নাবালিকাকে অপহরণ ও ধর্ষণ করে খুনের অভিযোগে তোলপাড় তিলজলা। রবিবার থানায় ইটবৃষ্টি, পুলিশের গাড়ি ভাঙচুরের পর এবার রেল অবরোধ। বন্ডেল গেটে অবরোধ করে দফায় দফায় বিক্ষোভ স্থানীয়দের। এমনকী বুকে পোস্টার লাগিয়ে কয়েকজন বিক্ষোভকারী রাস্তায়ও বসে পড়েন। কয়েকজন বিক্ষোভকারী পিকনিক গার্ডেন-হাওড়া রুটের একটি বাসের ছাদেও উঠে পড়েন। তাঁদের দাবি, শিশুমৃত্যুতে অভিযুক্তকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। বন্ডেল গেটে অবরোধের জেরে গড়িয়াহাট ও বালিগঞ্জে ব্যহত যানচলাচল। রেল অবরোধের জেরে শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখায় ট্রেন চলাচল ব্যহত হয়। চরম ভোগান্তি হয় নিত্যযাত্রীদের। পরিস্থিতি সামাল দিতে ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে বিশাল পুলিশবাহিনী।
অবরোধকারীরা ট্রেন লাইন আটকে রাখার ফলে আটকে পড়েছে একের পর এক ট্রেন। গন্তব্যে পৌঁছতে ট্রেন ছেড়ে রেললাইন ধরে হাঁটতে শুরু করেন নিত্যযাত্রীরা। ব্যাপক অসুবিধের মুখে পড়েছেন সোনারপুর- বারুইপুরগামী যাত্রীরা। পুলিশি নিস্ক্রিয়তা ও উদাসীনতার অভিযোগে বেলা সাড়ে এগারোটা থেকে বন্ডেল গেট ফ্লাইওভারের সামনে অবরোধ চালাচ্ছেন স্থানীয়রা। চারটি রুটের বাস, তিনটে রুটের অটো সমেত কিছুই চলাচল করতে পারছে না। শুধু রেল নয়, ওই এলাকায় রাস্তা বন্ধ হওয়ার ফলে কার্যত রুদ্ধ পার্ক সার্কাস এলাকা।
উল্লেখ্য, রবিবার সকাল থেকে তিলজলার বাসিন্দা বছর আটেকের এক নাবালিকার খোঁজ মিলছিল না। শেষমেশ সন্ধে নাগাদ ওই এলাকারই একটি ফ্ল্যাট থেকে নাবালিকার হাত-পা-মুখ বাঁধা দেহ উদ্ধার হয়। এর পরেই তুমুল উত্তপ্ত হয়ে পড়ে গোটা এলাকা। নাবালিকাকে ধর্ষণ করে খুনের অভিযোগ তোলে পরিবার। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার নাবালিকাার খোঁজ না পেয়ে বেলাতেই থানায় অভিযোগ দায়ের করেছিল পরিবার। স্থানীয়দের দাবি, সিসিটিভিতে দেখা যায়, বাড়ির ভিতর প্রবেশ করছে শিশুকন্যা। ওই বহুতলের একতলায় রয়েছে একটি গেঞ্জি কারখানা। কারখানাটিতে তল্লাশি চালিয়ে কিছু উদ্ধার হয়নি। যদিও পুলিশ জানতে পারে যে, কারখানার অনেক কর্মী বহুতলের বিভিন্ন ফ্ল্যাটে থাকেন।
আরও পড়ুন: SSC Scam: ইডির ঘরে ১ কোটি! কুন্তলের থেকে নেওয়া টাকা ‘ফেরালেন’ বনি সেনগুপ্ত ও সোমা চক্রবর্তী
পরে পুলিশ ওই বহুতলের প্রত্যেকটি ফ্ল্যাটে চিরুনি তল্লাশি চালায়। তিনতলায় অলোক কুমারের ফ্ল্যাটে একটি বস্তা পড়ে থাকতে দেখা যায়। যুবক প্রথমে বলার চেষ্টা করে সেখানে নিজস্ব জিনিসপত্র রয়েছে। কিন্তু বস্তায় হাত দিয়েই নরম কিছু অনুভব করেন পুলিশকর্মীরা। তার উপর বস্তাটি ভিজে দেখেও তাদের সন্দেহ হয়। তড়িঘড়ি সেটি খুলতেই বেরিয়ে পড়ে শিশুকন্যার দেহ। অভিযুক্ত খুনের স্বীকার করে। বাবা হওয়ার আশায় তান্ত্রিকের নির্দেশে সে ওই শিশুকে খুন করেছে বলেই জানায়। অভিযুক্ত তান্ত্রিকের খোঁজ শুরু করেছে পুলিশ।
নাবালিকার দেহ উদ্ধারের পরেই তুমুল উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে গোটা এলাকায়। পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগে সোচ্চার হন বাসিন্দারা। এরপরেই একদল বাসিন্দা ধেয়ে যান তিলজলা থানায়। থানা ঘেরাও করে শুরু হয় ইট-বৃষ্টি। পরিস্থিতি সামাল দিতে বাইরে বেরিয়ে লাঠিচার্জ শুরু করে পুলিশ। তবে শুরুতে বিক্ষোভকারীদের সামাল দেওয়া কার্যত কঠিন হড়ে পড়ে পুলিশের কাছে। পরে বিশাল পুলিশবাহিনী আসে ঘটনাস্থলে। ততক্ষণে অবশ্য ইটের আঘাতে বেশ কয়েকজন পুলিশকর্মী জখম হয়েছেন। শেষমেশ লাঠিচার্জ করে এলাকা ফাঁকা করে দেয় পুলিশ।
যে ফ্ল্যাটটি থেকে নাবালিকার দেহ উদ্ধার হয়েছে তার মালিক অশোক কুমারকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। অন্যদিকে, থানায় হামলার ঘটনাতেও স্থানীয় বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে বলেও পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে। রবিবার রাতের এই ঘটনার পর সোমবার সকালেও গোটা এলাকার পরিস্থিতি বেশ থমথমে।
আরও পড়ুন: Kolkata Traffic: একাধিক রাস্তায় যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ, সোম-মঙ্গলে কোন পথে যাবেন?