Jadavpur University ragging: Complaints and fear arise over introduction procedure of freshers at Jadavpur University

Jadavpur University ragging: ‘পুরষাঙ্গের দৈর্ঘ্য, বাবা-মায়ের যৌনমিলনের দিন’- যাদবপুরের ‘ইন্ট্রো’ আদতে কী?

‘ইন্ট্রো’ পর্ব। আক্ষরিক অর্থেই হস্টেলে নিজের পরিচয় দেওয়ার প্রক্রিয়া। অথচ, আপাতনিরীহ এই বিষয়টিই যেন এখন যাদবপুর মেন হস্টেলের আবাসিকদের কাছে আতঙ্কের অপর নাম। এই পরিচয়-পর্ব নিয়ে নানা সময়ে কানাঘুষো অভিযোগ শোনা গিয়েছে। বাংলা বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র স্বপ্নদীপ কুণ্ডুর অস্বাভাবিক মৃত্যুর পরে ওই পরিচয়-পর্ব নিয়ে সরব প্রতিবাদ করছেন পড়ুয়াদের একাংশ। সমাজমাধ্যমেও এই পর্বের বিবরণ লিখেছেন অনেক পড়ুয়া।

বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেছেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক পড়ুয়া। প্রথম বর্ষের ওই ছাত্রের নাম অর্পণ মাঝি। স্বপ্নদীপ বাংলার ছাত্র ছিলেন। অর্পণ জিওলজি বিভাগের ছাত্র। ফেসবুকে নিজের পরিচয় দিয়ে অর্পণ লেখেন, আমি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমার পরিবার অর্থনৈতিক ভাবে পিছিয়ে থাকা একটি পরিবার এবং আমি আসানসোলে বড় হয়েছি। স্বাভাবিক ভাবেই আমি ভর্তির সময় হস্টেলের জন্য আবেদন করেছিলাম। কিন্তু প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরুর পরের দু-তিন রাতেই হস্টেল আমার মধ্যে বিভীষিকার জন্ম দিয়েছে। এখন আমি অনেক কষ্ট করেই, ধার নিয়ে হলেও মেস খুঁজছি। সমাজের প্রতিটি স্তরে ক্ষমতা প্রদর্শন আছে, কিন্তু যাদবপুর মেন হস্টেলের কিছু দাদাও যে এই একই কাজ করবে তা আমার কল্পনার অতীত। মাথায় একটি স্পেসিফিক ছাঁটের চুল কাটতে বলা, সন্ধে ৬টার মধ্যে হস্টেলে ঢোকার ফরমান, ক্রমাগত সিনিয়রদের ফাইফরমাশ খাটা, সারা রাত জাগিয়ে রেখে ইন্ট্রো (শুনছি আসল ইন্ট্রো নেওয়াই হয়নি এখনও) নেওয়া। ওই তিন রাত ধরে এগুলো আমার সঙ্গে চলছে এবং আমিও ভয় পেয়েই রয়েছি।’ অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে তিন রাত মেন হস্টেলে থাকার পরে হস্টেল ছেড়ে বেরিয়ে যায় অর্পণ।

আরও পড়ুন: Behala Road Accident: পুলিশ সচেতন থাকলে ছেলেটাকে হারাতাম না : প্রধান শিক্ষক

তুলনামূলক সাহিত্য বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র সায়ন সেনগুপ্ত ‘ইন্ট্রো’ নিয়ে সমাজমাধ্যমে লিখেছেন,  ‘প্রতিদিন রাত এগারোটা বা বারোটার পরে অত্যন্ত স্বল্প বসনে বিল্ডিংয়ের একটি করে দরজায় নক করতে হবে আমাকে। সেই ঘরের সিনিয়রেরা দরজা খুললে সাবধান পজ়িশনে দাঁড়িয়ে একটি বয়ান মুখস্থ বলতে হবে আমাকে। আমার নাম, বাবার নাম, মায়ের নাম দিয়ে। তার পরে জন্মদিবস। তার পরে ‘আনুমানিক প্রতিষ্ঠা দিবস’ (আমার জন্মের সময়ের ন’মাস দশ দিন আগের দিনটি হল এই দিনটি। আশা করি, সবাই ইঙ্গিতটি বুঝতে পারছেন)। তার পরে প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিকের গোটা সিভি। এই বয়ান শেষ হবে শারীরিক বর্ণনায়।’ সায়ন আরও লিখেছেন, ‘গোটা বক্তব্যে একটিও ইংরেজি শব্দ ব্যবহার করলে হয় ওঠবস, নয়তো খিলের আঘাত সহ্য করতে হবে হাঁটুর পিছনে। এই ইন্ট্রো চলবে রাত আড়াইটে পর্যন্ত।’

তাঁর কথায়, এক সিনিয়র দাদার থেকে থেকে জানতে পেরেছিলেন যে যতদিন না হস্টেলের প্রতিটি পড়ুয়া নিমেষের মধ্যে নিজের পুরুষাঙ্গের আকৃতি তথা দৈর্ঘ্য বলতে পারছেন, ততদিন ‘ইন্ট্রো’ চলতে থকবে। প্রতিদিনের ‘ইন্ট্রো’-র মেয়াদ হয় আড়াই থেকে তিন ঘণ্টা। রাত ২ টো ৩০ মিনিট চলে ‘ইন্ট্রো’। সঙ্গে আরও নানারকমভাবে হেনস্থা করা হয়। ওই পড়ুয়া জানিয়েছেন, ক্লাসের সব মেয়েদের (‘মামনি’ হিসেবে বলা হত) বিষয়ে খুঁটিনাঁটি তথ্য দিতে হয় সিনিয়রদের। সপ্তাহে একদিন সিনিয়রদের জল ভরে দিতে হবে। একেবারে ছোট-ছোট চুল কাটতে হবে (স্বপ্নদীপের বাবারও অভিযোগ যে ছেলেকে চুল কাটতে জোরজুলুম করা হয়েছিল)।

তবে স্বপ্নদীপকেও সেরকম বিভীষিকার শিকার হতে হয়েছিল কিনা, র‍্যাগিংই তাঁর প্রাণ কেড়েছে কিনা, তা এখনও প্রমাণিত হয়নি। তবে শুক্রবার রাতে যে সৌরভ চৌধুরীকে গ্রেফতার করেছে যাদবপুর থানার পুলিশ, স্বপ্নদীপের বাবার দায়ের করা এফআইআরে তার নাম ছিল। তার নেতৃত্বেই ছেলেকে অত্যাচারিত হতে হয়েছিল বলে দাবি করেছেন স্বপ্নদীপের পরিবার। যিনি রবিবারই হস্টেলে এসেছিলেন। আর বুধবার সেই হস্টেল থেকে নিথর দেহ বেরিয়ে এসেছে।

এদিকে, পড়ুয়ার অপমৃত্যুর ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাতজন অধ্যাপক, তিন ছাত্র প্রতিনিধি এবং একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বৃহস্পতিবার রাতে মৃত স্বপ্নদীপ কুণ্ডু’র বাবা রামপ্রসাদ কুণ্ডুর সঙ্গে টেলিফোনে কথা হয় মুখ্যমন্ত্রীর। দোষীদের খুঁজে বের করে যথাযথ শাস্তির সুপারিশ করা হবে বলে তাঁকে আশ্বাস দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

আরও পড়ুন: Calcutta High Court: ক্যালকাটা হাইকোর্টের ৩ বিচারপতিকে বদলির সুপারিশ সুপ্রিম কোর্টের