যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বর্ষের ছাত্রের রহস্যমৃত্যু। হস্টেলের বারান্দা থেকে পড়ে গিয়ে মৃত্যু হয়েছে ওই পড়ুয়ার। মৃত ছাত্রের নাম স্বপ্নদীপ কুণ্ডু। হস্টেল থেকে পড়ে যাওয়ার পর তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন ওই পড়ুয়া। বৃহস্পতিবার সকালে তাঁর মৃত্যু হয়। কীভাবে মৃত্যু হল ওই ছাত্রের তার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে খবর, বিশ্ববিদ্যালয়ের মেন হস্টেলের ‘এ’ ব্লকের তৃতীয় তলার বারান্দা থেকে ‘কোনও ভাবে’ পড়ে গিয়ে মৃত্যু হয় স্বপ্নদীপের। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রথম বর্ষের এই ছাত্র আত্মহত্যা করেছেন কি না, সেই নিয়েও সংশয় তৈরি হয়েছে। তবে আত্মহত্যার জল্পনা উড়িয়ে দিয়েছেন তাঁর মামা। জানিয়েছেন, কাল রাতেও মায়ের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। কী কথা বলেছিলেন? অরূপের কথায়, ‘‘ও বলে মা, আমি ভাল নেই। আমার খুব ভয় করছে। আমার বোন জিজ্ঞেস করেন, ‘কী হয়েছে’? ও বলে, ‘তুমি শীঘ্রই এসো, তোমার সঙ্গে অনেক কথা রয়েছে’।’’ এর পর ছেলের ফোনে মা ফোন করেন। কিন্তু আর ফোন ধরেনি স্বপ্নদীপ। যা বলতে চেয়েছিলেন, বলতে পারেননি। ফোন বেজে যায়। তার পর স্বপ্নদীপের অভিভাবকের কাছে ফোন আসে। তিনি পড়ে গিয়েছেন বলে খবর দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন: Recruitment Protest: এমএলএ হস্টেলের দরজা আটকে দিলেন স্কুলের চাকরিপ্রার্থীরা, আটকে বিধায়কেরা
তবে এই ঘটনাকে আত্মহত্যা বলে মানছেন না তাঁর মামা অরূপ কুণ্ডু। সেই সঙ্গে ভাগ্নের রহস্যমৃত্যুর নেপথ্যে ‘র্যাগিং’-এর অভিযোগ করলেন তিনি। যাদবপুর থানায় এফআইআর জানিয়েছেন অরূপ। তিনি বলেন, ‘‘ও আত্মহত্যা করেনি। যে ভাল ছেলে, সে কী ভাবে হঠাৎ মারা যায়। ও পাগল নয়।’’ তাহলে কি রহস্যমৃত্যুর নেপথ্যে কিছু ‘সন্দেহ’ করছেন স্বপ্নদীপের পরিবার? অরূপ বলেন, ‘‘সন্দেহ তো হচ্ছে। চিকিৎসক একটা কাগজে সই করালেন। তাতে লেখা, স্বপ্নদীপের গায়ে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। র্যাগিং অবশ্যই হয়েছে। র্যাগিং না হলে কী করে হয়?’’ তবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ নেই বলেই জানিয়েছেন অরূপ। তিনি এ-ও জানিয়েছেন, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলায় স্নাতকের ক্লাস করতে ভাল লাগছিল স্বপ্নদীপের। সোমবারও ক্লাসে গিয়েছেন তিনি। বাবাকে ফোন করে জানিয়েছেন, তাঁর ক্লাস করতে খুব ভাল লেগেছে। তা হলে কি হোস্টেলে কাউকে সন্দেহ করছে পরিবার? অরূপ জানিয়েছেন, হোস্টেলে নিজের ঘর পাননি স্বপ্নদীপ। অন্য এক বন্ধুর ঘরে থাকছিলেন।
হস্টেলের অন্য পড়ুয়াদের দাবি, বুধবার রাত ১১টা ৪৫ মিনিট নাগাদ তাঁরা ভারী কিছু পড়ার শব্দ পান। তাঁরা ঘর থেকে বেরিয়ে দেখেন, নীচে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছেন স্বপ্নদীপ। উদ্ধার করে সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে কাছের এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। বৃহস্পতিবার ভোর সাড়ে ৪টে নাগাদ মৃত্যু হয় তাঁর। পুলিশ সূত্রে এই খবর জানানো হয়েছে। এর পর বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে ঘটনার তদন্ত চেয়েছেন অরূপ। তিনি চিঠিতে স্বপ্নদীপের মাকে ফোনের কথা জানিয়ে দোষীদের শাস্তিও দাবি করেছেন। অরূপের আবেদন, ‘‘আমাদের বাচ্চা চলে গেল, আর কোনও বাচ্চার মায়ের কোল যাতে খালি না হয়!’’
আরও পড়ুন: Calcutta High Court: শিবলিঙ্গ উচ্ছেদের ঘোষণা বিচারপতির, রায় লিখতে গিয়ে অজ্ঞান রেজিস্ট্রার!