শাল, সেগুন, অর্জুন, মহুয়া। এক কথায় অরণ্য সুন্দরী। বান্দোয়ানের দুয়ারসিনির তাই অরণ্য সুন্দরী নাম যেন মানানসই। যার বিশেষত্ব ঘন জঙ্গল। এখানকার দুপাশে চোখ জুড়ানো সবুজকে পিছনে ফেলে লং ড্রাইভে যেতে পছন্দ করেন অনেকেই।
জায়গাটি একেবারে বাংলা ও ঝাড়খন্ডের সীমান্তে। সাতগুড়ুম নামের এক বন্য নদীর ধারে। ছোট ছোট পাহাড়ের মাঝে রয়েছে ছোট ছোট কয়েকটি কটেজ। সেখানেই পাখ-পাখালি দেখতে দেখতে নিরিবিলিতে কাটিয়ে দেওয়া যায় সময়। আদিবাসী গ্রামও ঘুরে দেখতে পারেন। ভাগ্য ভাল থাকলে বনে নজরে পড়তে পারে বিভিন্ন বন্যপ্রাণী। এই জঙ্গলে বন্য শূকর, ভল্লুক, হরিণের, হাতির মতো বিভিন্ন জন্তু দেখতে পাওয়া যায়। কাছেই রয়েছে একটি হাতি চলাচলের পথ বা ‘এলিফ্যান্ট করিডর’, যা ঝাড়গ্রাম থেকে দুমলা রেঞ্জ পর্যন্ত বিস্তৃত। জায়গাটির নাম হাতিবাড়ি।
দুয়ারসিনি থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে রয়েছে ভালপাহাড়। এই ভালপাহাড় থেকে সবুজ জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে আঁকাবাকা রাঙামাটির পথ দেখা এক অন্য রকম অভিজ্ঞতা। হাতে সময় থাকলে অনেকে দুয়ারসিনি থেকে ঘাটশিলা চলে যান। হাতে সময় আর সঙ্গে গাড়ি থাকলে ঘুরে দেখতে পারেন বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ি ‘গৌরীকুঞ্জ’, পঞ্চপাণ্ডব টিলা বুরুডি লেক, ধারাগিরি ফল্স।
আরও পড়ুন: Homestay: পুরসভা দেবে ১ লক্ষ টাকা, কলকাতায় কীভাবে হোমস্টে চালু করবেন জানুন
কী ভাবে যাবেন?
রোড ট্রিপ যারা করবেন তারা না হয় গুগল ম্যাপ দেখে নেবেন। ট্রেনের কথাটাই বিস্তারে বলি। ঘাটশিলা যাওয়ার জন্য রয়েছে একগাদা ট্রেন। হাওড়া-বারবিল জনশতাব্দী এক্সপ্রেস সকাল ৬:২৫-এ হাওড়া থেকে ছেড়ে ঘাটশিলা পৌঁছোয় সকাল সওয়া ৯.১৫-তে। ইস্পাত এক্সপ্রেস সকাল ৬:৫৫-এয় হাওড়া থেকে ছেড়ে ঘাটশিলা পৌঁছোয় সকাল ৯:৫০-এ। এই দুটো ট্রেন আদর্শ। রয়েছে লালমাটি এক্সপ্রেসও। ট্রেন ছাড়ে প্রতি মঙ্গল আর শনিবার। সকাল সাড়ে আটটায় হাওড়া থেকে রওয়ানা দেয় আর ঘাটশিলা পৌঁছোয় সকাল সাড়ে ১১টায়।
তারপর ধরুন অটো। দেখবেন অটোস্ট্যান্ডে রেট চার্ট লাগানোই আছে। তাই ঠকার কোনও চান্সই নেই। চাইলে যে অটো করে হোটেল পৌঁছলেন তাকেই বলে দিন পরেরদিন সকালে যেন আপনাকে নিয়ে যায় আশপাশ ঘুরে দেখতে। আর সড়কপথে যেতে চাইলে, কলকাতা থেকে বান্দোয়ান, বান্দোয়ান থেকে ছোট গাড়ি বা ট্রেকারে দুয়ারসিনি। কেউ চাইলে ট্রেনে করে পুরুলিয়া স্টেশনে নেমে সেখান থেকে বান্দোয়ান হয়েও পৌঁছে যেতে পারেন।
কোথায় থাকবেন?
দুয়ারসিনিতে রাজ্য সরকারের বন দফতরের বাংলো রয়েছে। সুবোধ মল্লিক স্কোয়ারে অফিস। তবে এখন অনলাইনে ঘর ভাড়া করা যায়। আধুনিক সব বন্দোবস্ত রয়েছে সেখানে। যদি বন্ধুরা দল বেঁধে যান, তবে একসঙ্গে চার জন ডরমেটরিতে থাকতে পারেন। ভাড়া কম পড়বে। খাবারের ব্যবস্থাও আছে এখানে। আদিবাসী গ্রামে ব্যক্তিগত উদ্যোগে কিছু থাকার জায়গার বন্দোবস্ত হয়েছে এখন। আগে থেকে যোগাযোগ করে সেখানে থাকতে পারেন।
আরও পড়ুন: Ganga Vilas Cruise: থাকবে জিম-স্পা, পথে পড়বে বাংলাদেশ, কেমন হবে ভারতের ‘গঙ্গা বিলাস’