শোনা গেছিল, পেলভিক বোন সমেত আরও একাধিক হাড় ভেঙে গিয়েছিল আরজি কর হাসপাতালে ধর্ষিত হয়ে খুন হওয়া তরুণী ডাক্তারের। আজ, সোমবার ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট পাওয়ার পরে পুলিশ জানাল, কোনও হাড় ভাঙেনি তাঁর। শরীরে একাধিক আঘাতের দাগ আছে ঠিকই, কিন্তু হাড় ভাঙার কথা সত্য নয়।
ধৃতের ডিএনএ নমুনা ইতিমধ্যেই পাঠানো হয়েছে পরীক্ষার জন্য। পাশাপাশিই, পুলিশ বিভিন্ন ফুটেজ ইত্যাদি খতিয়ে দেখে বার করার চেষ্টা করছে যে, ঘটনাস্থলে ধৃত একা ছিলেন, না তাঁর সঙ্গে আরও কয়েক জন ছিলেন। কারণ, মৃতার শরীরের প্রাথমিক পর্যবেক্ষণ থেকে এমন ধারণা জোরালো হচ্ছে যে, ধৃতের একার পক্ষে ওই ঘটনা ঘটানো কঠিন। পুলিশ তা-ই সেই বিষয়টিও খতিয়ে দেখছে।
তদন্তের স্বার্থে সোমবার এক মহিলাকে ডেকে পাঠানো হয়েছিল লালবাজারে। পুলিশ বা সিভিক ভলান্টিয়ারের সঙ্গে বেশি পরিচয় ছিল, এমন পাঁচ জনকে সোমবার জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। পুলিশ সূত্রের খবর, জেরায় ধৃত অভিযুক্ত দাবি করেছেন, তিনি আগে সেমিনার হল’এ যাননি। তিনি হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটার খুঁজছিলেন বলে পুলিশের কাছএ দাবি করেছেন। জানিয়েছেন, তাঁর পরিচিত কারও অস্ত্রোপচার হওয়ার কথা ছিল। তিনি তাঁকেই খুঁজছিলেন। তখনই তিনি ওই মহিলা চিকিৎসককে সেখানে দেখেন। তার পরে ঘটনাটি ঘটান। ঘটনার পরদিন ধৃত ৪ নম্বর ব্যাটালিয়নে তাঁর বাসস্থানে ফিরে যান। তত ক্ষণে বিষয়টি জানাজানি হয়ে গিয়েছে। ব্যাটালিয়নে এক জন ধৃতকে আরজি করের ঘটনাটি জানান। শুনে তিনি বলেন, ও আচ্ছা! ব্যাপারটা দেখবেন। তার পরেই পুলিশ গিয়ে অভিযুক্তকে তুলে আনে।
হাসপাতাল থেকে মৃতার বাড়িতে যিনি ফোন করে প্রথম খবর দিয়েছিলেন, আরজি করের সেই সহকারী সুপারকে মঙ্গলবার লালবাজারে ডেকে পাঠিয়েছে পুলিশ। প্রসঙ্গত, মৃতার পরিবারের লোকজন জানিয়েছেন, প্রথমে হাসপাতাল থেকে তাঁদের ফোন করে বলা হয়েছিল, তাঁদের মেয়ে আত্মহত্যা করেছেন। পরে দেখা যায়, সেটি খুনের ঘটনা। তারও পরে ধর্ষণের তত্ত্ব প্রকাশ্যে আসে। তখন পুলিশ ধর্ষণ এবং খুনের মামলা রুজু করে তদন্তে নামে। প্রথম থেকেই প্রশ্ন ছিল, কেন প্রথমেই ওই মৃত্যুকে আত্মহত্যা বলে বর্ণনা করা হল। সোমবার মৃতার বাড়িতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও তেমনই অভিযোগ পান। তিনিই বেরিয়ে জানান, কে প্রথম ওই কথা বলেছিলেন, তা খোঁজ করা হবে। তাঁকেও প্রশ্ন করবে পুলিশ।
সোমবার জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মোট ৭ জন চিকিৎসককেও ডেকে পাঠানো হয়েছিল লালবাজারে। এঁরা ঘটনার দিন ‘অন ডিউটি’ ছিলেন। এঁদের মধ্যে ৪ জন এক সঙ্গে রাতের খাবার খেয়েছিলেন। বাকি ৩ জন ওই ৪ জনের সঙ্গে দেখা করেছিলেন বা তাঁদের পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছিল। প্রয়োজনে এঁদের আবার লালবাজারে ডাকা হতে পারে।