জগদীপ ধনকড় জমানার বিপরীত ছবি। সিভি আনন্দ বোস (CV Anand Bose) রাজ্যপাল হয়ে আসার পর থেকে রাজ্য সরকারের সঙ্গে রাজভবনের দূরত্ব ঘুচেছে। বুধবার রাজ্য বিধানসভার বাজেট অধিবেশনে রাজ্যপালের উদ্বোধনী ভাষণেও মিলল তার প্রমাণ। রাজ্যপালের ভাষণে বারবার শোনা গেল ‘আমার সরকার’, ‘আমার মুখ্যমন্ত্রী’র মতো শব্দবন্ধ। এছাড়া রাজ্যপালের ভাষণে অনেকটাই অনুপস্থিত কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের বিরোধের সুরও। আর তাতেই ক্ষিপ্ত হয়ে রাজ্যপালের ভাষণের মাঝখানেই হই হট্টগোল শুরু করে দে বিজেপি বিধায়কেরা। তাঁর বক্তৃতার মাঝেই জয় শ্রীরাম স্লোগান তোলে আর তারপরেই ওয়াকআউট করে বিজেপি বিধায়করা।
গত কয়েক বছর পর ফের বাজেট অধিবেশনের রাজ্যপালের ভাষণের সরাসরি সম্প্রচার হল। এর আগে পূর্বতন রাজ্যপালের সঙ্গে সংঘাতের জেরে বন্ধ ছিল বাজেট ভাষণের সরাসরি সম্প্রচার। সিভি আনন্দ বোস রাজ্যপাল হিসাবে দায়িত্ব নেওয়া পর জানিয়ে দেন এবারে তাঁর বাজেট ভাষণ আগের মতো সম্প্রচার হবে। সেই মতো দুপুর ২টো নাগাদ ভাষণ দিতে শুরু করেন রাজ্যপাল। সেই সময় সভায় উপস্থিত ছিলেন স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
কিন্তু শুরু থেকেই বিজেপি বিধায়করা বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। তাঁরা স্লোগান দিতে থাকেন ‘চোর ধর, জেল ভরো’। তাঁদের ‘জয় শ্রী রাম’ স্লোগান দিতেও শুনতে পাওয়া যায়। অভিযোগ, এই সময় রাজ্যপালের দিকে আঙুল উঁচিয়ে শুভেন্দু অধিকারীকে ‘শেম শেম’ বলতেও শোনা যায়। তার মধ্যেই ভাষণ চালিয়ে যান রাজ্যপাল। সেই ভাষণ চলাকালীন বিজেপি বিধায়কদের কাগজ ছিঁড়ে ছুড়তে দেখা যায়। সেই কাগজ রাজ্যপাল বাজেট ভাষণের কপি কিনা জানা যায়নি। তবে মনে করা হচ্ছে বিধায়কদেক দেওয়া ভাষণের কপি ছেড়া হয়েছে। পরে বিজেপি বিধায়করা ওয়াকআউট করেন বিধানসভা থেকে। ভাষণ শেষ করে রাজ্যপাল বিধানসভার বাইরে গেলে হলে সেখানেও বিজেপি বিধায়করা স্লোগান চালিয়ে যান। রাজ্যপাল চলে যাওয়ার পরও তাঁরা বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন।
আরও পড়ুন: Divorce: বন্ধ্যাত্বের কারণ দেখিয়ে স্ত্রীকে ডিভোর্স দেওয়া যাবে না: কলকাতা হাইকোর্ট
বিজেপির অভিযোগ, রাজ্যপাল যে বিবৃতি পাঠ করছিলেন, তার একাধিক অংশ অসত্য এবং তা তাঁরা মেনে নিতে পারেননি। সেই কারণেই তাঁদের এই প্রতিবাদ। বিজেপি অসীম সরকার জানান, তাঁরা চেয়েছিলেন যাতে সুষ্ঠুভাবে বিধানসভার অধিবেশন শুরু হোক। কিন্তু রাজ্যপাল যেই বিবৃতি দিতে শুরু করেন, তা তাঁরা মেনে নিতে পারেননি।
অন্যদিকে, বিজেপি বিধায়ক অশোক লাহিড়ীর মন্তব্য, “যা হয়েছে, তা অনাঙ্ক্ষিত। কিন্তু, বুঝতে হবে, তালি কখনও একহাতে বাজে না। যে বিবৃতি রাজ্যপাল দিয়েছেন তাঁর অনেক অংশ নিয়ে বিজেপি বিধায়কদের আপত্তি রয়েছে। আজ বিধানসভা কক্ষে যা ঘটল তার দায় এড়াতে পারে না সরকার।”
অন্যদিকে, এদিনের ঘটনার তীব্র নিন্দা করেন রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। তিনি বলেন, “বাংলার ইতিহাসে এমন ঘটনা এর আগে কখনও হয়নি। এঁরা সংবিধান মানেন না। এঁরা যখন সংবিধান মানেন না, তখন এঁদের এখানে থাকার অধিকার আছে কি না, ভেবে দেখতে হবে।” এরপরেই ফিরহাদের মন্তব্য, “জগদীপ ধনখড়কে নিয়েও তো আমাদের অনেক আপত্তি ছিল। কিন্তু আমরা কখনও রাজ্যপালকে হায় হায় বলিনি। কেন্দ্রের সরকার ওঁদের এইসব করতে পাঠিয়েছে।”
আরও পড়ুন: Road Accident: সল্টলেকে ভয়াবহ পথদুর্ঘটনা, মাথা থেঁতলে মৃত্যু যুবকের