Bangladesh Crisis: Why the Diplomatic Landscape of the Indian Subcontinent is Shifting with Dhaka-Islamabad Relations

Bangladesh Crisis: কাছাকাছি ঢাকা-ইসলামাবাদ, কী কারণে বদলে গেল ভারতীয় উপমহাদেশের কূটনৈতিক সমীকরণ

আবু মানহা

বিদ্বেষে দল চলে, দেশ চলেনা। এই সহজ সত্যতা বুঝতে কেন্দ্রের সরকার বাহাদুরের অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। ততদিনে ভারতীয় উপমহাদেশে অনেক বড় কূটনৈতিক পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে। আরএসএসের আদর্শকে বাস্তব রূপ দিতে গিয়ে কেন্দ্রের গেরুয়া শাসকরা দেশের কূটনৈতিক ডিএনএ বদলে দিয়েছেন(Diplomatic changes in South Asia)। এর ফল যা হওয়ার তাই হচ্ছে আজ। দিনে দিনে নির্বান্ধব হয়ে পড়েছে ভারত।

খ্যাতনামা ঐতিহাসিক রামচন্দ্র গুহ ২৪ আগস্ট ‘দ্য টেলিগ্রাফ’ পত্রিকায় একটি নিবন্ধ লিখেছিলেন। তাতে তিনি লিখেছিলেন, ‘ভারত এখন বিশ্বগুরুও নয়, বিশ্বমিত্রও নয়।’ সত্যিই তাই, সেই অর্থে এই মুহূর্তে ভারতের কোনো পড়শী মিত্র রাষ্ট্র নেই। যে রাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের দীর্ঘদিনের সুসম্পর্ক ছিল, যে রাষ্ট্রের জন্মের পিছনে ভারতের প্রত্যক্ষ মদত রয়েছে সেই রাষ্ট্রও এখন আর ভারত-মিত্র নয়। সেই রাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী যদিও আজ ভারতে আশ্রিত। অনেকে বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর এই পলায়নকে ভারতের সবথেকে বড় কূটনৈতিক পরাজয় বলে মনে করছেন। কেবল কেন্দ্রের কট্টর গেরুয়া শাসক দল নয়, এই ঘটনায় প্রশ্ন উঠেছে দেশের রিসার্চ এন্ড এনালাইসিস উইং (RAW)এর দক্ষতা ও ভূমিকা নিয়েও।

কেবলমাত্র আরএসএসের আদর্শ যে দেশের কূটনীতি হতে পারে না এ কথা কেন্দ্রের সরকার বাহাদুর ও তার প্রধানমন্ত্রীকে বোঝায় কার সাধ্য! গুজরাট মডেল যে দেশের মডেল হতে পারে না, এ কথাটা তারা মেনে নিতে পারেননি। ফলে এক দশক আগে যে নতুন রাজনৈতিক ঘরানা দেশে তৈরি হয়েছে গোবলয়ে তার রাজনৈতিক সাফল্য দেখে তারা উল্লসিত হয়েছেন। আর এই বিদ্বেষের রাজনৈতিক পন্থাকেই সফল কূটনৈতিক পন্থা বলে মনে করেছেন।
প্রচার মাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করে দেশের মাঠ দখল করা যায়, কিন্তু আন্তর্জাতিক দুনিয়া নয়। কূটনৈতিকভাবে যে দেশ যত পিছিয়ে সেই দেশের পরিণতি তত খারাপ হয়। মনে রাখতে হবে বিশ্বগুরু স্লোগান দিতে হলে তার উপযুক্তও হয়ে উঠতে হবে। সংখ্যাগরিষ্ঠ সুপ্রিমেসি প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে আজকের কেন্দ্রের সরকার বাহাদুর মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর ভবিষ্যৎবাণীকে সফল করে দিয়েছেন। জিন্নাহ বলেছিলেন, ‘মুসলমানরা ভারতবর্ষে হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠের মধ্যে কখনও শান্তিতে বসবাস করতে পারবে না। গেরুয়া দল ও তাদের নেতারা জিন্নাহ’র ভবিষৎবাণীকে সত্য প্রমাণ করে ছেড়েছেন ।’

