই, ২০০৯) লক্ষ্য হল সমতা, সামাজিক ন্যায় এবং গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা। কিন্তু তার পরেও একটি বিপরীতধর্মী চিত্র দেখা যাচ্ছে। সেখানে শিশুদের মৌলিক অধিকার এবং সংখ্যালঘুদের অধিকারের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা যাচ্ছে।’’
জাতীয় শিশু অধিকার রক্ষা কমিশনের রিপোর্টে বলা হয়েছিল, শুধুমাত্র বোর্ড এবং একটি ইউডিআইএসই কোড থাকা মানেই মাদ্রাসাগুলি যে শিক্ষার অধিকার সংক্রান্ত আইন মানছে, এমনটা নয়। বেশ কিছু ঘটনার উদ্ধৃতি এবং উদাহরণ দিয়ে রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিকে বলা হয়েছে মাদ্রাসাগুলিকে যেন সাহায্য না করা হয়। পাশাপাশি, মুসলমান সম্প্রদায়ের শিশুকে মাদ্রাসায় ভর্তি না করিয়ে অন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়ানোর পরামর্শ দিয়েছিল জাতীয় কমিশন। সেই সুপারিশের প্রেক্ষিতেই উত্তরপ্রদেশ এবং ত্রিপুরা সরকার সম্প্রতি নির্দেশ দিয়েছিল, অনুমোদনহীন এবং সরকার অনুমোদিত মাদ্রাসাগুলি থেকে পড়ুয়াদের সরকারি স্কুলে ভর্তি করানোর জন্য।
মাদ্রাসা নিয়ে উত্তরপ্রদেশের জারি করা নির্দেশিকাকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয় জামিয়াত উলেমা-ই-হিন্দ নামে একটি সংগঠন। তাদের অভিযোগ ছিল, সরকারের এই নির্দেশিকার ফলে সংখ্যালঘুদের নিজস্ব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালানো ও সেখানে শিক্ষার অধিকার খর্ব হচ্ছে। সোমবার এই মামলা ওঠে প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি জেবি পারদিওয়ালা এবং বিচারপতি মনোজ মিশ্রের বেঞ্চে। শুনানিতে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন দুই সদস্যের বেঞ্চ জানিয়ে দেয়, জাতীয় শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশনের প্রস্তাবের উপর স্থগিতাদেশ জারি করা হল। কমিশনের দেওয়া পরামর্শের ভিত্তিতে কেন্দ্র বা রাজ্য সরকারগুলো কোনও পদক্ষেপ করতে পারবে না। একই সঙ্গে কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারগুলোর থেকে চার সপ্তাহের মধ্যে জবাব তলব করেছে আদালত।
উভয় রাজ্যের নির্দেশিকার উপরেও স্থগিতাদেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন তিন বিচারপতির বেঞ্চ।