Budget 2023: Look at the Lok Sabha! Nirmala gave the 'headline' of income tax exemption up to 7 lakhs to give relief to Modi

Budget 2023: নজরে লোকসভা! মোদীকে স্বস্তি দিতে ৭ লক্ষ পর্যন্ত আয়কর ছাড়ের ‘হেডলাইন’ দিলেন নির্মলা

সৈয়দ আলি মাসুদ

বাজেট নিয়ে জনমনে উদ্দীপনা কমে গিয়েছে বহুকাল আগে থেকেই। জিনিসের দাম বেড়ে যাওয়া – কমা নিয়ে আর কারো তেমন আগ্রহ থাকে না। আসলে বাজেট ভাষণগুলিতে আজকের কথা থাকে কম। ভবিষ্যতের কথা বেশি থাকে। প্রতিটি বাজেট যেন ২৫ বছরের একটা ‘ফুলটুস’ পরিকল্পনা। এবারেও ‘নির্মলা তাই’-এর বাজেট থেকে তাই একটি ‘হেডলাইন’ ছাড়া বাকি কিছু বিশেষ পাওয়া যায়নি। পুরো হোমওয়ার্ক করে অবশেষে একটি ‘হেডলাইন’ অবশ্য দিতে পেরেছেন নির্মলা। লাল ব্যাগ থেকে ট্যাব বের করে নির্মলা দিলেন ট্যাক্সের নয়া দাস্তান। তিনি শুনিয়েছেন, মধ্যবিত্তের কানে আরাম লাগার মত একটি কথা! সেটি হল ৭ লক্ষ টাকা  আয় পর্যন্ত ট্যাক্স দিতে হবে না। প্রশ্ন উঠছে, তাহলে সরকারি কোষাগার ভরবে কি করে ? জনকল্যাণের জন্য সরকার টাকা পাবে কোথা থেকে ? তাহলে জনকল্যাণের আর্থিক দায় কি তবে সরকার ঝেড়ে ফেলবে ? সরকার বাহাদুর কি তবে কেবল ‘কিল মারবার গোঁসাই’ হিসাবেই নিজের দায়িত্ব সম্পাদন করবেন? তা না হলে এমন সম্রাট হর্ষবর্ধন মার্কা সিদ্ধান্ত কেন ?

এর নেপথ্যে রয়েছে দুই ভোট। আগামী বছর রয়েছে লোকসভা ভোট। আর চলতি বছরেই ৯ রাজ্যে হবে বিধানসভা ভোট। ফলে জনমুখী নয়, বাজেট করতে হবে একেবারে ভোটমুখী। এই লক্ষ্য নিয়েই এবার ময়দানে নেমেছেন নির্মলা। ভোটবাক্সের জন্য মধ্যবিত্তকে নতুন করে চটাতে চাননি তিনি। ফি বছর কর্পোরেটদের কোলে ঝোল টানলেও এবার খানিকটা সাবধানী ছিলেন অর্থমন্ত্রী। তার উপর হিন্ডেনবার্গ ক্ষত এখন তাজা। এমনিতেই গরিবমানুষের সঙ্গে  বাজেটের কোনো সম্পর্ক কোনোকালেই থাকে না। মধ্যবিত্তও বাজেটে অর্থমন্ত্রীর কাছে থেকে আলাদা করে কিছু আশা করে না। তবে  এতদিন ধরে তাদের একটি দাবি ছিল আয়করে ছাড় বৃদ্ধি।  সেইখানেই ‘জব্বর গেম’ খেলেছেন নির্মলা। ট্যাক্সের এই চালটা নির্মলা দিতে না পারলে সত্যিই বাজেটটা মাঠে মারা যেত। যারা বাজেট নিয়ে খানিক খোঁজ-খবর রাখে তারা সমালোচনায় মুখর হতো। ৭ লক্ষ টাকা আয়ের ওপর ট্যাক্স দিতে হবে না জেনে যারা আল্হাদিত তারা অনেকেই খবরের কারবারি। এই বাজেট তাদের অনেকেরই স্বার্থ খানিকটা চরিতার্থ করবে বলে মনে হচ্ছে।