আম্বেদকর বলেছিলেন, ‘সংখ্যালঘু গোষ্ঠী একটি বিস্ফোরক শক্তি। যদি এটি বিস্ফোরিত হয়, পুরো জাতি ধ্বংস হয়ে যাবে।’ উন্মত্ত গেরুয়া দলগুলি সংখ্যাগুরু সুপ্রিমেসি প্রতিষ্ঠা করতে চায়। এদেশে চিরদিনই সংখ্যাগুরুরাই প্রভাবশালী। শুধু এদেশে নয়, এটি সব দেশেরই ছবি। তা বিশ্বের সব দেশের সংখ্যালঘুরা মেনে নেয়। আপোস করে। সংখ্যাগুরু সংস্কৃতি গ্রহণ করে বহু সময় অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার তাগিদে। কিন্তু তারপরও কেবল সংখ্যাগুরু ভোটব্যাঙ্ক সৃষ্টির তাগিদে গুজরাটি প্রচারকের নেতৃত্বে মুসলিমদের সবক শেখানোর উদ্যোগ নেওয়া হল দেশজুড়ে। তৈরি করা হল ‘ফিয়ার সাইকোসিস’। আর তা রাজনৈতিকভাবে কেন্দ্রের শাসক দলকে ব্যাপক মাইলেজ দিল। এই সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে তারা সংখ্যালঘুদের ওপর জুলুমকেই প্রচারের হাতিয়ার বানিয়ে ফেলল। ফলে উন্নয়নের ওপর তেমন জোর দিতে হল না। কর্মসংস্থান করতে হল না। কালো টাকা নিয়ে কোনো পদক্ষেপ করতে হল না। কার্যত কোনো কাজ না করে কেবল হিন্দু সুপ্রিমেসির ‘মাস্কিউলার এক্সারসাইজ’ করে এক দশক সহজেই ক্ষমতা ধরে রাখা গেল।

যখন দিনের পর দিন এদেশের সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন চলেছে তখন তার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া যে ভারতীয় উপমহাদেশের অন্য দেশে তথা আন্তর্জাতিক মহলে পড়তে পারে তার সাধারণ ধারণাটুকু কেন্দ্রের শাসকদলের কাছে ছিল না। তারা কেবলমাত্র দিল্লি ও রাজ্য দখলকে তাদের একমাত্র কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য বলে ধরে নিয়েছিল। সেই সময় ট্রাম্প প্রথম প্রেসিডেন্ট হন। তিনিও মুসলিমদের বিরুদ্ধে কুকথার বন্যা বইয়ে দিয়েছিলেন। স্বাভাবিকভাবেই গেরুয়া ব্রিগেডের নয়নের মণি হয়ে উঠেছিলেন তিনি। মনে রাখতে হবে ট্রাম্প মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিদেশে নীতি প্রেসিডেন্ট বদলের সঙ্গে সঙ্গে বদলে যায় না। তাছাড়া এবার ট্রাম্প মুলসিম ভোট পেয়ে ক্ষমতায় এসেছেন। ফলে এক দশক আগের পরিস্থিতি আর নেই। একথা নয়া দিল্লির গেরুয়া শাসকরা বুঝতে চাইছেন না। এবার ট্রাম্পের জয়ে আলাদা কোনো উপকার এরা পাবে বলে মনে হয় না। ট্রাম্প চাইবেন ভারতকে দিয়ে চিনকে টাইট দিতে। তাতে ভারতের কোনো লাভ হবে না। নয়াদিল্লি সে চেষ্টা করলে তাতে গোদের ওপর বিষফোঁড়া হবে। ফলে আগেভাগেই বেজিংয়ের সঙ্গে সম্পর্ক মেরামতি শুরু করেছে নয়াদিল্লি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অর্থনীতি দাঁড়িয়ে রয়েছে অস্ত্র বিক্রির ওপর। বিশ্বের অস্ত্রবাজারের ৫০ শতাংশই এখনও ওয়াশিংটনের দখলে! তাই যুদ্ধ তাদের কাছে বিনিয়োগ। ফলে ট্রাম্প তরি পার করে দেবে ভাবলে গেরুয়া শিবির ভুল করবে।

