দু’দিন আগেই লোকসভায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে স্বাধীকার ভঙ্গের নোটিস জমা করেছেন কংগ্রেসের সাংসদ তথা পাঞ্জাবের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী চরণ জিৎ সিং চান্নি। শুক্রবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের বিরুদ্ধে রাজ্যসভার চেয়ারম্যানের কাছে স্বাধিকার ভঙ্গের নোটিস জমা করেছেন কংগ্রেস সাংসদ তথা দলের সাধারণ সম্পাদক জয়রাম রমেশ। একই বিষয়ে শাহের বিরুদ্ধে রাজ্যসভায় স্বাধীকার ভঙ্গের নোটিস জমা করেছেন কেরলের তিন সিপিএম সাংসদ।
ঠিক কী অভিযোগ শাহর বিরুদ্ধে? নোটিসে লেখা হয়েছে ‘এটা পরিষ্কার যে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রাজ্যসভাকে বিভ্রান্ত করেছেন তাঁর জোরালো মন্তব্যে, যেখানে তিনি দাবি করেছিলেন কেন্দ্র আগেই সতর্ক করেছিল ওয়ানড় নিয়ে, তা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। একজন মন্ত্রী বা সদস্য এভাবে বিভ্রান্ত করলে কক্ষের অবমাননা হয় ও স্বাধিকার ভঙ্গ হয়।’
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বুধবার সংসদের উচ্চকক্ষে দাবি করেন, ওয়েনাড়ে ভূমিধসকাণ্ডের অন্তত এক সপ্তাহ আগে, গত ২৩ জুলাই, কেন্দ্রীয় সরকার বিজয়ন সরকারকে সতর্ক করেছিল। ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস শুনেই পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর ন’টি দল। শাহ বলেছিলেন, ‘‘কেরলে আগেভাগেই জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী (এনডিআরএফ)-র ন’টি দলকে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু কেরল সরকার সময় থাকতে মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরানোর বন্দোবস্ত করেনি। তা করা হলে প্রাণহানি কিছুটা হ্রাস পেত।’’
শাহের দাবি উড়িয়ে কেরলের সিপিএম নেতৃত্বাধীন সরকারের মুখ্যমন্ত্রী বিজয়ন বলেন, ‘‘ওয়েনাড়ে ধসের সম্ভাবনা নিয়ে কেন্দ্রের তরফে কেরলকে কোনও সতর্কবার্তা পাঠানো হয়নি।’’ শুধুমাত্র কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতর (আইএমডি)-এর তরফে ওয়েনাড় এবং সংলগ্ন এলাকায় ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা নিয়ে একটি ‘মামুলি’ কমলা সতর্কতা পাঠানো হয়েছিল বলে দাবি করেছিলেন বিজয়ন।
এর মধ্যেই শুক্রবার আগাম সতর্কবার্তার বিষয়ে মুখ খুলেছে জিয়োলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া (জিএসআই)। সংস্থার তরফে শুক্রবার জানানো হয়েছে, পাহাড়ি এলাকায় ধস থেকে প্রাণ বাঁচাতে বছর কয়েক আগে যে বিশেষ সতর্কবার্তা চালু করা হয়েছিল, তা এখনও পরীক্ষামূলক স্তরে রয়েছে। এখনও দেশের আমজনতাকে নিখুঁত ভাবে ভূমিধসের পূর্বাভাস দেওয়ার পদ্ধতি চালু করতে চার-পাঁচ বছর সময় লাগবে বলে জানানো হয়েছে প্রতিষ্ঠানের তরফে। জিএসআই শুক্রবার সংবাদ সংস্থা পিটিআই-কে জানিয়েছে, এখনও সেই ‘সতর্কবার্তা মডেল’ প্রাথমিক স্তরে রয়েছে এবং দিনে মাত্র এক বার সেই বার্তা পাঠানো হয়। এ ক্ষেত্রেও রাজ্য বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ (এসডিএমএ) এবং জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ (ডিডিএমএ)-কে সেই পরীক্ষামূলক সতর্কবার্তা পাঠানো হয়েছিল বলে জিএসআই মুখপাত্রের দাবি। যা বিজয়নের দাবিকে প্রতিষ্ঠিত করেছে বলে দাবি অনেকের।
একই সময় প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিরুদ্ধে সংসদে অধিকার ভঙ্গের নোটিস জমা হওয়ার নজির আছে কি না সে ব্যাপারে কোনও মহলই নিশ্চিত নয়। ১৮ তম লোকসভার অধিবেশন শুরুর দিন থেকেই বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’ সরকার পক্ষের বিরুদ্ধে এককাট্টা। অধিবেশনের বিতর্ক, আলোচনা, প্রশ্নোত্তর পর্বেও তা টের পাওয়া যাচ্ছে। অধিকার ভঙ্গের জোড়া নোটিস সেই ধারাবাহিকতারই দৃষ্টান্ত বলা চলে।
এখন দেখার প্রধানমন্ত্রীর ক্ষেত্রে লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা এবং রাজ্যসভায় চেয়ারম্যান তথা উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনকড় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ওঠা নোটিসের প্রেক্ষিতে কী ব্যবস্থা নেন। নিয়ম মেনে তাঁরা নোটিস দুটি সংসদের প্রিভিলেজ কমিটির বিবেচনার জন্য পাঠিয়ে দিলেও বিজেপির নাক কাটা যাবে বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।