আবারও অধ্যাপকের বিরুদ্ধে যৌন প্রস্তাব দেওয়ার অভিযোগে সরগরম বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর। অধ্যাপকের বিরুদ্ধে যাবতীয় অভিযোগ বিস্তারিতভাবে জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারকে ইমেল পাঠিয়েছেন এমএ (MA) প্রথম বর্ষের সেই ছাত্রী।
জার্নালিজম ও মাস কমিউনিকেশনের ছাত্রীর মেইলের বয়ান অনুযায়ী, ঘটনাটি ঘটে গত বুধবার ২১ ফেব্রুয়ারি। পরীক্ষা চলাকালীন হঠাৎ গার্ড তাঁকে বলেন অভিযুক্ত অধ্যাপক তাঁকে নিজের ঘরে ডাকছেন। এরপর ওই গার্ডই তাঁকে অধ্যাপকের ঘরে নিয়ে যান। গার্ড নিজে ওই অধ্যাপকের ঘরের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকেন এবং ছাত্রীকে ভিতরে ঢুকতে বলেন। ছাত্রীটি আরও জানাচ্ছেন, অধ্যাপক তাঁকে দেখেই হাত ধরে সজোরে টেনে ভিতরে নিয়ে যান। এরপর তাঁর হাতে কালি ঢেলে দেন। মেইলে ছাত্রী লিখেছেন, ঘটনার আকস্মিকতায় হতভম্ব হয়ে যান তিনি। অধ্যাপক ছাত্রীকে বলেন, তিনি নাকি হাতে উত্তর লিখে এসেছেন। এরপর ওই ছাত্রী জানান, তিনি তাঁর হাতের ছবি তুলে রাখতে চান। ছাত্রীর কথায়, “আমি স্যরকে বলি আমি আমার হাতের ছবি তুলে রাখতে চাই। আপনি যা করছেন, তার প্রমাণ রাখতে চাই। যেভাবে আমার ওপর শারীরিক নির্যাতন হয়েছে, তার প্রমাণ হিসাবে এই ছবি দেখাতে পারব। ”
ছাত্রীটি জানাচ্ছেন, এরপরই ওই অধ্যাপক সজোরে তাঁকে টেনে নিয়ে গিয়ে নিজেই সাবান দিয়ে জোরে করে ঘষে হাত ধুয়ে দেন এবং বাংলায় বলতে থাকেন, ‘আমি যা চাই, তুমি যদি তা না করো আর যদি আমার চাহিদা না মেটাও, তাহলে আমি তোমাকে চিরতরে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বার করে দেব।’
ঘটনাক্রম এখানেই থামেনি। বরং ছাত্রীর অভিযোগ মেইল অনুযায়ী, তিনি যখন কাঁদতে কাঁদতে হল ছাড়ছিলেন, সে সময় তাঁর সামনে এসে দাঁড়ান দুই সিনিয়র ছাত্র। ওই দুই সিনিয়র ‘দাদা’ তাঁকে বলেন, “অধ্যাপকের সঙ্গে গিয়ে একান্তে দেখা কর”। যৌন সম্পর্কই অধ্যাপকের রাগ ভাঙাতে পারে বলে ওই সিনিয়র দাদারা তাঁকে বলেছিলেন বলে বিস্ফোরক অভিযোগ ছাত্রীর। তিনি আরও লিখেছেন, “ভালভাবে পরের পরীক্ষাগুলো দিতে চাইলে স্যরের সঙ্গে যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হতে হবে। বাকি কোনও অসুবিধা যাতে না হয়, তা আমরা দেখে নেব!”
ওই ছাত্রীর বক্তব্য, ‘আমি এতটা ভয়ে আছি, আমি ঠিকভাবে কথাও বলতে পারছি না।’ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের তরফে ইমেলের প্রেক্ষিতে তাঁর সঙ্গে কোনও যোগাযোগও করা হয়নি বলে দাবি ওই ছাত্রীর। ওই ছাত্রীর বক্তব্য, ‘আমি ভীষণ ভয়ের মধ্যে আছি, কাল আমাকে কী ফেস করতে হবে সেই ভেবে। আমি মানসিকভাবে ভীষণ বিপর্যস্ত হয়ে রয়েছি। জোর করে আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। আমার মনে হয়েছে, আমাকে কুনজরে দেখা হত।’
ছাত্রী মেইল মারফত অভিযোগ জানিয়েছেন রাজ্য মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন লিনা গঙ্গোপাধ্যায়ের কাছেও। এ প্রসঙ্গে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক ইমন কল্যাণ লাহিড়ির সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, “আমি এ বিষয়ে এখনই কিছু বলব না। কারণ এটা একটা অফিসিয়াল বিষয়। গোটাটা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে রয়েছে।”