কেন্দ্রের গেরুয়া শাসকরা বিচারবিভাগের একাংশকে পাশে নিয়ে নিয়ম করে এদেশের সংখ্যালঘুদের ওপর জুলুম করে যাচ্ছে। এদেশের যারা সংখ্যালঘু, পড়শী বাংলাদেশে তারাই সংখ্যাগুরু। সেখানকার জনগণ বহু দিন ধরেই বিষয়টি নিয়ে বেজায় অসন্তুষ্ট ছিলেন। কিন্তু তদানীন্তন বাংলাদেশী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরিস্থিতি সামাল দিচ্ছিলেন দক্ষ হাতে। ফলে তিনি পাওয়ারে থাকুন এটাই যে নয়াদিল্লি চাইবে তা নিয়ে বিস্ময়ের কোনো অবকাশ ছিল না। হাসিনার মন্ত্রীরাও প্রকাশ্যে ভারতের ওপর তাদের রাজনৈতিক নির্ভরশীলতার কথা জনসভায় উচ্চারণ করেছিলেন গদগদভাবে। ফলে বাংলাদেশের আজকের প্রজন্ম সেই বাংলাদেশকে দেখতে পাচ্ছিল না, যে বাংলাদেশের কথা তারা শুনে বড় হয়েছে। তাদের কাছে বাংলাদেশে ক্রমশ ভারতের অলিখিত কলোনি হয়ে উঠছিল। ফলে নয়া প্রজন্মের মধ্যে ক্ষোভ দিন দিন প্রবল হচ্ছিল। আর এই পারে সংখ্যালঘু মুসলিমদের ওপর জুলুমের মাত্রাও বাড়ছিল দিন দিন। পাল্টা একটা সবক শেখানোর ইচ্ছা সম্ভত বাংলাদেশের সংখ্যাগুরুদের মধ্যে তৈরি হচ্ছিল। তারা একটা অভিমুখ খুঁজছিল। তাদের সেই পথ দেখিয়ে দেন হাসিনা নিজেই। একথা অস্বীকারের উপায় নেই যে, আজ বাংলাদেশে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তার দায় বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এবং ভারতের কেন্দ্রীয় শাসক দল অস্বীকার করতে পারে না। ক্ষমতায় পাকাপাকি থেকে যাওয়ার নির্লজ্জ কামনাকে বাস্তবায়িত করতে তারা এই কাজ করেছে। তাদের কাঁচা কূটনীতিই পাকিস্তানকে ও বাংলাদেশকে ফের একবার কাছাকাছি আসার সুযোগ করে দিয়েছে(Dhaka Islamabad proximity)। পাক জাহাজ এসেছে বাংলাদেশে। বাংলাদেশে নিযুক্ত পাক হাই কমিশনার সৈয়দ আহমেদ মারুফ জানিয়েছেন, সরাসরি জাহাজ পরিষেবা পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য এবং ব্যবসায়িক সম্পর্ক বাড়ানোর পথে একটি বড় পদক্ষেপ। ১৯৭১ সালে পাক সেনার অত্যাচার, গণধর্ষণ, হত্যালীলার কথা বারে বারে প্রকাশ্যেই বলেছে ঢাকা। কিন্তু গত ৫ আগস্ট গণবিক্ষোভের জেরে হাসিনার প্রধানমন্ত্রী পদে ইস্তফা এবং ভারতে চলে আসার পরে অনেক কাছাকাছি এসেছে ইসলামাবাদ-ঢাকা। এর ব্যর্থতা কি নয়া দিল্লির নয়? প্রশ্ন তুলেছেন বহু কূটনীতিক।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে আশ্রয় নেওয়ার পর থেকে ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমে বাংলাদেশের বিভিন্ন কার্যকলাপ নিয়ে নানা প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে । বাংলাদেশের দাবি সেই প্রতিবেদনগুলির অধিকাংশতেই দেখানোর চেষ্টা হচ্ছে যে সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপর বাংলাদেশের কী নিদারুন নির্যাতন চলছে । কিন্তু ঘটনাটা সর্বাংশে সত্য নয় বলে দাবি বাংলাদেশের। তাদের দাবি বাংলাদেশে যা ঘটছে, তা তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এখানে নয়াদিল্লি নাক গলাতে পারে না। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ দেওয়া এক পোস্টে খামেনি বলেছিলেন, ‘আমরা নিজেদের মুসলমান মনে করতে পারি না, যদি মিয়ানমার, গাজা বা ভারতের মুসলমানদের কষ্টের ব্যাপারে উদাসীন থাকি।’ এর জবাবে এক বিবৃতিতে ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রণালয় জোর গলায় জানিয়েছিল, ‘আমরা ইরানের সর্বোচ্চ নেতার পক্ষ থেকে ভারতের সংখ্যালঘুদের বিষয়ে দেওয়া মন্তব্যকে দৃঢ়ভাবে নিন্দা জানাই। এই মন্তব্যগুলো বিভ্রান্তিকর ও অগ্রহণযোগ্য।’ দেশের সংখ্যালঘুদের ওপর জুলুম নিয়ে কোনো বিদেশী রাষ্ট্র প্রতিক্রিয়া দিলেই ভারত বুঝিয়ে দিয়েছে এটি আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। অন্য কেউ এতে নাক গলাতে পারে না। এখন বাংলাদেশে সেই একই কথা ফিরিয়ে দিচ্ছে নয়াদিল্লিকে। তাদের বক্তব্য হল চিন্ময় প্রভুর বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতার মামলা দায়ের হয়েছে । সুতরাং বিষয়টিকে সংখ্যালঘু হিসেবে দেখা একেবারেই উচিত নয়। প্রসঙ্গত, গেরুয়া জমানায় এরকম একাধিক ঘটনা রয়েছে। উমর খালিদ এখনো জেল জেলবন্দি। জেলে রয়েছেন শারজিল ইমাম। জুবের ও সিদ্দিক কাপ্পানের ঘটনা গোটা বিশ্ব জানে। কিন্তু তাদের বিষয়টিকে ধর্মীয় কোণ থেকে দেখা হয়নি, তাহলেও চিন্ময় ঘটনাকে দেখা হচ্ছে কেন। প্রশ্ন তুলেছেন বাংলাদেশের বহু সাংবাদিক।

মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের তদানীন্তন প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় বলেছিলেন, তিনি এ থেকে জেড পর্যন্ত প্রত্যেককেই জামিন দিয়েছেন। তাঁর মুখ দিয়ে অর্ণব এবং জুবেরের এর নাম উঠে এসেছিল, কিন্তু উমর খালিদের কথা উচ্চারণ করেননি তিনি। প্রায় চার বছর ধরে তিনি বিনা বিচারে জেলবন্দি। যদি কারো বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা দায়ের হয় তাহলে সেই মামলা নিয়ে প্রতিবেশী দেশ আলাদা করে অভিযোগ করতে পারে না। যখন আফজাল গুরুর ফাঁসি হয়েছিল, যখন তাকে অভিযুক্ত করা হয়েছিল, তখন তার স্বপক্ষে মুসলিমরা পথে নেমে আন্দোলন করেননি । কারণ তার বিরুদ্ধে দেশদ্রোহীতার মামলা ছিল। তিনি দেশদ্রোহী ছিলেন, নাকি ছিলেন না, সেটা ভিন্ন কথা । এখানে যুক্তি হল মুসলিম বলে তার হয়ে অন্য মুসলিমরা পথে নামেননি। তাই একই যুক্তি চিন্ময় প্রভুর ক্ষেত্রেও খাটে। আইনত, তিনি দেশদ্রোহী কিনা তা ঠিক করবে সেদেশের আদালত। তিনি হিন্দু তাই তাকে দেশদ্রোহী বানানো হয়েছে এটাই যদি যুক্তি হয়, তবে নয়াদিল্লিকেও আত্মসমীক্ষা করতে হবে। অনেকের অভিযোগ আজকে বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের উপর যে নির্যাতন হচ্ছে তার জন্য সরাসরি দায়ী এদেশের কট্টর গেরুয়া রাজনৈতিক মতাদর্শ। এই মতাদর্শ কেবলমাত্র সংখ্যাগরিষ্ঠ সুপ্রিমেসি প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে পড়শী দেশের সংখ্যালঘুদের সর্বনাশ করেছে।তাই গেরুয়া শাসকরা আলাদা করে কোন নীতি ও আদর্শের কথা কাউকে শোনাতে গেলে তা অত্যন্ত কর্কশ শোনাচ্ছে ।

গেরুয়া শাসকরা বিচার ব্যবস্থাকেও নিজেদের নিয়ন্ত্রণে আনতে অনেকাংশেই সফল হয়েছে। যার ফলে গত ১০ বছরে বিচারের বাণী প্রকাশ্যে বুক চাপড়ে কেঁদেছে। বর্তমানে দেশের বিচার ব্যবস্থা যে জায়গায় পৌঁছেছে তা নিয়ে প্রকাশ্যে হাউ হাউ করে কেঁদেছেন খ্যাতনামা বর্ষীয়ান আইনজীবী দুষ্মন্ত দাভে । কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন, একজন হিন্দু ব্রাহ্মণ হয়েও তিনি প্রতিদিন অনুভব করেন এদেশের মুসলিমরা কি নিদারুণ যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে দেশের সংখ্যালঘুদের যেতে হচ্ছে। সেই যন্ত্রণা থেকে তাদের পরিত্রান দেওয়ার কেউ নেই । শেষ ভরসা তারা রাখতেন সুপ্রিম কোর্টের উপর । সেখানেও ইনসাফ মিলছে না।

