Ibn Sina: Top peripatetic philosopher

সর্বকালের শ্রেষ্ঠ চিন্তাবিদ, ইবনে সিনার বিস্ময়কর জীবন অবাক করবে আপনাকে

ইতিহাসের অত্যন্ত গুণী ব্যক্তিদের মাঝে একজন হলেন এই ইবনে সিনা।ইবনে সিনার পুরো নাম আবু আলী হোসাইন ইবনে আবদুল্লাহ আল হাসান ইবনে আলী ইবনে সিনা। তাঁকে বলা হয় ইতিহাসের অন্যতম সেরা চিকিৎসাবিজ্ঞানী, গণিতজ্ঞ, জ্যোতির্বিজ্ঞানী এবং দার্শনিক। ইরান, তুরস্ক, আফগানিস্তান, রাশিয়াসহ অন্যান্য দেশের বিজ্ঞজনেরা এই মহত্প্রাণ দার্শনিককে তাঁদের ‘জাতীয় জ্ঞানবীর’ হিসেবে দাবি করে থাকেন। আজ জেনে নিন ইবনে সিনার জীবন সম্পর্কে কিছু কথা- কী ছিল তাঁর কীর্তি, কীভাবেই বা তিনি হলেন এত বিখ্যাত?

ইবনে সিনা জন্মগ্রহণ করেন আনুমানিক ৯৮০ খ্রিস্টাব্দে। তিনি বাস করতেন উজবেকিস্তানের বিখ্যাত শহর বোখারার নিকটবর্তী আফসানা গ্রামে। ছোটবেলা থেকেই তাঁর মধ্যে লুকিয়ে ছিল অসামান্য মেধা ও প্রতিভা। মাত্র ১০ বছর বয়সেই তিনি পবিত্র কোরআনের ৩০ পারা মুখস্থ করে ফেলেন।তার ৩ জন গৃহশিক্ষক ছিলেন। তাদের মধ্যে ইসমাইল সুফি তাকে শিক্ষা দিতেন ধর্মতত্ত্ব, ফিকাহশাস্ত্র আর তাফসির। মাহমুদ মসসাহ শিক্ষা দিতেন গণিতশাস্ত্র এবং বিখ্যাত দার্শনিক আল না তেলি শিক্ষা দিতেন দর্শন, ন্যায়শাস্ত্র, জ্যামিতি, টলেমির আল মাজেস্ট, জাওয়াহির মানতিক প্রভৃতি। মাত্র ১৭ বছর বয়সে প্রভূত জ্ঞান তিনি লাভ করে ফেলেন।

এ সময় চিকিৎসাশাস্ত্র সম্বন্ধে তার মৌলিক জ্ঞানের বিকাশ ঘটে।পড়তে শুরু করেন আর আবিস্কার করতে থাকেন নতুন নতুন চিকিৎসার উপায়। ১৮ বছর বয়সেই পুরোদমে ডাক্তার হয়ে গেলেন তিনি! তাঁর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ল দূর-দূরান্তে, বিনা পয়সাতেও চিকিৎসা করতেন ইবনে সিনা।   মাত্র ১৯ বছর বয়সে তিনি বিজ্ঞান, দর্শন, ইতিহাস, অর্থনীতি, রাজনীতি, গণিতশাস্ত্র, জ্যামিতি, ন্যায়শাস্ত্র, চিকিৎসাশাস্ত্র, কাব্য, সাহিত্য প্রভৃতি বিষয়ে অসীম জ্ঞানের অধিকারী হন। ২১ বছর বয়সে ‘আল মজমুয়া’ নামক একটি বিশ্বকোষ রচনা করেন। স্বাধীন জীবনযাপনে অভ্যস্ত ছিলেন সিনা। অনেক দেশ ভ্রমণ করেছিলেন। তার অভিজ্ঞতার ঝুলিও ছিল সমৃদ্ধ।

আরও পড়ুন:  Kazi Nazrul Islam’s 122nd birth anniversary: ভুল নয়, কাজী নজরুল ইসলামকে ভাগ করার চেষ্টা ছিল আমাদের পাপ

