যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের ছাত্র স্বপ্নদীপ কুন্ডুর অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় শুক্রবার রাতে গ্রেফতার করা হয়েছে সৌরভ চৌধুরী নামে এক যুবককে। তিনি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়েরই প্রাক্তনী। স্বপ্নদীপের বাবা রামপ্রসাদ কুন্ডুর অভিযোগের ভিত্তিতেই তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ইতিমধ্যে ওই ঘটনায় খুনের মামলা রুজু করেছে পুলিশ। সম্মিলিত অপরাধের ধারাতেও মামলা হয়েছে। সৌরভকে শনিবার আলিপুর আদালতে হাজির করানো হবে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেলের এ-২ ব্লকে থাকা বেশ কয়েক জন আবাসিককে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।
সৌরভের বাড়ি পশ্চিম মেদিনীপুরের চন্দ্রকোনায়। তিনি গ্রেফতার হতেই সেই খবর পৌঁছে যায় বাড়িতে। তার পর থেকেই তাঁর পরিবারের কপালে চিন্তার ভাঁজ। ছেলের গ্রেফতারির খবর পেয়ে ভেঙে পড়েছেন সৌরভের বাবা নিরূপ চৌধুরী। একনাগাড়ে কেঁদে চলেছেন মা প্রণতি চৌধুরী। পুরো পরিবারের একটাই দাবি, সৌরভ নির্দোষ এবং তাঁকে ফাঁসানো হচ্ছে।
সৌরভের মা প্রণতির কথায়, ‘‘স্বপ্নদীপের মৃত্যুতে আমার ছেলে দায়ী নয়। আমার ছেলে ও রকম ছেলেই না। এটা যাদবপুরের ছেলেরাও বলবে যে, সৌরভ এ কাজ করতে পারে না। সন্ধ্যাবেলা জানতে পারি যে ওকে (সৌরভকে) গ্রেফতার করা হয়েছে। আমার সঙ্গে বিকেলেও ওর কথা হয়। ও বলে, ‘‘আমি কোনও ভুল করিনি মা। আমার শাস্তি হবে না। আমি কাউকে র্যাগিং করিনি। কোনও দিন করিনি। আমার একটাই ভুল যে, ওর (স্বপ্নদীপের) বাবাকে বলেছিলাম আমি লক্ষ্য রাখব।’’
আরও পড়ুন: Metered Taxi : এবার কি তবে উঠে যাচ্ছে কলকাতার মিটার ট্যাক্সি
জানা গিয়েছে, মেস কমিটির অন্যতম মাথা সৌরভ চৌধুরী। ২০২১ সালে অঙ্কে এমএসসি করেন তিনি। যাদবপুরের হস্টেলে থেকে চাকরির জন্য চেষ্টা করছিলেন। প্রাক্তন ছাত্র হয়েও হস্টেলের মেস কমিটিতে ছিলেন সৌরভ। বাড়ি, পশ্চিম মেদিনীপুরের চন্দ্রকোণায়। স্বপ্নদীপের বাবার অভিযোগ, সৌরভ চৌধুরীর নেতৃত্বেই হস্টেলের ছেলেরা অত্যাচার করে উপর থেকে ধাক্কা মেরে নীচে ফেলে মেরে ফেলেছে ছেলেকে।
জানা গিয়েছে, প্রথমে হস্টেলে সুযোগ পায়নি স্বপ্নদীপ। সৌরভের সঙ্গে আলাপ হয় চায়ের দোকানে। যাদবপুরের প্রাক্তনী, প্রথম বর্ষের পড়ুয়াকে জানান, হস্টেলে সুযোগ না পেলে গেস্ট হিসেবে থাকতে পারে সে। হস্টেলে এই নিয়ম চালু আছে। এজন্য ১০০০ টাকা দিতে হবে! ৩ অগাস্ট সৌরভ আর স্বপ্নদীপের এই কথা হয়। ৪ অগাস্ট থেকে হস্টেলে মনোতোষ নামে এক আবাসিকের রুমে থাকতে শুরু করে স্বপ্নদীপ। একসঙ্গে ৩ জন। কিন্তু এই থাকার ব্যবস্থার কথা কি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানত? প্রশ্ন উঠেছে।
সৌরভকেই ‘ঠান্ডা মাথার খুনি’ বলে শুক্রবার সংবাদমাধ্যমের সামনে মন্তব্য করেন মৃত ছাত্রের বাবা। তাঁর অভিযোগ, কয়েক জন দল বেঁধে স্বপ্নদীপকে খুন করেছেন। তিনি এর বিচার চান। তাঁর কথায়, ‘‘আমার দৃঢ় বিশ্বাস, সৌরভের নেতৃত্বে আমার বড় ছেলের উপর অত্যাচার করা হয়েছে। ওঁরাই আমার ছেলেকে নীচে ফেলে মেরে দিয়েছে।’’ অন্য দিকে, ছেলের গ্রেফতারির জন্য মৃত স্বপ্নদীপের বাবাকেই দায়ী করছেন সৌরভের মা। তাঁর দাবি, ‘‘আমার ছেলে নির্দোষ। ওকে ফাঁসানো হয়েছে। স্বপ্নদীপের বাবা-মা ফাঁসিয়েছে। আমার ছেলের নাম বার বার নেওয়া হচ্ছে।’’