আর জি করের ঘটনা নিয়ে তোলপাড় সারা দেশ। ন্যায় বিচারের দাবিতে চলছে আন্দোলন। এরইমধ্যে আইআইটি বেনারস হিন্দু ইউনিভার্সিটি (বিএইচইউ) ক্যাম্পাসে এক ছাত্রীকে গণধর্ষণ মামলায় তিন অভিযুক্তর মধ্যে দু’জন জামিন পেয়ে গিয়েছে। অভিযুক্তরা প্রত্যেকেই বিজেপির আইটি সেলের সদস্য। জেলের বাইরে বেরোনোর পর এই দুই গুণধরকে ফুল-মালা দিয়ে রীতিমতো বরণও করা হয়েছে। এই ঘটনায় শোরগোল পড়ে গিয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, এমন একটা গুরুতর অপরাধে অভিযুক্তরা মাত্র সাত মাসেই জামিন পেয়ে গেল কী করে? বিরোধীদের দাবি, এই ঘটনায় নারী সুরক্ষা নিয়ে বিজেপির ভণ্ডামিই বেআব্রু হয়ে গেল। সেইসঙ্গে তাদের অভিযোগ, অভিযুক্তদের সঙ্গে গেরুয়া দলের তাবড় নেতাদের ছবি রয়েছে। এমন অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে পুলিস দুর্বল মামলা সাজানোর জন্যই তারা ছাড়া পেয়ে গেল। কংগ্রেসের কটাক্ষ, ‘মোদি হ্যায় তো মুমকিন হ্যায়’।
এই ঘটনাকে সামনে রেখে নারীদের নিরাপত্তা ও সম্মানের প্রশ্নে নরেন্দ্র মোদী, যোগী আদিত্যনাথ তথা বিজেপির দ্বিচারিতা নিয়ে ফের প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধীরা। তাঁদের অভিযোগ, পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি আর জি করের ঘটনাকে সামনে রেখে ফায়দা তুলে চাইছে। কিন্তু উত্তরপ্রদেশে খোদ প্রধানমন্ত্রীর লোকসভা কেন্দ্রেই যোগী সরকারের নরম মনোভাবের ফলে ধর্ষণে অভিযুক্তরা জামিন পেয়ে যাচ্ছে।
জেল থেকে বের হতে প্রায় দু’মাস লাগলেও এর মধ্যে যোগী সরকার জামিন খারিজের জন্য কোনও আইনি চেষ্টা করেনি। জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পরে দু’জনের পরিবারের সঙ্গে বিজেপির স্থানীয় কর্মীরাও আনন্দ-অভ্যর্থনায় মেতেছিলেন বলে বারাণসীর কংগ্রেস নেতা অজয় রাইয়ের অভিযোগ। তাঁর দাবি, ‘‘অন্য ক্ষেত্রে যোগী সরকার অভিযুক্তদের বাড়িতে বুলডোজার চালায়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে বিজেপি ধর্ষকদের ফুল-মালা দিয়ে স্বাগত জানিয়েছে।’
সমাজবাদী পার্টি নেতা অখিলেশ যাদব উত্তরপ্রদেশের যোগী সরকারের উপর দায় চাপিয়েছেন। তিনি বলেছেন, বিজেপির রাজনীতি ও নৈরাজ্যে মানুষ বীতশ্রদ্ধ। কংগ্রেস এই ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী মোদিকে নিশানা করেছে। তারা বলেছে, এই ঘটনায় মহিলাদের নিরাপত্তা নিয়ে মোদি সরকার ও বিজেপির দ্বিচারিতা সামনে চলে এল।
গত বছর বারাণসীর আইআইটি-বিএইচইউ-এর এক বি-টেক ছাত্রী গণধর্ষিতা হন। তিন অভিযুক্ত— কুণাল পাণ্ডে, অভিষেক চৌহান ও সক্ষম পটেল বিজেপির আইটি সেলের পদাধিকারী। ঘটনার পরে তিন জনকেই মধ্যপ্রদেশে বিজেপির হয়ে ভোটের প্রচারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। পরে তাদের গ্রেফতার করা হয়। সে সময় নরেন্দ্র মোদী, যোগী আদিত্যনাথ, জে পি নড্ডা-সহ বিজেপির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে ওই তিন জনের ছবি প্রকাশ্যে এসেছিল। গত ২ জুলাই ইলাহাবাদ হাই কোর্ট থেকে প্রথমে অভিষেক, তার পরে কুণাল জামিন পায়। সরকারি আইনজীবী পাঁচটি ক্ষেত্রে কোনও তথ্যপ্রমাণ দিতে না পারায় হাই কোর্ট জামিন মঞ্জুর করে। ২৯ অগস্ট তারা জেল থেকে ছাড়া পেয়েছে।