বালিগঞ্জে ভোটের আগেই ঘনিষ্ঠ মহলে তৃণমূল প্রার্থী বাবুল সুপ্রিয় দাবি করেছিলেন, প্রয়াত সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের জয়ের ব্যবধান ছুঁতে না পারলেও অন্তত ৪০-৪২ হাজার ভোটে তিনি জিতবেন। গণনার ফল বলছে, প্রত্যাশার ধারেকাছেও পৌঁছতে পারেননি তিনি। বালিগঞ্জ বিধানসভায় গায়ক-অভিনেতার জয়ের ব্যবধান ১৯,৯০৪ ভোট।
মন্ত্রী সুব্রতের প্রয়াণের কারণে বালিগঞ্জ বিধানসভায় উপনির্বাচন হচ্ছে। ২০২১-এর নীলবাড়ির লড়াইয়ে বালিগঞ্জে ৭৫ হাজার ৩৩৯ ভোটে বিজেপি-কে হারিয়েছিলেন সুব্রত। পেয়েছিলেন ৭০ শতাংশেরও বেশি ভোট। বিজেপি ২০.৬৮ শতাংশ এবং সংযুক্ত মোর্চার সিপিএম প্রার্থী ৫.৬১ শতাংশ ভোট পেয়েছিলেন। বছর ঘুরতেই দক্ষিণ কলকাতার এই মিশ্র এলাকায় চমকপ্রদ উত্থান ঘটেছে বামেদের। সিপিএমের প্রার্থী সায়রা হালিম সেখানে পেয়েছেন প্রায় ৩৬ শতাংশ ভোট। অন্য দিকে বাবুলের ঝুলিতে গিয়েছে প্রায় ৪৮ শতাংশ। শতাংশের হিসেবও স্বস্তি দিচ্ছে না বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেওয়া প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে। কারণ, জোড়াফুলের ভোট এ বার কমেছে প্রায় ২২ শতাংশ।
অন্যদিকে, কলকাতা কর্পোরেশনের ফল বের হওয়ার পর দেখা গিয়েছিল ৬৪ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূল জিতেছে প্রায় ১৮ হাজার ভোটে আর ৬৫ নম্বর ওয়ার্ডে জোড়াফুল প্রার্থীর মার্জিন ছিল ২২ হাজারের বেশি। আর এদিন দেখা গেল দেখা গেল এই দুটি ওয়ার্ডে তৃণমূলের ওই ব্যবধান মুছে গিয়েছে। তৃণমূলকে পিছনে ফেলে মাথা তুলেছে বামেরা।
আরও পড়ুন: GD Birla School: অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ হয়ে গেল শহরেরতিনটি স্কুল!
এই ৬৫টি নম্বর ওয়ার্ডেই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা বর্ষীয়ান সিপিএম নেতা বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের বাড়ি। অনেকদিন পর বুদ্ধবাবুর পাড়ায় জিতল সিপিএম। এই ওয়ার্ডেরই বাসিন্দা ছিলেন রিজওয়ানুর রহমান। অনেকে বলেন, যাঁর মৃত্যু বুদ্ধবাবুর কুর্সি টলিয়ে দেওয়ার অন্যতম কারণ। রিজওয়ানুরের মৃত্যু কলকাতা সহ বাংলায় সিপিএমের সংখ্যালঘু গণভিত্তিতেও বড়সড় ফাটল ধরিয়েছিল বলে অনেকের মত। সেই এলাকায় সিপিএম লিড পেয়েছে। দুই ওয়ার্ডের মধ্যে সিপিএম একটিতে এগিয়ে রয়েছে ১২১৮ ভোটে অন্যটিতে ২২৪ ভোটে।
বাবুলের কম ব্যবধানের কারণ হিসেবে বামেদের এই পুনরুত্থানকে চিহ্নিত করছেন অনেকেই। বস্তুত, সায়রা যে এত ভোট পেতে পারেন, তৃণমূলও তা ভাবতে পারেনি। ভোটের ফলে স্পষ্ট, বালিগঞ্জ বিধানসভার অন্তর্গত সংখ্যালঘু অধ্যুষিত চারটি ওয়ার্ডে তৃণমূলের ভোটব্যাঙ্কে বড় ভাঙন ধরিয়েছেন বাম প্রার্থী। এমনকি, ওই ওয়ার্ডগুলির সংখ্যালঘু ভোটারদের কংগ্রেসের প্রতি সমর্থনও এ বার লক্ষণীয়।
বাবুলের ‘প্রত্যাশাভঙ্গের’ আরও কয়েকটি ‘কারণ’ উঠে আসছে আলোচনায়। বালিগঞ্জের উপনির্বাচনে তৃণমূল প্রার্থীকে ভোট না দেওয়ার জন্য আগেই ‘নো ভোট টু বাবুল’ স্লোগান উঠেছিল। সেই স্লোগান নিয়ে নেটমাধ্যমে প্রচারের পাশাপাশি কলকাতায় জমায়েতও হয়। ‘সিটিজেন এগেনস্ট পলিটিক্যাল ভায়োলেন্স’ নামে মঞ্চের তরফে বাবুলকে সরাসরি আক্রমণ করেন সমাজকর্মী রত্নাবলী রায়। উপনির্বাচনের ফলাফলে তার প্রভাব পড়েছে বলে অনেকেরই ধারণা। তা ছাড়া, তৃণমূলের অন্দরেও বাবুলের প্রার্থী হওয়া নিয়ে ক্ষোভ ছিল। ভোটের ফলে তার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে বলে মনে করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: By-Election 2022 Result: বালিগঞ্জে জয় বাবুল সুপ্রিয়র, আসানসোলে বাজিমাত শত্রুঘ্ন সিনহার