আনিস খানের মৃত্যুতে সিবিআই তদন্তের দাবিতে দায়ের মামলায় কলকাতা হাইকোর্টে তদন্ত রিপোর্ট পেশ করল রাজ্য সরকার গঠিত সিট। মঙ্গলবার বিচারপতি রাজশেখর মান্থার এজলাসে ৮২ পাতার রিপোর্ট পেশ করে রাজ্য। খাম খুলে সেই রিপোর্ট শুধুমাত্র আনিস খানের পরিবারের আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যকে দেখতে দেওয়া হয়েছে। রিপোর্টে কী রয়েছে তদন্তের স্বার্থে তা প্রকাশ্যে আনেনি রাজ্য।
রাজ্যের তরফে এদিন আদালতকে জানানো হয়েছে, আনিস খান মৃত্যুর তদন্ত প্রায় শেষের মুখে। হায়দরাবাদের সিএফএসএল পরীক্ষাগার থেকে আনিসের ফোনের ফরেন্সিক রিপোর্ট এসেছে। তবে কলকাতার ল্যাবে যে নমুনাগুলি পাঠানো হয়েছিল সেগুলির রিপোর্ট এখনো হাতে পাওয়া যায়নি। সেই রিপোর্ট এসে পৌঁছলেই চার্জশিট পেশ করবে পুলিশ।
অন্যদিকে, আনিস খানের মামলার শুনানিতে তাঁর বাবাকেই ভরা আদালতে ক্ষমা চাইতে বলা হল। বিচারপতি রাজশেখর মান্থা বললেন, আনিসের বাবাকে হলফনামা দিয়ে ক্ষমা চাইতে হবে। তা না হলে তিনি নিজে সরে দাঁড়াবেন মামলার বিচারের দায়িত্ব থেকে। কেন না আনিসের বাবা যে আদালতের কাছে বিচার চাইতে এসেছেন, সেই আদালতেরই অবমাননা করেছেন।
আরও পড়ুন: Hanskhali Rape: মেয়েটার শুনেছি অ্যাফেয়ার ছিল! একে কি ধর্ষণ বলবেন? প্রশ্ন মমতার
ঘটনার সূত্রপাত সোমবার। কলকাতা হাইকোর্টে বিচারপতি রাজশখরের একক বেঞ্চে ওইদিনই আনিস হত্যা মামলার শুনানি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে বিচারপতি না বসায় মামলাটি পিছিয়ে যায়। ঘটনাটির প্রেক্ষিতে আনিসের বাবা সেলিম খানের একটি মন্তব্য নিয়েই অসন্তোষ জানিয়েছেন বিচারপতি। সালেম মামলা পিছনোর কারণ হিসেবে বলেছিলেন, মুখ্যমন্ত্রীর কথাতেই শুনানি হয়নি। জবাবে বিচারপতি রাজশেখর জানিয়েছেন, ‘‘যদি তাই হয়, যদি ওঁর (আনিসে বাবার) আদালতের উপর আস্থা না-ই থাকে, তবে আমি এই মুহূর্তে এই মামলাটির বিচারের কাজ থেকে সরে আসতে পারি।’’
মঙ্গলবার এই ঘটনায় পরিস্থিতি সামলাতে নামেন আনিসের বাবার আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য। বিচারপতিকে মামলা না ছাড়ার অনুরোধ করে তিনি বলেন, ‘‘সালেম এক জন সাধারণ মানুষ। তিনি উচ্চশিক্ষিত নন। কোনও রাজনৈতিক ব্যক্তিও নন তিনি। পুত্রকে হারিয়ে মানসিক ভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছেন। তবে আইনের প্রতি তাঁর সম্পূর্ণ আস্থা রয়েছে।’’ যদিও সে কথায় তেমন কাজ হয়নি। বিচারপতি নিজের সিদ্ধান্তে অনড় ছিলেন। তিনি জানিয়ে দেন, মামলাকারীর মন্তব্য আদালত অবমাননার সামিল।
শেষপর্যন্ত রাজ্যের অ্যাডভোকেট (এজি) সৌমেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি বদলায়। তিনি বিচারপতিকে বলেন, ‘‘মামলাকারী কাছে এমন মন্তব্য আশা করা যায় না ঠিকই। কিন্তু দয়া করে আপনি মামলাটি ছেড়ে দেবেন না।’’ সরকারি আইনজীবী অনুরোধেই এর পর মামলাটি শুনতে রাজি হন বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা। তবে জানিয়ে দেন, সালেমকে হলফনামা দিয়ে আদালতের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।
আরও পড়ুন: আবার সিন্ডিকেট বিবাদ প্রকাশ্যে, ভরদুপুরে কলকাতার রাস্তায় গুলিবিদ্ধ দুই