ডাক্তারি ছাত্ররা বৈঠকে আসতে রাজি হওয়ার পর বিকেল পাঁচটাতেই সভাঘরে চলে আসেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ২ ঘণ্টা ১০ মিনিট অপেক্ষা করার পরও বৈঠকে এলেন না জুনিয়র ডাক্তাররা। এরপরই সাংবাদিকদের উদ্দেশে নবান্ন সভাঘর থেকে মুখ্যমন্ত্রী জানালেন, দু’ঘণ্টা ধরে তিনি নবান্নের সভাঘরে অপেক্ষা করছিলেন। জুনিয়র চিকিৎসকেরা আসেননি।
বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ডাক্তারদের নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর উন্নতি নিয়ে আলোচনায় রাজি ছিলাম। ৩৪ জন ডাক্তার এসেছিলেন, সবাকে ঢুকতে অনুমতি দিয়েছিলাম। তার পরও তাঁরা লাইভ স্ট্রিমিং দাবিতে অনড়। বিচারাধীন মামলার কারণেই লাইভ সম্প্রচারে সমস্যা আছে আমরা বলেছিলাম, খোলা মনে আলোচনায় আসুন’। তিনি মনে করিয়ে দেন, সুপ্রিম কোর্ট লাইভ স্ট্রিমিং করতে পারে, সরকার পারে না।
মমতা বলেন, ‘‘নির্যাতিতার জন্য শোকপ্রস্তাব নেব বলে ঠিক করেছিলাম। ২ঘণ্টার বেশি অপেক্ষা করেছি। তিন দিন ধরে অপেক্ষা করছি। বাংলার মানুষের সহানুভূতি আছে। আমি নিজেও মিছিল করেনি। পরিবারের সঙ্গে আমরা একমত। সিবিআই দ্রুত তদন্ত শেষ করুক। আমাদের হাতে মামলাটি নেই। সিবিআই সম্বন্ধেও কিছু বলতে চাই না এখন।’’
মমতা বলেন, ‘‘সরাসরি সম্প্রচারে আমাদের আপত্তি ছিল না। কিন্তু এই মামলা সুপ্রিম কোর্টে চলছে। আমরা এমন কিছু করতে চাইনি, যাতে অচলাবস্থা চলতে পারে। চিঠিতে আমরা লিখেছিলাম, সরাসরি সম্প্রচার করতে পারব না। ওরা যে কোনও ইস্যু তুলতে পারতেন। সেটা ওঁরা পরে সংবাদমাধ্যমকে জানাতে পারতেন। আমরা যুগ্ম ভাবেও সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে পারতাম। আমাদেরও কাজ আছে। প্রতি দিন এ ভাবে অপেক্ষা করানো হচ্ছে। ওঁরা কেন আসছেন না, সেটা সাংবাদিক বৈঠক করেও জানাতে পারতেন। তা করেননি।’’
২৭ জন বিনা চিকিৎসায় মারা গেছেন। সেই পরিসংখ্যান সামনে এনে মমতা বলেন, ‘‘আমি তিন বার চেষ্টা করলাম। সুপ্রিম কোর্ট রায় দিয়েছে। ইতিমধ্যে ২৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। ৩২ দিন হয়ে গেল। অনেকেই কাজ করছেন না। সাত লক্ষ মানুষ পরিষেবা পাননি। যে কোনও মৃত্যু মর্মান্তিক। কিন্তু এত মানুষ চিকিৎসা পাচ্ছেন না। এর থেকে লজ্জার কী হতে পারে?’’
বাংলার মানুষের কাছে ক্ষমা চাইলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। হাত জোড় করে তিনি বললেন, ‘‘তিন দিনেও সমাধান করতে পারলাম না। বাংলার মানুষের কাছে ক্ষমা চাইছি। যাঁরা নবান্নের সামনে এসেও বৈঠকে এলেন না, তাঁদের আমি ক্ষমা করলাম। ডাক্তারেরা ভগবান। এত মানুষ বিনা চিকিৎসায় মারা যাচ্ছেন। আমার হৃদয় কাঁদছে।’’
মমতা বলেন, ‘‘আমাকে অনেক অসম্মান করা হয়েছে। অনেক ভুল বোঝাবুঝি, কুৎসা হয়েছে। সাধারণ মানুষ রঙ বোঝেনি। আমি পদত্যাগ করতে রাজি আছি। কিন্তু আশা করি, মানুষ বুঝেছেন, ওরা বিচার চায় না। চেয়ার চায়। আশা করেছিলাম, ছোটরা এসে কথা বলবে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী, সময় পেরিয়ে গিয়েছে। রাজ্য সরকার যা করবে, তাতে বাধা দেব না, জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। আমি এটাকে ঔদ্ধত্য হিসাবে দেখছি না।’