আরজি কর-কাণ্ডের তদন্তভার কলকাতা হাই কোর্ট সিবিআইকে দেওয়ার পরে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার সদর দফতর থেকে কয়েক জন আধিকারিক এসেছেন কলকাতায়। এ বার কেন্দ্রীয় তদন্তকারীদের দলে যোগ দিলেন সিবিআই অফিসার সীমা পাহুজা। তিনি এর আগে উত্তরপ্রদেশের হাথরস ধর্ষণকাণ্ডের তদন্ত করেছিলেন।
জানা গিয়েছে, দিল্লি থেকে সিবিআইয়ের প্রায় ৬৫ জন আধিকারিক এসেছেন কলকাতায়। দিল্লি থেকে নিয়ে আসা হয়েছে কিছু প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও কম্পিউটারও। মোবাইলের কল, হোয়াটস অ্যাপ মেসেজ ও কলের উপর নজরদারি করার জন্যই এই যন্ত্রগুলো এখন ব্যবহার করা হচ্ছে। তদন্ত শুরু করার পর থেকে অভিযুক্ত কলকাতা পুলিশের সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়কে টানা জেরা করছে সিবিআই। এই বীভৎস ও নারকীয় ঘটনার পিছনে সঞ্জয় ছাড়াও একাধিক ব্যক্তি রয়েছে কি না, তদন্তে সেই ব্যাপারেই বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। আর জি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষকেও জিজ্ঞাসাবাদ করছেন সিবিআইয়ের আধিকারিকরা। সোমবার তাঁকে চতুর্থ বারের জন্য ডেকে পাঠানো হয় সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সে। গত ৯ আগস্টের এই ঘটনার তদন্তে একের পর এক তথ্য উঠে আসছে। যদিও সিবিআইয়ের হাতে এখনও পর্যন্ত কেউ গ্রেপ্তার হননি।
স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, তদন্তের গতি নিয়ে। অনেকেই বলছেন, রবিবার পর্যন্ত যে তদন্তের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছিল সিবিআইকে, তা রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছে তারা। এই অবস্থায় এবার আরজি কর কাণ্ডের তদন্তে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী অফিসারদের সঙ্গে যোগ দিলেন সিবিআই অফিসার সীমা পাহুজা। এর আগে উত্তরপ্রদেশের হাথরস ধর্ষণ কাণ্ডের তদন্ত করেছিলেন তিনি।
২০২০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর উচ্চবর্ণের চার জনের লালসার শিকার হতে হয়েছিল হাথরসের ১৯ বছরের দলিত তরুণীকে। উচ্চবর্ণের চার ব্যক্তি দলিত তরুণীটিকে গণধর্ষণের পর একটি মাঠে ফেলে পালায়। বাড়ির লোকেরা যখন তরুণীকে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় উদ্ধার করেন, তখন তাঁর কাঁধ ও গোপনাঙ্গে ভয়ানক আঘাত। ১১ দিন লড়ে শেষ পর্যন্ত দিল্লির সফদরজং হাসপাতালে মৃত্যু হয় হাথরসের দলিত তরুণীর। তাঁর মৃত্যুর পর শুরু আর এক নাটক। তরুণীর দেহ একটি অ্যাম্বুল্যান্সে চাপিয়ে গ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু পরিবারের হাতে তুলে না দিয়ে উত্তরপ্রদেশ পুলিশ ও সরকারি কর্তাদের উপস্থিতিতে রাতের অন্ধকারে পুড়িয়ে দেওয়া হয় নির্যাতিতা তরুণীর মৃতদেহ। ঘটনা নিয়ে তোলপাড় পড়ে যায় সারা দেশে।
সিবিআই আধিকারিক সীমা এক সময়ে গাজিয়াবাদে কর্মরত ছিলেন তদন্তকারী সংস্থার অ্যান্টি কোরাপশন ব্যুরোয়। হাথরস তো বটেই, বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মামলার তদন্তকারী অফিসার হিসাবে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার অন্দরে প্রশংসা কুড়িয়েছেন তিনি। সিবিআই আধিকারিক হিসাবে তাঁর কাজের জন্য ২০১৪ সালের ১৫ অগস্ট পুলিশ মেডেল পান সীমা। সাহসী এবং নির্ভীক অফিসার হিসাবে পরিচিতি রয়েছে সীমার।
হাথরস-কাণ্ডে সিবিআইয়ের ১৪ সদস্যের বিশেষ দলের নেতৃত্ব দেওয়া ছাড়াও হিমাচল প্রদেশের গুড়িয়া মামলার তদন্তের ভার ছিল সীমার উপরে। সংশ্লিষ্ট মামলার সমাধান করেছিলেন তিনি।