মাঝে কেটে গিয়েছে প্রায় বছর দেড়েক। দেখা হয়নি দুজনের। শুক্রবার কলকাতার নগর দায়রা আদালতে সশরীরে হাজির করানো হয় পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং অর্পিতা মুখোপাধ্যায়কে। প্রথমে একে অপরের দেখা পাননি। আবার অর্পিতার মুখেও ছিল মাস্ক। সূত্রের খবর, এজলাসে ঢোকার পর থেকে যেন অস্থির হয়ে পড়েন পার্থ। এজলাসের আনাচ কানাচে পার্থর চোখ তখন অর্পিতাকে খুঁজতে ব্যস্ত। ঘনিষ্ঠ মহলে নাকি প্রশ্নও করেন পার্থ, “লাল জামা পরাটা কে?”
এদিন অর্পিতার পরনে ছিল লাল রঙের কামিজ, সাদা সালোয়ার। গায়ে একটা হালকা হলুদ রঙের ওড়না। হাত এবং পায়ের আঙুলে নেলপলিশ। বেশ পরিপাটি। আদালতে ঢোকার সময় মুখে মাস্ক ছিল। তবে এজলাসে ঢোকার পর মাস্ক খুলে দেন। পার্থ পরেছিলেন ঘিয়ে-বাদামি ডোরা কাটা পাঞ্জাবি এবং সাদা পাজামা। এজলাসে পার্থ ও অর্পিতার মাঝে দূরত্ব ছিল বেশ কিছুটা। অনেকটা এজলাসের পিছনের দিকে দুই প্রান্তে। কিন্তু আদালতে সওয়াল জবাব চলাকালীন বারবারই অর্পিতার দিকে তাকাতে দেখা যায় পার্থকে।
অর্পিতাও অবশ্য আদালত চত্বরে ঘনিষ্ঠ মহলে পার্থকে নিয়ে কথা বলেন। তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, “পার্থদাকে আপনার অবস্থার জন্য দোষী মনে হয়?” হাসিমুখে অর্পিতা নাকি বলেন, “কাকে আর দোষ দেব? সব চলছে, ঠিক আছে।” ঘনিষ্ঠ বৃত্তে নাকি জেল জীবন নিয়েও আক্ষেপ প্রকাশ করেন অর্পিতা। বলেন, “জেল জীবন নিয়ে আর কী বলব?” তবে তাঁর বাড়িতে বিপুল টাকা উদ্ধারের নেপথ্যে কে, সে বিষয়ে অবশ্য কারও নাম উল্লেখ করেননি অর্পিতা। তাঁর আশা, “আদালতেই সব সামনে আসবে।”
নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ২০২২ সালের ২৩ জুলাই নিয়োগ মামলায় গ্রেফতার হন পার্থ। ইডির গ্রেফতারির পর রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রীর ‘ঠিকানা’ প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগার। গ্রেফতার হওয়ার পরেই তাঁর মন্ত্রিত্ব গিয়েছিল। তৃণমূল তাঁকে দল থেকে সাসপেন্ড ঘোষণা করে। অন্য দিকে, পার্থ-ঘনিষ্ঠ অর্পিতার দু’টি ফ্ল্যাট থেকে ৪০ কোটিরও বেশি টাকা পায় ইডি। সেই থেকে গ্রেফতার তিনিও। শুক্রবার আদালতে হাজির করানো হয় নিয়োগ মামলায় ধৃত রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী পার্থ, তাঁর ‘ঘনিষ্ঠ’ অর্পিতা, মানিক ভট্টাচার্য এবং কুন্তল ঘোষকে। প্রিজ়ন ভ্যান থেকে যখন অর্পিতা নামছিলেন, তখন তাঁকে প্রশ্ন করা হয়েছিল এসএসসি মামলায় প্রায় ২৬ হাজার চাকরি যে বাতিল হয়ে গেল, এ প্রসঙ্গে তিনি কী বলবেন? অর্পিতার জবাব ছিল, ‘‘আমি এ বিষয়ে কিছু জানি না। যাঁদের প্রশ্ন করার তাঁদের করুন।’’