বিচ্ছিন্নতা নয়, ভাগাভাগি নয়। যারা এসব দাবি তুলবে, তারা বিধানসভায় দাঁড়িয়ে বলুক। বাংলা ভাগ ইস্যুতে বিধানসভায় দাঁড়িয়ে সরাসরি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দিলেন একতার বার্তা। বললেন, ”স্লোগান হবে একদিন, আমরা সবাই একসঙ্গে থাকতে চাই।” উত্তরবঙ্গ (North Bengal) ভাগের দাবি যে একবিন্দুও ধোপে টিকবে না, তা ফের স্পষ্ট করলেন মুখ্যমন্ত্রী।
গত বুধবার প্রধানমন্ত্রীকে সুকান্তের চিঠি দেওয়া থেকেই বাংলা ভাগ নিয়ে নতুন করে বিতর্কের সূত্রপাত হয়। সুকান্তের প্রস্তাবে তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছেন জলপাইগুড়ির সাংসদ জয়ন্ত রায়। আবার কোচবিহার ভেঙে গ্রেটার কোচবিহার তৈরি করে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করার দাবি জানিয়েছেন বিজেপির রাজ্যসভার সাংসদ নগেন্দ্র রায় তথা অনন্ত মহারাজ। এ নিয়ে শোরগোল পড়তেই বৃহস্পতিবার লোকসভায় পশ্চিমবঙ্গের বিভাজন চেয়ে সরব হন ঝাড়খণ্ডের গোড্ডার সাংসদ নিশিকান্ত দুবে। নিশিকান্ত লোকসভার শূন্য প্রহরে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মূলত জনবিন্যাসের ভারসাম্য এবং দেশের নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে বিহারের কিষাণগঞ্জ, আরারিয়া ও কাটিহারের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের মালদহ ও মুর্শিদাবাদের মতো সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকা নিয়ে একটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল গড়ে তোলার সওয়াল করেন। তাঁর অভিযোগ, ধারাবাহিক অনুপ্রবেশের ফলে বিহার ও পশ্চিমবঙ্গের ওই পাঁচ জেলার জনবিন্যাস পাল্টে গিয়েছে। ওই জেলাগুলিতে জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) চালু করার দাবিও তোলেন তিনি। তাঁর দাবিকে সমর্থন করেছেন মুর্শিদাবাদ জেলার দুই বিজেপি বিধায়ক। এক জন মুর্শিদাবাদ কেন্দ্রের বিধায়ক গৌরীশঙ্কর ঘোষ, অন্য জন বহরমপুরের বিধায়ক সুব্রত মৈত্র।
শনিবার দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সভাপতিত্বে নীতি আয়োগের বৈঠকে বলার সময় তাঁর মাইক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ তুলেছিলেন মমতা। মুখ্যমন্ত্রীর কণ্ঠরোধ করে তাঁর অপমান করা হয়েছে, এই অভিযোগ তুলে সোমবার বিধানসভায় নিন্দাপ্রস্তাব আনে তৃণমূল। এই নিন্দাপ্রস্তাবের প্রতিবাদে অধিবেশন কক্ষ থেকে ওয়াকআউট করে বিজেপি। এর পরেই বিধানসভায় যান মুখ্যমন্ত্রী। নীতি আয়োগের বৈঠকে ‘মাইক বন্ধ করে দেওয়া’ নিয়ে বিজেপি ও কেন্দ্রীয় সরকারকে আক্রমণ করার পরেই বঙ্গভঙ্গের প্রসঙ্গ তোলেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘ভোট চলে গেলেই ভাগাভাগি ইস্যুকে নিয়ে আসা হয়। এক জন বলছেন, মুর্শিদাবাদ-মালদহ ভেঙে দাও। কেউ বলছেন, অসমের তিনটি জেলাকে নিয়ে নতুন কিছু করো। কেউ আবার উত্তরবঙ্গকে উত্তর-পূর্বের সঙ্গে যুক্ত করে দিতে বলছেন। চার মন্ত্রী বলেছেন উত্তরবঙ্গ ভাগের কথা। আমি ধিক্কার জানাই। আসুক বাংলা ভাগ করতে, কী করে রুখতে হয় দেখিয়ে দেব।’’ বিজেপির বিরুদ্ধে ‘বিভাজনের রাজনীতি’ করার অভিযোগ তুলতে গিয়ে মমতার অভিযোগ, গোটা বাংলা তো বটেই, বিজেপি যেখান থেকে সবচেয়ে বেশি আসন জিতেছে, সেই উত্তরবঙ্গও বঞ্চিত হয়েছে কেন্দ্রীয় বাজেটে।
নীতি আয়োগের (Niti Ayog) বৈঠকে বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের সময় মাইক্রোফোন বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ ঘিরে সোমবার বিধানসভায় (Assembly)আলোচনা পর্ব ছিল। উপস্থিত ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী নিজেও। এ বিষয়ে বলতে গিয়ে একাধিক ইস্যু তুলে ধরেন মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায় (CM Mamata Banerjee)। একদিকে উত্তরবঙ্গের নদীগুলির কারণে বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে কেন্দ্রের ‘উদাসীনতা’র অভিযোগ, অন্যদিকে মাঝেমধ্যে উত্তরবঙ্গ ভাগের (Divide)দাবি উসকে ওঠার বিষয়টি মনে করিয়ে দেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ”কাজ আমরা করি। আর ভোটের সময় বিজেপি শুধু বাংলা ভাগ করার কথা বলে! যারা বলে আমরা কাজ করিনি, তারা নিজেরা কী করেছে, সেটা আগে দেখান।”
মমতার কথায়, ”আগে আমি এসব দেখিনি। এই বিজেপি সরকার আসার পরই এটা দেখছি। নির্বাচন আসলেই শুধু বিভাজনের প্রশ্ন। ভোট এলেই বিজেপি বাংলা ভাগ করার কথা বলে। গোর্খাদের, জনজাতিদের আলাদা করে দিতে চায় তারা। এমনকি তফশিলি, মতুয়াদের আলাদা করার ভাবনাও নেয় তারা। কিন্তু বাংলায় কোনও ভাগাভাগির প্রশ্ন নেই”, স্পষ্ট করে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর সাফ কথা, বিধানসভাকে এড়িয়ে বাংলা ভাগের কথা বলা যাবে না। এক্ষেত্রে বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে বিধানসভায় আলোচনা চেয়েছেন তিনি। দাবি করেছেন, ভোটাভুটি হোক তখন দেখা যাবে কার কত দম।
বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী অবশ্য আগেই জানিয়েছিলেন, উত্তরবঙ্গের বিজেপি নেতৃত্বের একাংশ রাজ্য ভাগের যে ডাক দিয়েছেন, তা দলের অবস্থান নয়। মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্যের প্রেক্ষিতে সুকান্তেরও বক্তব্য, বাংলা ভাগের কোনও প্রশ্নই উঠছে না! তাঁর কথায়, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী অবান্তর কথা বলছেন। কেউ প্রস্তাব দিচ্ছেন মানেই তা কোনও সিদ্ধান্ত নয়।’’