আরজি কর মেডিকেল কলেজের চিকিৎসকের উপর কী পরিমাণ নারকীয় অত্যাচার চালানো হয়েছিল, তা স্পষ্ট ধরা পড়ল ময়নাতদন্ত রিপোর্টে ( RG Kar – Post mortem report)।
কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল আগেই জানিয়েছিলেন, গোটা ময়নাতদন্তের প্রক্রিয়ার ভিডিও গ্রাফি করা হয়েছে। সেই ভিডিগ্রাফারের নামও রয়েছে রিপোর্টে। বিস্তারিত রিপোর্টের উপসংহারে পরিষ্কার বলা হয়েছে, শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে চিকিৎসককে (“Death was due to effects of manual strangulation associated with smothering..”)। তা ছাড়া জোর করে তাঁর যৌনাঙ্গে কিছু ঢোকানো হয়েছিল, যা থেকে বোঝা যাচ্ছে যে যৌন নির্যাতন করা হয়েছিল (“There is medical evidence of forceful penetration/insertion in her genitalia – possibility of sexual assault.” ।
নিহত চিকিৎসক ছাত্রীর মরদেহের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট অনুযায়ী, তাঁর সারা শরীরে অনেকগুলি ছোট বড় ক্ষত ছিল। সব মিলিয়ে তার সংখ্যা ১৬টি। যেমন মাথায়, গালে, নাকে, ঠোঁটের ভিতরে, বাম কাঁধে ও হাতে, বাম হাঁটুতে, এবং যৌনাঙ্গে ক্ষতচিহ্ন দেখা গিয়েছে। এই সব ক্ষতচিহ্নগুলোর কোনওটি ০.৩ X ০.১ ইঞ্চি মাপের তো কোনওটি ০.২ X ০.১ ইঞ্চি মাপের। বাম কাঁধের উপর ২ ইঞ্চি x ২ ইঞ্চি মাপের ক্ষত দেখা গিয়েছে। তা ছাড়া মৃত চিকিৎসরের দুই ফুসফুসে হেমারেজ অর্থাৎ রক্ত জমাট অবস্খায় পাওয়া গিয়েছে। চিকিৎসক পড়ুয়াকে যে শ্বাসরোধ করে ‘খুন’ করা হয়েছে রিপোর্টে লেখা রয়েছে তা-ও।
একাধিক মহল থেকে অভিযোগ তোলা হয়েছিল, নির্যাতিতার দেহে ‘১৫০ গ্রাম সিমেন’ মিলেছে। কলকাতা হাই কোর্টে তাঁর পরিবার যে পিটিশন দায়ের করেছে, সেখানেও এই বিষয়টির উল্লেখ রয়েছে। তবে ময়নাতদন্তের রিপোর্টে ‘সিমেন’ সংক্রান্ত কোনও উল্লেখ নেই। রিপোর্টে লেখা হয়েছে, নির্যাতিতার ‘এন্ডোসার্ভিক্যাল ক্যানাল’ থেকে ‘সাদা ঘন চটচটে তরল’ সংগ্রহ করা হয়েছে। তবে সেই তরল কী, তার উল্লেখ নেই রিপোর্টে। রিপোর্টে ‘এক্সটারন্যাল ও ইন্টারন্যাল জেনিটালিয়া’ কলমে লেখা হয়েছে, ওজন ‘১৫১ গ্রাম’। প্রসঙ্গত, ময়নাতদন্তের রিপোর্টে নিয়ম মেনে মৃতদেহের বিভিন্ন অংশের ওজন উল্লেখ করা হয়। এ ক্ষেত্রেও তা-ই করা হয়েছে। এক ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞের কথায়, ‘‘যে সাদা চটচটে তরলের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, সেটা কী বস্তু তা ফরেন্সিক রিপোর্ট থেকে জানা যাবে। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে এমন কিছু লেখা যায় না। কারণ, সেটা পরীক্ষাসাপেক্ষ বিষয়।’’
বিভিন্ন মহল থেকে নির্যাতিতার শরীরের একাধিক হাড় ভাঙার যে সব কথা উঠে আসছিল, ময়নাতদন্তের রিপোর্টে তেমন হাড় ভাঙার কোনও উল্লেখ নেই। বলা হয়েছে, গলা টিপে, নাক-মুখ চেপে ধরে খুন করা হয়। ফরেনসিক মেডিসিনের বিশেষজ্ঞদের কথায়, এমন নৃশংস কাজ করতে গেলে একাধিক ব্যক্তির প্রয়োজন। কারও একার পক্ষে একইসঙ্গে গলা টিপে, নাকমুখ চেপে ধরে খুন করা সম্ভব নয়।
গত ৯ অগস্ট সকালে আরজি কর হাসপাতালে জরুরি বিভাগের চারতলার সেমিনার হলে চিকিৎসকের দেহ মিলেছিল। অভিযোগ, ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে তাঁকে। সেদিনই তাঁর মরদেহের ময়নাতদন্ত করা হয়। পরিবার ও চিকিৎসকদের দাবি মতো একজন বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে ময়নাতদন্ত করা হয়েছিল। সেই তদন্তেরই রিপোর্ট এখন পাওয়া গিয়েছে। এই ঘটনায় এক জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ, যিনি পেশায় ছিলেন সিভিক ভলান্টিয়ার। হাই কোর্টের নির্দেশে ঘটনার তদন্ত করছে সিবিআই। ধৃতকে হেফাজতে নিয়েছে তাঁরা।