সোমবার আরজি কর মামলায় সুপ্রিম কোর্ট পষ্টাপষ্টি জানিয়ে দিয়েছিল মঙ্গলবার বিকেল ৫টার মধ্যে জুনিয়র ডাক্তারদের কাজে ফিরতে হবে। নইলে তাঁদের বিরুদ্ধে রাজ্য সরকার চাইলে ব্যবস্থা নিতেই পারবে। সুপ্রিম কোর্টের এই নির্দেশ সত্ত্বেও মঙ্গলবার জুনিয়র ডাক্তাররা কর্মবিরতিতে অনড় থাকলেন। শুধু তা নয়, এদিন স্বাস্থ্য ভবন অভিযানে নেমেছেন তাঁরা। পাঁচ দফা দাবিতে স্বাস্থ্যভবনের সামনে চলছে অবস্থান বিক্ষোভ। তাঁদের দাবিদাওয়া না মেটা পর্যন্ত স্বাস্থ্য ভবনের সামনে অবস্থান চালিয়ে যাওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন।
এমন পরিস্থিতিতে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ইমেল করে ১০ জন প্রতিনিধিকে ডাকা হয়েছিল নবান্নে। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর অপেক্ষাই সার! সাড়া মিলল না আন্দোলনকারীদের। মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টা ১০ মিনিট নাগাদ আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তারদের কাছে রাজ্য সরকারের পক্ষে একটি মেল পাঠানো হয়। সেই মেলে বলা হয়, নবান্নে এসে সরকারের শীর্ষস্থানীয় প্রতিনিধিদের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের প্রতিনিধি দল এসে দেখা করতে পারে। মেলে ‘এখন’ শব্দটিও লেখা ছিল। শুধু তাই নয়, প্রতিনিধি দলে যে সর্বোচ্চ ১০ জন থাকতে পারবেন, মেলে লেখা ছিল সে কথাও। সরকারের তরফে ওই মেলটি পাঠিয়েছিলেন রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম। প্রতিনিধি দলে কারা থাকবেন, পাল্টা মেলে তা-ও জানাতে বলা হয়। নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, জুনিয়র ডাক্তারদের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে দেখা করার জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায় সেখানে অপেক্ষা করছেন। কিন্তু জুনিয়র ডাক্তাররা সেই ডাকে সাড়া দেননি।
মেল পাঠানোর পর প্রায় ৮০ মিনিট অপেক্ষা করে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা নাগাদ বাড়ি ফিরে যান তিনি। মুখ্যমন্ত্রীর অপেক্ষা এবং তাঁর নবান্ন ছেড়ে যাওয়ার কথা সংবাদমাধ্যমের কাছে জানান রাজ্যের অর্থ প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় চন্দ্রিমা জানান, সন্ধ্যা ৬টা ১০ মিনিট নাগাদ আন্দোলনরত চিকিৎসকদের কাছে একটি মেল পাঠানো হয়। মেলটি পাঠিয়েছিলেন রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত সেই মেলের জবাব না আসায় নবান্ন থেকে বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেন মুখ্যমন্ত্রী।
নবান্নে চন্দ্রিমার সাংবাদিক বৈঠক শেষ হওয়ার আগেই সল্টলেকে স্বাস্থ্য ভবনের সামনে থেকে পাল্টা সাংবাদিক বৈঠক শুরু করেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। তাঁদের তরফে ওই ইমেলকে ‘অপমানজনক’ বলে অভিহিত করা হয়। জুনিয়র ডাক্তারদের যুক্তি, তাঁদের দাবিগুলির মধ্যে অন্যতম স্বাস্থ্যসচিবের অপসারণ। কিন্তু বৈঠকের জন্য যে মেলটি পাঠানো হয়েছে, তা এসেছে স্বাস্থ্যসচিবের ইমেল থেকেই। এক জুনিয়র ডাক্তারের কথায়, ‘‘ইমেলে লেখা হয়েছে, রেসপেক্টেড স্যর। মনে রাখবেন, এই আন্দোলনে শুধু স্যর নন, ম্যাডামেরাও রয়েছেন।’’
যদিও চন্দ্রিমা জানিয়েছেন, আন্দোলনকারীদের জন্য আলোচনার দরজা সব সময় খোলা রয়েছে। কিন্তু মঙ্গলবার সন্ধ্যায় যে ভাবে আলোচনার পরিবেশ ভেস্তে গেল, তাতে আগামী দিনে আবারও দু’পক্ষকে এক টেবিলে আলোচনায় বসতে দেখা যাবে কি না, তা নিয়ে বড়সড় প্রশ্ন উঠেছে।