ভারতের মতো এত বৈচিত্র্যপূর্ণ দেশে এমন নির্যাতনের শিকার হতে হয়, তাহলে এমন ঘটনা পড়শি দেশে যে ঘটতেই পারে তা আন্দাজ করা উচিত ছিল গেরুয়ায় দলের। তাদের অযোগ্যতা ও অদক্ষতার কারণে আজ বাংলাদেশে অত্যন্ত সংবেদনশীল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে দিন কাটাতে হচ্ছে প্রায় থেকে ২ কোটি হিন্দুকে । একথা অস্বীকারের উপায় নেই যে প্রতিটি দেশে সংখ্যালঘুদের দুই ধরনের সংকটের মধ্য দিয়ে যেতে হয় যার একটি ইমোশনাল ক্রাইসিস অন্যটি ফিজিক্যাল ক্রাইসিস । মনে রাখতে হবে সংখ্যালঘু এবং সংখ্যাগুরু কোন ধ্রুবক শব্দ নয় । একটি ভূখণ্ডের সংখ্যাগুরুরা অন্য একটি ভূখণ্ডে সংখ্যালঘু হতে পারেন। ঠিক তেমনি অন্য ভূখণ্ডের সংখ্যালঘুরা ভিন্ন একটি ভূখণ্ডে সংখ্যাগুরু হতে পারেন। নারী পরিচালিত অফিসে পুরুষ সংখ্যালঘু হতে পারে, গুজরাটি পাড়ায় একটি বাঙালি পরিবার থাকলে তিনি নিজেকে সংখ্যালঘু মনে করতে পারেন। ব্রাহ্মণ অধ্যুষিত এলাকায় কোনও শুদ্র নিজেকে সংখ্যালঘু মনে করতে পারেন । ট্রান্সজেন্ডার পরিচালিত কোন অফিসে একজন নারী নিজেকে সংখ্যালঘু মনে করতে পারেন । সুতরাং সংখ্যালঘু কিংবা সংখ্যাগুরু কোন ও ধরা বাধা নিয়মের মধ্যে বাঁধা নেই। দুঃখের বিষয় হল, এদেশের লোকজন সেটা বেশিরভাগ সময় ভুলে থাকেন । এই দম্ভ ও ঔদ্ধত্বে তারা ভুলে যান যে আমরা অন্য ভূখন্ডেও থাকতে পারি, সেখানে আমরা সংখ্যাগুরু নাও হতে পারি। কেন্দ্রের শাসক দল গোটা দেশে যে কাণ্ড দিনের পর দিন করে চলেছে তারই খেসার দিতে হচ্ছে বিদেশের ভূখণ্ডে থাকা হিন্দুদের । সুতরাং বাংলাদেশে হিন্দুদের উপর যদি কোন নির্যাতন হয়ে থাকে তার দায় এদেশের গেরুয়া শাসকরা অস্বীকার করতে পারেন না । তাদের বোঝা উচিত ছিল যে নির্যাতন তারা এদেশের সংখ্যালঘুদের উপর দিনের পর দিন চালাচ্ছেন তা একদিন ব্যাকফায়ার হবেই । কোন সরকার তাদের হয়ে দীর্ঘদিন কাজ করতে পারবে না । শেষ পর্যন্ত সেটাই হলো । অনেকে বলছেন, গোটা পরিস্থিতির জন্য কৃতিত্ব বা দায় সবটাই নেয়া উচিত বিজেপির সবথেকে প্রভাবশালী নেতার।

তবে এত কিছুর পরও কট্টর গেরুয়া দল তাদের বিদেশ নীতি থেকে সরে আসবে বলে মনে হয় না। বরং এবার তারা বাংলাদেশের হিন্দুদের ওপর জুলুমের কথা শুনিয়ে এদেশের হিন্দুভোটকে ফের একবার এককাট্টা করার চেষ্টা চালাবে। তাদের দুর্দশা ও জুলুমকে নিজেদের রাজনৈতিক ফায়দা হিসাবে দেখবে। এর আরও একটি কারণ রয়েছে। এই কারণটি হল, বাংলাদেশে যা হচ্ছে তার দায় নিতে হচ্ছে বাংলাভাষী হিন্দুদের। গোবলয়ের নেতারা তাদের খাঁটি দেশপ্রেমী মনে করে না। ফলে ফের একবার দেশের মাটিতে বিদ্বেষ রাজনীতির আঁচে রুটি সেঁকে নিতে অসুবিধা হবে না কট্রর গেরুয়াবাদীদের।