তৎকালীন মুসলিম বিশ্বের অন্যতম সমৃদ্ধ নগরী খোয়ারিজমে গিয়েছিলেন। সেখানে তার সঙ্গে পণ্ডিত আল বেরুনির সাক্ষাৎ হয়। আল বেরুনির উৎসাহ ছিল ভারতবর্ষ নিয়ে। কিন্তু ইবনে সিনা কখনো ভারত অভিমুখে আসেননি। তিনি যাত্রা করেছিলেন ভারতবর্ষের উল্টো দিকে অর্থাৎ পশ্চিম দিকে। তার মূল উৎসাহও ছিল পশ্চিমের দিকে। এদিকে ইতিহাস থেকে জানা যায়, ইবনে সিনার চিকিৎসাবিজ্ঞান সংক্রান্ত বইগুলো প্রাচ্যের সীমানা ছাড়িয়ে পাশ্চাত্য জগতে স্থায়ী অবস্থান তৈরি করে নিয়েছিল। খোয়ারিজম শহর থেকে বিদায় নিয়ে তিনি রাজধানী শহর গুরুগঞ্জে উপস্থিত হন। এই শহরে ইবনে সিনা তার জীবনের বেশ কিছু সময় অতিবাহিত করেন। বলে রাখা দরকার যে, এখানে অবস্থানকালেই চিকিৎসাবিদ্যা বিষয়ে তার অমর গ্রন্থ কানুন ফিত-থিব রচনা করেন। এই গ্রন্থকে অনেককাল ইউরোপে চিকিৎসার ক্ষেত্রে অপ্রতিদ্বন্দ্বী ও নির্ভরযোগ্য গ্রন্থ হিসেবে বিবেচিত করা হতো। মানবদেহের অঙ্গ সংস্থান ও শরীরতত্ত্ব সম্বন্ধে তিনি যে সব তথ্য প্রদান করেছিলেন সেগুলো সপ্তদশ শতাব্দীর শেষভাগ পর্যন্ত পৃথিবীর সব দেশের চিকিৎসকরা অনুসরণ করেছিলেন। বলা যায়, আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের তিনিই জনক।

ইবনে সিনা পদার্থবিজ্ঞান, দর্শন, ধর্মতত্ত্ব, জ্যামিতি, গণিত, চিকিৎসাবিজ্ঞান, সাহিত্য প্রভৃতি বিষয়ে প্রায় শতাধিক কিতাব রচনা করেন। এগুলোর মধ্যে আল কানুন, আশ শেফা, আরযুযা ফিত-থিব, লিসানুল আরব, আল মজনু, আল মুবাদাউন মায়াদা, আল মুখতাসারুল আওসাত, আল আরসাদুল কলিয়া উল্লেখযোগ্য। এসবের মধ্যে আল কানুন কিতাবটি চিকিৎসাবিজ্ঞানে এক বিপ্লব ঘটিয়েছিল।  এই গ্রন্থ চিকিৎসাশাস্ত্রের মূল অপতিদ্বন্দ্বী পাঠ্যপুস্তক হিসেবে গণ্য ছিল প্রায় পাঁচ শতক ধরে।

আল কানুন কিতাবটি ল্যাটিন, ইংরেজি, হিব্রু প্রভৃতি ভাষায় অনূদিত হয় এবং তৎকালীন ইউরোপের চিকিৎসা বিদ্যালয়গুলোতে পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। আল কানুন পাঁচটি বিশাল খণ্ডে বিভক্ত, যার পৃষ্ঠা সংখ্যা ৪ লক্ষাধিক। কিতাবটিতে শতাধিক জটিল রোগের কারণ, লক্ষণ, পথ্যাদির বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেওয়া হয়। ইবনে সিনা ফার্মাকোলজি ও ক্লিনিক্যাল প্র্যাকটিসের উন্নয়ন করেন। তবে তার মূল অবদান ছিল চিকিৎসাশাস্ত্রে। তিনি হলিস্টিক মেডিসিনের প্রণেতা। যেখানে একই সঙ্গে শারীরিক, মানসিক এবং আত্মিক যোগসূত্রকে বিবেচনায় রেখে চিকিৎসা দেওয়া হয়। তিনি মানুষের চোখের সঠিক এনাটমি বর্ণনা করেন। তিনি বলে যান যক্ষ্মা একটি ছোঁয়াচে রোগ। যা আরও পরে সঠিক বলে প্রমাণিত হয়।

কথিত আছে চিকিৎসাবিষয়ক গবেষণার পাশাপাশি তিনি ধ্যান করতেন অধিবিদ্যা, ধর্মতত্ত্ব এবং দর্শনের মৌলিক বিষয়ে।  দার্শনিক গ্রন্থ কিতাব আল শিফা ও সমাদৃত হয়েছিল সেই সময়।  ৫৮ বছর বয়সে, ১০৩৭ সালের জুন মাসে তিনি মারা যান, সময়টা ছিল রমজান। তাঁকে সমাহিত করা হয় ইরানের হামাদান শহরে।

আরও পড়ুন: মেহবুব শামসের খান: ভারত ভুলে গিয়েছে প্রথম অলিম্পিক সাঁতারুকে