Mamata Banerjee: TMC supremo Mamata Banerjee wants to make her party workers clean image

Mamata Banerjee: বিত্তবান চাই না, বিবেকবান চাই, একুশের মঞ্চে দলে শুদ্ধিকরণের বার্তা মমতার

প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য যা শুরু করতে দেরি করে ফেলেছিলেন, সেটা সময়ে শুরু করে দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ২০০৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে সিপিএম তথা বামফ্রন্টের বিপর্যয় দেখার পরে বুদ্ধদেব ‘শুদ্ধকরণ’ বার্তা দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সে সুযোগ আর আসেনি। একের পর এক নির্বাচনে হারতে হারতে শূন্যে পৌঁছে গিয়েছে বামেরা। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী মমতা সেই ‘ভুল’ না করে পর পরটি তিন নির্বাচনে ভাল ফলের পরে উৎসবের আবহের মধ্যেই সতর্ক করে দিলেন তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের। ২১ জুলাইয়ের বৃহত্তম সমাবেশ থেকে তৃণমূলে শুদ্ধকরণের ডাক দিলেন। বললেন, “তৃণমূলে বিত্তবান লোক চাই না। চাই বিবেকবান লোক।” যাকে দলের অভ্যন্তরে ‘কড়া বার্তা’ বলেই মনে করা হচ্ছে।

দলের প্রথম সারির নেতাদের মতে, নেত্রী এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বিলক্ষণ জানেন, দুর্নীতি এবং সরকারি পরিষেবা না-পাওয়া প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার অন্যতম দু’টি কারণ। তাই তিনি সে দিকে বিশেষ নজর দিয়েছেন। এবং সেই সংক্রান্ত বার্তা দেওয়ার জন্য বেছে নিয়েছেন ২১ জুলাইয়ের সমাবেশকে। যেখানে দলের সমস্ত স্তরের নেতা, কর্মী এবং জনপ্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকেন।

নেত্রীর কিছু আগেই বক্তৃতায় অভিষেক বলেছিলেন, “মনে রাখবেন বাংলার মানুষ বিজেপিকে ভোট দিয়ে জেতায়নি। জিতিয়েছে তৃণমূলকে। তাই তৃণমূল কর্মীদের দায়িত্বও আরও বেশি করে পালন করতে হবে। তাই আত্মতুষ্টির কোনও জায়গা নেই। আরও বেশি করে মানুষের কাজ করতে হবে। আরও বেশি বিনয়ী হতে হবে। আরও বেশি শৃঙ্খলাপরায়ণ হতে হবে।” অভিষেকের সেই কথার প্রতিধ্বনিই যেন শোনা গেল নেত্রীর কণ্ঠে। বললেন, “আমরা মানুষের পাহারাদার। আমরা যত জিতব তত দায়িত্ববান হতে হবে। আমরা লোভী হতে চাই না, মানুষের বন্ধু হতে চাই।”

রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় শাসক দলের নেতা-কর্মীদের একাংশের মধ্যে যে ‘দাদাগিরি’র প্রবণতা দেখা দিয়েছে, নেত্রী মমতা তার দিকে নজর দিতে বলেছেন। নেতা-কর্মীদের শাসন করার ভঙ্গিতে মমতা বলেছেন, ‘‘যেন কারও বিরুদ্ধে দল কোনও অভিযোগ না পায়! অভিযোগ পেলে দল উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে।’’ দলের নেতাদের একাংশের মতে, নেত্রী এবং প্রশাসক মমতা ইতিমধ্যেই দল এবং প্রশাসনে ‘ঝাঁকুনি’ দেওয়া শুরু করেছেন। ২১ জুলাইয়ের মঞ্চ থেকেও তিনি সেই প্রক্রিয়াই জারি রাখলেন। কারণ, মমতা জানেন, ২০২৬ সালের বিধানসভা ভোট ‘শাসক’ তৃণমূলের কাছে আরও একটি পরীক্ষার। সেই ভোটে তৃণমূলকে দীর্ঘ ১৫ বছরের প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার মোকাবিলা করতে হবে। সেই কারণেই মমতা তাঁর ভাষণে বলেছেন, ‘‘অন্যায় করলে আমি দলের কাউকে ছাড়ি না। গ্রেফতার করি। অন্যায় করবেন না। অন্যায় সহ্য করবেন না। আমি পরিষ্কার বলছি, মা-বোনেদের সম্মান দেবেন।’’

সদ্যসমাপ্ত লোকসভা ভোটে তৃণমূলের বিরোধীদের বহু অভিযোগ মাথায় নিয়ে লড়তে হয়েছিল। একটা সময়ে বিরোধী শিবির মনে করেছিল, শাসকদল খাদের কিনারে দাঁড়িয়ে। কিন্তু ফলঘোষণায় দেখা যায়, উল্টে আসন বাড়িয়েছে তৃণমূল। কিন্তু সেই ফলাফল দলের কর্মীদের মধ্যে যাতে ‘আত্মতুষ্টি’ না ডেকে আনে, সে বিষয়েও সজাগ নজর দিয়েছেন মমতা। রবিবারের সমাবেশে আসা তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে উৎসবের মেজাজ ছিল। কিন্তু প্রধান বক্তা মমতা একটি বারের জন্যও উৎসবের কথা না শুনিয়ে ‘শাসন’ করেছেন নেতা-কর্মীদের। বলেছেন, ‘‘তৃণমূল করতে গেলে সকলকে নিয়ে চলতে হবে। যেখানে যেখানে জিতেছেন, সেখানে সেখানে গিয়ে মানুষকে ধন্যবাদ জানাবেন। মানুষের জন্য কাজ করবেন। যেখানে যেখানে আমরা জিতিনি, সেখানকার মানুষের কাছে গিয়ে ক্ষমা চাইবেন।’’ মনে করিয়েছেন, ‘‘গাড়িতে ঘোরার চেয়ে হেঁটে ঘোরা ভাল। সাইকেল নিয়ে গ্রামে গ্রামে ঘোরা ভাল।’’

সম্প্রতি বিভিন্ন দুর্নীতিতে নাম জড়াচ্ছে শাসকদলের বিভিন্ন স্তরের নেতার। বিষয়টিতে তিনি যে যারপরনাই অসন্তুষ্ট, কোনও রাখ ঢাক না রেখে এদিন সেকথাও স্পষ্ট করেছেন তৃণমূল নেত্রী। তিনি বলেন, দুর্নীতির সঙ্গে আপোষ নয়। মানুষকে যারা পরিষেবা দেবে না তাঁদের সঙ্গে আমাদের কোনও সম্পর্ক নেই।

এখানেই না থেমে হুঁশিয়ারির সুরে বলেছেন, “পয়সা আসে, চলে যায়। সেবার কোনও বিকল্প নেই।সব পুরসভা, পঞ্চায়েত, এমএলএ, এমপি, প্রধান সবাইকে বলব, কারও বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ যেন কেউ না পায়। যদি কোনও অভিযোগ ওঠে, আমরা কিন্তু উপযুক্ত অ্যাকশন নেব। গরিব থাকুন, যা আছে ঘরে, তাই খেয়ে বেঁচে থাকুন। তাহলেই আপনাদের কেউ সরাতে পারবে না।”