ব্যাপকভাবে বন জঙ্গল কেটে ফেলার প্রভাব যে দারুন ভাবে আমাদের পরিবেশে পড়ছে- একথা আমরা সকলেই জানি। কিন্তু পরিবেশ রক্ষা করার মত কাজ আমাদের মত হাতে গোনা কয়েকজনই করে থাকেন। সেই হাতে গোনা কয়েকজনজনের মধ্যে একজন হলেন ৭৪ বছরের আব্দুল করিম।
কেরালার কাসারগোড এলাকার বাসিন্দা আব্দুল করিম গত কয়েক দশক ধরে একা ২৮একর জমির উপর গড়ে তুলেছেন একটি মিনি ফরেস্ট। তাতে এখন বাস অসংখ্য প্রজাতির পাখি, বন্য প্রাণী এবং ঔষধি গাছপালার। করিম, ৭০ এর দশকে গালফ অঞ্চলে কাজ করতে যা। সেখানে তিনি সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত শেখ জায়েদ বিন সুলতান আল নাহিয়ানের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন, যিনি গাছ লাগানোর মাধ্যমে মরুভূমিকে সবুজ করার জন্য একটি কর্মসূচি শুরু করেছিলেন। ১৯৭৭ সালে করিম যখন দেশে ফিরে আসেন, তখন তিনি তার নিজের শহরের একটি পাহাড়ের ধারে ৩৭৫০ টাকায় ৫ একর অনুর্বর জমি কিনেছিলেন। পরে আস্তে আস্তে সেই বন ২৮ একর বিস্তৃত হয়।
করিম জানিয়েছেন, “ওরা যে দাম চেয়েছে আমি সেই দামেই জমি কিনেছি। লোকে আমাকে খামখেয়ালী বলত; ওরা আমাকে নিয়ে হাসাহাসি করত, কিন্তু আমি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলাম। কাজটা অনেক কঠিন ছিল. আমি একটি পাথুরে অনুর্বর জমি কিনেছিলাম যেখানে কোনও গাছপালা জন্মানোর কোনও আশা ছিল না। একটি পরিত্যক্ত কুয়ো ছাড়া ওই জমিতে আর কিছুই ছিল না। আমার চারাগুলো লম্বা হচ্ছে, সুস্থ ভাবে বেড়ে উঠছে, পরিণত গাছ হচ্ছে -এই দৃশ দেখতে আমার বেশ কয়েক বছর লেগেছে।”
আরও পড়ুন: সর্বকালের শ্রেষ্ঠ চিন্তাবিদ, ইবনে সিনার বিস্ময়কর জীবন অবাক করবে আপনাকে
সেই সময় কাসারগোড রাজ্যের উষ্ণতম স্থানগুলির মধ্যে একটি পরিগণিত হত। গ্রীষ্মকালে জলের অভাব ছিল মারাত্মক। বছরে গড়ে মাত্র ৩,৩০০ মিমি বৃষ্টিপাত হত।যার কারণে এলাকায় খরা দেখা দিত। করিম গাছ লাগানোর পর থেকে ছোট ছোট জলের ধারা উঠে আস্তে দেখা যায়। এখন করিমের বন এখন শত শত লিটার জল উৎপন্ন করে, গ্রীষ্মকালে একটি পুরো গ্রামকে তীব্র খরার হাত থেকে বাঁচায়। অনেক গ্রামবাসী এবং পরিবার সেচ এবং গৃহস্থালির উদ্দেশ্যে করিমের জমি থেকে বিনামূল্যে জল নেয়।
কারিম জানিয়েছেন “যদি আমি এক লিটারের জন্য একটি পয়সাও নিই তাহলে আমি সহজেই বছরে ৫ কোটি টাকারও বেশি আয় করতে পারব। আমি টাকা চাই না। আল্লাহ সবসময়ের মতই আমার চাহিদা পূরণ করবেন। আমার জীবনে অন্য কোন বিষয়ে আগ্রহ বা চাহিদা নেই। আমি ক্রিকেট বা সিনেমা দেখি না।আমি মনে করি গাছপালা জীবন্ত এবং তারা শ্বাস নেয় যেমন আমরা নিই। এই পৃথিবীতে আমাদের মতই গাছপালা, পশুপাখিদের বেঁচে থাকার অধিকার আছে।”
১৯৮৩ সালে, ওই জঙ্গলের মধ্যেই একটি বাড়ি তৈরি করেন করিম আর পরিবার নিয়ে সেখানেই বাস করতে থাকেন। এই প্রসঙ্গে, গর্বিত করিম বলেন, “এটি আমার রাজ্য এবং এর বদলে আমাকে ওয়াশিংটন ডিসি দেওয়া হলেও আমি নেব না।”
নিজের এই কাজের জন্য তিনি বহু পুরস্কার পেয়েছেন। ২০০৫ সালে কেরালা সরকার ক্লাস সিক্সের মালায়ালাম পাঠ্যপুস্তকের জন্য করিম এবং তার কাজের উপর একটি অধ্যায় যুক্ত করে। সিবিএসই আসন্ন শিক্ষাবর্ষে ক্লাস ফোরের সিলেবাসে একটি অধ্যায় হিসাবে করিমের বনকে অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।বনায়নে তার অসামান্য অবদানের জন্য করিমকে ১৯৯৮ সালে কেরালা ফরেস্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট দ্বারাও সম্মানিত করা হয়েছিল।
আরও পড়ুন: বিসমিল্লাহ ও বেনারস- এক এবং অবিচ্ছেদ্য! ১০৬ তম জন্মদিনে শ্রদ্ধার্ঘ্য