মেহেনাজ পারভিন
বেগম আজিজা ফাতিমা ইমাম ১৯২৪ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি পাটনায় জন্মগ্রহণ করেন। পরবর্তী কালে তিনি ‘আজিজা ইমাম’ নামে পরিচিতি লাভ করেন। তাঁর বাবার নাম ডঃ ওয়ালী আহমেদ, যিনি পাটনার প্রিন্স অফ ওয়েলস মেডিকেল কলেজে শিক্ষকতা করতেন। আর মায়ের নাম খাদিজা আহমেদ। ছোটবেলাতেই, আজিজা ইমামকে তাঁর মাসি আনিস ফাতিমা ইমাম দত্তক নিয়েছিলেন। আনিস ইমাম ১৯৩৭ সালে বিহার আইন পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন।
আজিজা ইমামের মেসো ছিলেন স্যার আলী ইমাম। যার বিহার রাজ্য প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। তিনি ১৯০৯ সালে বেঙ্গল লেজিসলেটিভ কাউন্সিলের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯১৭ সালে তিনি পাটনা হাইকোর্টের বিচারপতি হন। ১৯২০ সালে তিনি হায়দ্রাবাদে নিজামদের প্রধানমন্ত্রী হন এবং একই বছরে লীগ অফ নেশনস-এর প্রথম সমাবেশে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেন।
আজিজা ইমামের ভাইয়ের নাম ছিল কর্নেল মেহবুব আহমেদ, যিনি আজাদ হিন্দ ফৌজের একজন সিনিয়র অফিসার ছিলেন। কর্নেল মেহবুব আহমেদ নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর সামরিক সচিব ছিলেন, যিনি স্বাধীনতার পর বিভিন্ন দেশে ভারতের দূত হয়েছিলেন।
আরও পড়ুন: মেহবুব শামসের খান: ভারত ভুলে গিয়েছে প্রথম অলিম্পিক সাঁতারুকে
Much earlier than @MisaBharti it was Begum Aziza Fatima Imam, sister of Col. Mahboob Ahmad who was a military secretary of Subhas Chandra Bose, became the member of Rajya Sabha twice in 1973 & 1979. In 50s, She was an editor of an Urdu magazine named “Subh-E-Nau”. #Bihar #Women pic.twitter.com/hcYWnVwAtf
— Lost Muslim Heritage of Bihar (@LMHOBOfficial) May 27, 2022
মাওলানা শফি দাউদি ছিলেন আজিজা ইমামের বাবার ভাই, যিনি ভারতের স্বাধীনতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। তিনি বেশ কয়েকবার কারাগারেও গিয়েছিলেন, ১৯২৪ থেকে ১৯২৭ সালের মধ্যে কেন্দ্রীয় আইন পরিষদের সদস্যও নির্বাচিত হন। জাহরা দাউদির মতো বিপ্লবী নারী ছিলেন আজিজা ইমামের আত্মীয়। আর বেগম জুবেদা দাউদির মতো নারী মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন তাঁর নিজের মাসি।
আজিজা ইমাম ছোট থেকেই পড়াশুনায় মনোযোগী ছিলেন। অনেকগুলি ভাষার উপর তাঁর দক্ষতা ছিল। লেখাপড়া শেষ করে সমাজসেবায় নিযুক্ত হন। উর্দু ভাষার উপর ভালো দখল থাকার কারণে বিহারের বহু পত্র – পত্রিকায় তাঁর লেখা প্রকাশিত হত। পঞ্চাশের দশকে “subh e nau” নামে একটি পত্রিকার সম্পাদকও হয়েছিলেন তিনি ।
আজিজা ইমামের বিয়ে হয়েছিল নকি ইমামের সঙ্গে, যিনি ১৯৩৭ থেকে ১৯৩৯ সাল পর্যন্ত বিহার আইন পরিষদের ডেপুটি চেয়ারম্যান ছিলেন এবং পরে পাটনা হাইকোর্টের বিচারপতি হন। আজিজা ইমামের ব্যক্তিত্ব এবং সামাজিক কাজের কারণে ১৯৭৩ সালে রাজ্যসভার সদস্য পদ দেওয়া হয়। মেয়াদ শেষ হওয়ার পরে, তাঁকে আবার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। আজিজা ইমাম ১১ বছর রাজ্যসভার সদস্য ছিলেন।
২২ জুলাই ১৯৯৬ সালে আজিজা ইমাম শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। পাটনার ফুলওয়ারী শরীফের বাগ-ই-মুজিবিয়া কবরস্থানে মা ও ভাই পাশে সমাহিত করা হয় তাঁকে।
আরও পড়ুন: Remembering Raja Ram Mohan Roy :সর্বকালের অন্যতম সেরা বাঙালি রাজা রামমোহন রায়