আজকের বাজেটে মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে কোনো কথা নেই। মুদ্রাস্ফীতি নিয়ে কথা নেই। গরিব মানুষের নিয়েও আলাদা করে আলোচনার প্রয়োজন মনে করেননি নির্মলা। যেন এসব কোনো সমস্যায় নয়। সমস্যা একটাই  ছিল– তা হল ইনকাম ট্যাক্স। তার ওষুধ দিয়ে দিয়েছেন তিনি । স্বাভাবিকভাবেই যে প্রশ্নটা উঠছে তা হল, তাহলে কেন্দ্র কোথা থেকে টাকা তুলে কোষাগার ভরাবে ? এর উত্তর নির্মলার অনুচ্চারিত ভাষণেই রয়েছে।

আরও পড়ুন: ক্রিকেট ও ঘোড়সওয়ারিতে পারদর্শী – চিনে নিন ভারতীয় উপমহাদেশের প্রথম মহিলা সম্পাদক সৈয়দা মুহাম্মদীকে

সব টাকা সরকার তুলে নেবে ঘুরপথে। ঠাস বুনোট জিএসএসটি জাল থেকে কেউ বের হতে পারবে না। সরকার সব কিছুর ওপর জিএসটি এমন করে লাগিয়ে দেবে যে দ্রব্যমূল্য কমার আশা আর করা যাবে না। সরকারকে জিএসটি ফাঁকি দিয়ে কোনো কিছু কেনে যাবে না। ফলে ৭ লক্ষ টাকা আয়কর ছাড়  দিতে সরকারের গায়ে লাগার কথা নয়। ৭ লক্ষ টাকা আয়কর ছাড়ের এই বোঝা বইতে হবে, দিনমজুর, মুটে, ঠেলা ওয়ালার মত ক্ষুদ্র আয়ের মানুষদের। ফলে ওই টাকা সরকারের ঘরে ঢুকতে সময় লাগবে না।

এমনটিতেই অনেকেই প্রশ্ন চলেছেন ৭ লক্ষ পর্যন্ত আয়কর ছাড়ে সরকারের যুক্তি ঠিক কোথায় ? এর জবাবে কোনো কোনো অর্থনীতিবিদ মনে করছেন সরকার এক্ষেত্রে মনে করছে এই কর ছাড়ের কারণে মানুষ আরও উৎপাদনমুখী হবে। আরও পরিশ্রম  করে টাকা জমাবে। ফলে বাড়বে কর্মসংস্থান ও কাজের পরিধি। কিন্তু ৭ লক্ষ পর্যন্ত ট্যাক্স দিতে হবে না জেনে মানুষ সাংঘাতিক কর্মযোগী হয়ে যাবে, একথা পাগলেও বিশ্বাস করবে না। তবে হ্যাঁ কালো টাকার পরিমাণ খানিক কমবে। যারা ট্যাক্স না দিয়ে দিনে দিনে কালো টাকা বাড়াচ্ছিল, তাদের অনেকেরই আর এর প্রয়োজন পড়বে না। তবে লোভ এমন একটা জিনিস যাকে কোনো অর্থনীতির বই আলাদা করে ডিফাইন করতে পারে না। তাই ৭ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয় করে ছাড় দিলে সবাই সুবোধ হয়ে যাবে এ ভাবনা অমুলূক।

গ্যাসের দাম নিয়ে আলাদা করে কোনো কথা নেই বাজেটে। লাগাতার বাড়ছে গ্যাসের দাম। স্মৃতি ইরানির আর  ‘নৌটঙ্কি’ প্রতিবাদ নেই। নির্মলা তাই-ও মনে করছেন এ বিষয়ে আর কথা বলে কি হবে! ও মানুষের গা সওয়া হয়ে গেছে। তাই পেট্রল, ডিজেল, গ্যাস, ফার্টিলাইজার নিয়ে নতুন করে কথা খরচ করা অমূলক। বেকার যুবক-যুবতীদের জন্যেও আলাদা করে বাজেট কিছু নেই।  দেখতে গেলে গোটা বাজেটে আন্ডারলাইন করা মতো একটিই কথা, তা হল ৭ লক্ষ পর্যন্ত আয়কর ছাড়।

আরও পড়ুন: NOSTALGIA : আপনি কি নস্টালজিক ? জানেন কি এই শব্দের উৎপত্তি কিভাবে ?