পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় পাশ হয়ে গেল মুখ্যমন্ত্রীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য পদে বসানোর বিল। কিন্তু বিলটি নিয়ে বিতর্ক বাধল শাসক ও বিরোধী বিধায়কদের মধ্যে। গুজরাতে মুখ্যমন্ত্রীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য পদে বসানোর বিল পাশ হয়েছিল, এমন উদাহরণের বিপরীতে পাল্টা যুক্তি দিলেন তৃণমূল বিধায়করা।
রাজ্য সরকারের অধীনস্থ সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য রাজ্যপাল। কিন্তু বর্তমান রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়ের সঙ্গে রাজ্য সরকারের সম্পর্ক আদায়-কাঁচকলায়। রাজ্য সরকারের অভিযোগ, রাজ্যপালের কাছে বিল পাঠানো হলে তা তিনি স্বাক্ষর করেন না। ফলে প্রশাসনিক কাজে সমস্যা হয়। এবার রাজ্যের বিভিন্ন দপ্তরের অধীনস্থ বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য পদ থেকে রাজ্যপালকে সরিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে বসানোর সিদ্ধান্ত নেয় মন্ত্রিসভা। এদিন উচ্চ শিক্ষাদপ্তরের অধীনস্থ কলকাতা, যাদবপুর, প্রেসিডেন্সির মতো ৩১টি বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য পদে বদলের বিল আনা হয় বিধানসভায়। উল্লেখ্য, ২০০৭ সালের ২৭ এপ্রিল কেন্দ্রের তৈরি করা পুঞ্চিত কমিশন সুপারিশ করেছিল, বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য পদে রাজ্যপালের বদলে রাজ্য নিজেদের পছন্দমতো একজনকে বসাতে পারেন। সেই সুপারিশকে মানদণ্ড হিসেবে ধরেই আনা হয়েছে এই বিল।
সোমবার বিধানসভায় সরকারের তরফে ‘দ্য ওয়েস্ট বেঙ্গল ইউনিভার্সিটি ল’ (সংশোধনী) বিল, ২০২২ পেশ করা হয়। বিলটি পেশ করেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। শাসক-বিরোধী শিবিরের আলোচনার পর বিলের বিরোধিতা করে ডিভিশন চান বিজেপি বিধায়করা। তাতেই হয় ভোটাভুটি। সেই ভোটে পাশ হয় বিলটি। বিলের পক্ষে পড়ে ১৮২টি, বিপক্ষে পড়ে ৪০টি ভোট। বিলের পক্ষে বক্তৃতা করেন শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়, পার্থ ভৌমিক-সহ তৃণমূল বিধায়করা। বিজেপি পরিষদীয় দলের তরফে বিধায়ক বিশ্বনাথ কারক, অগ্নিমিত্রা পাল, অম্বিকা রায়ের মতো বিধায়করা বিলের বিরোধিতা করেন।
পার্থ দাবি করেন, গুজরাতে ও তামিলনাড়ুতেও এর আগে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজ্যপালকে সরিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে আচার্য করা হয়েছে। গুজরাতে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বিজেপির নেতৃত্বাধীন সরকার। এবং মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন নরেন্দ্র মোদী। বিল পাশ হলেও, তা কোনও ভাবেই রাজ্য সরকারের তরফে কার্যকর করা সম্ভব হবে না বলেই দাবি করেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তিনি বলেন, “রিটায়ারমেন্ট হয়ে যাবে, তবু কোনও দিনও মুখ্যমন্ত্রী আচার্য হতে পারবেন না। এই বিল পাশ হওয়ার পর তা যাবে রাজ্যপালের কাছে। তিনি অনুমোদন দিলে তার পর তা যাবে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে অনুমোদনের জন্য। আমি শুধু মনে করিয়ে দিতে চাই, রাজ্যের নাম ‘বঙ্গ’ করার প্রস্তাব বা বিধান পরিষদ তৈরির প্রস্তাব বিধানসভায় পাশ হয়ে দিল্লিতে পড়ে রয়েছে, পাশ হচ্ছে না। তাই আচার্য বিলেরও সেই একই অবস্থা হবে।”
আরও পড়ুন: TET: টেটে ফের সিবিআই, ২৬৯ জনের বেতন বন্ধ করল হাইকোর্ট