মিলিয়ে যাচ্ছে শরীরের হলদে-কালো ডোরাকাটা কালো দাগ? বদলাচ্ছে পরিচিত রয়্যাল বেঙ্গল টাইগাররের গায়ের রং? সম্প্রতি বিরল কালো এবং ডোরাকাটা সোনালি দাগের বাঘের দেখা মিলেছে বলে রিপোর্ট। ওড়িশার সিমলিপালে ব্যাঘ্রকুলের ক্রমশ এই কৃষ্ণবর্ণ প্রাপ্তিতে কপালে মেঘ জমেছে তামাম বাঘ বিশেজ্ঞদের।
বনদপ্তরের ট্র্যাপ ক্যামেরায় ধরা পড়েছে এই বাঘের ছবি। বিরল দর্শন তো বটেই। তা দেখে সামান্য গবেষণার সুযোগ মিলেছে। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, ওই বাঘ আর কেউ নয়। একেবারে রয়্যাল বেঙ্গলেরই জ্ঞাতি। জিনের গঠনের কারণে তার পিঠ অমন আলাদা। মিউটেশনের জেরে নতুন রূপ ধারণ করেছে। এর পোশাকি নাম সিউডো-মেলানিস্টিক টাইগার (pseudo-melanistic tiger)। সিমলিপালের জঙ্গলে এদের অস্তিত্ব টের পাওয়া গিয়েছিল সেই ১৯৯৩ সালে। সেবার এক সাঁওতাল কিশোরকে টেনে নিয়ে গিয়েছিল। ২০০৭ পর্যন্ত তারা আর ছিল না সেখানে। এর পর ধীরে ধীরে ফের ফিরতে শুরু করে। কিন্তু এই প্রথম ট্র্যাপ ক্যামেরায় দেখা গেল অদ্ভুতদর্শন ব্যাঘ্র।
NSBC-র মলিকুলার ইকোলজিস্ট উমা রামকৃষ্ণণ বলেন, ‘এই ধরণের বাঘের শরীরে দু’রকমের জিন থাকে। বিচ্ছিন্নভাবে থাকার কারণে এদের বংশবিস্তারও ঘটছে দ্রুত।’ ওডিশার মুখ্য বনসংরক্ষক এবং ওয়াইল্ডলাইফ ওয়ার্ডেন সুশান্ত নন্দ বলেন, ‘২০১৪ সালে সিমলিপালের ছ’জন পুরুষ বাঘের মধ্যে একটি ছিল আবছা কালো রংয়ের। ২০১৮-১৯ সালের মধ্যে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১২-তে। ২০২৩-২৪ সালে তাঁ পৌঁছে গিয়েছে ১৬-তে।’
প্রাণিবিজ্ঞানী টিএস মাথুর বলছেন, ‘‘এ এক জিনগত সমস্যা। এর ফলে প্রাণীদের চামড়া কিংবা রোমে কালো রঙের প্রাচুর্য বেড়ে গায়ের আদি রঙটাকেই আড়াল করে দেয়। বাঘের হলুদ ডোরা এ ভাবেই কালোর আড়ালে হারিয়ে যাচ্ছে। ব্ল্যাক প্যান্থারের ক্ষেত্রেও কারণটা একই। তাদের হলুদ বর্ণের উপরে চাকা চাকা দাগ কালোর আস্তরণে ঢেকে যায়।’’ সেই সঙ্গে তিনি ধরিয়ে দেন, এর বিপরীত ক্ষেত্রে চামড়ার রং অত্যধিক সাদা হয়ে যাওয়া অ্যালবিনো বা সাদা বাঘের উৎপত্তির কারণ।
ওড়িশা সরকার পর্যটক টানতে গত কয়েক বছর ধরে সিমলিপালের কালো বাঘের ঢালাও প্রচারে নেমেছে তারা। শুরু হয়েছে ‘কালো বাঘ সাফারি’। এই কালোবাঘের জঙ্গল সাফারির সুযোগ নিতে গেলে আগে থেকে ওড়িশা বনদফতের ওয়েবসাইটে গিয়ে যোগাযোগ করতে হবে। যাঁরা নতুন কিছুর সন্ধান করছেন তাঁদের জন্য সেরা ডেস্টিনেশন হতে চলেছে এই ব্ল্যাক টাইগার জঙ্গল সাফারি।