বাঁশদ্রোণীতে যুগলের আত্মঘাতী হওয়ার ঘটনায় নাটকীয় মোড়। লিভ-ইন নয়, বিয়ে করেছিলেন ধর্মান্তরিত ঋষিকেশ পাল ও রিয়া সরকার। এমনই চাঞ্চল্যকর দাবি করেছেন রিয়া সরকারের ঘনিষ্ঠ এক বান্ধবী। শুধু তাই নয়। তিনি আরও জানিয়েছেন, দিল্লি থেকে ফিরেই আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল দুজনে। এমনকি মৃত্যুর আগে বন্ধুদের এসএমএসও করে। এসএমএস-এ রিয়া লেখেন, “আমরা দুজন সুইসাইড করলাম। আমাদের সুইসাইডের জন্য কেউ দায়ি নয়। পারলে এসো মাটি দিতে।”
মঙ্গলবার সকালে ব্রহ্মপুরের একটি ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার হয় হৃষীকেশ এবং রিয়ার মৃতদেহ। আত্মহত্যার আগে তাঁরা থানায় ইমেল করে সে কথা জানান বলে পুলিশ সূত্রের খবর। কিন্তু যতক্ষণে পুলিশ গিয়ে পৌঁছয়, ততক্ষণে দেরি হয়ে গিয়েছে। এর পরে তদন্তে জানা যায়, আগে একটি কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থায় কাজ করলেও পথ দুর্ঘটনায় গুরুতর জখম হওয়ার পরে হৃষীকেশের কাজ চলে যায়। পরবর্তী কালে তাঁর রক্তের ক্যানসার ধরা পড়ে। রিয়া একটি পার্লারে কাজ করতেন। বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে এসে পরিবারের অমতেই তিনি হৃষীকেশের সঙ্গে থাকতে শুরু করেন ও পরে বিয়েও করেন। কিন্তু ক্যানসারের চিকিৎসায় জলের মতো টাকা খরচ হতে থাকে। বাজারে প্রায় ২৫ লক্ষ টাকার দেনা হয়ে যায়। শেষে ব্রহ্মপুরের ভাড়া নেওয়া ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার হয় তাঁদের মৃতদেহ।
আরও পড়ুন: Gangrape: কর্পোরেট পার্টিতে আইটি কর্মীকে মাদক খাইয়ে গণধর্ষণ, অভিযোগ দায়ের বাগুইআটি থানায়
পেশায় গাড়ির সার্ভিস সেন্টারের কর্মী বন্ধু তাপসকেই উইল করে নিজের সব কিছু দিয়ে গিয়েছেন গড়িয়া ব্রহ্মপুরের আত্মঘাতী যুগল হৃষীকেশ এবং রিয়া সরকার। এমনকি, তাঁদের মৃতদেহও তাপসের হাতেই তুলে দেওয়ার জন্য বলে গিয়েছেন তাঁরা। তাপস জানান, হৃষীকেশ-রিয়ার ফ্ল্যাটে থাকা আসবাবপত্র ছাড়াও সোফা, ফ্রিজ এবং এসি রয়েছে। আছে একটি স্কুটার এবং সামান্য কিছু সোনার গয়না, যা তাঁদের পরনেই থাকত। আগে একটি গাড়িও ছিল, সেটি কোথায় সেই খোঁজ নেওয়া হবে।
এর পরে পুলিশের অনুমতি নিয়ে এ সব কিছু বিক্রি করে সেই টাকা তাপস তুলে দিতে চান ক্যানসার আক্রান্ত শিশুদের নিয়ে কাজ করা কোনও সংস্থার হাতে। তাঁর কথায়, ‘‘যাঁরা ক্যানসারকে হারাতে পারল না, তাঁদের শেষটুকু দিয়ে অন্তত ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়াইটা জারি থাকুক।’’ বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত অবশ্য তাঁদের মরদেহ হাতে পাননি তাপস। এর জন্য এ দিনও উইল মেনে সৎকার করা যায়নি।
রিয়ার বন্ধু দেবী ঘোষ জানিয়েছেন, ২০১৯-এর ডিসেম্বর মাস নাগাদ বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসেন রিয়া। রেজিস্ট্রি বিয়ে করেছিল যুগল। ফ্ল্যাটে রিয়াকে নিয়ে প্রথমদিকে বাবা-মায়ের সঙ্গেই থাকতেন ঋষিকেশ। পরে দুজনেরই মৃত্যু হয়। ওদিকে ঋষিকেশ ক্যান্সারের থার্ড স্টেজে থাকা সত্ত্বেও রিয়ার বাড়ি থেকে কেউ দেখতে আসেননি বলেও জানান তিনি। এই বছরের এপ্রিলে ঋষিকেশ ও রিয়া দিল্লি গিয়েছিল চিকিৎসার জন্য। ২৫ লাখ টাকার মতো ঋণ নিয়েছিল। দু’সপ্তাহ পর দিল্লি থেকে ফিরে আসে দুজনে। বার বার বলত যে, ওরা আত্মহত্যা করবে। ওই বান্ধবী জানিয়েছেন, চিকিৎসার জন্য রিয়ার সোনার গয়নাও বিক্রি করতে হয়। ঋষিকেশের দিদি পৌলমী সরকারেরও মৃত্যু হয় ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে। চিকিৎসার জন্য ওর দিদিও ১৩ লাখ টাকা লোন নিয়েছিল। সেই টাকাও ঋষিকেশ শোধ করেছিলেন।
আরও পড়ুন: Dev: ইডির মুখোমুখি হলেন সাংসদ–অভিনেতা, কী নিয়ে শুরু জিজ্ঞাসাবাদ?