Mehboob Shamsher Khan: A Forgotten tale of India’s first Olympic swimmer

মেহবুব শামসের খান: ভারত ভুলে গিয়েছে প্রথম অলিম্পিক সাঁতারুকে

ভারতের ক্রীড়াবিদরা তাঁদের নিখুঁত দৃঢ় সংকল্প এবং কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ইভেন্টে দেশকে গর্বিত করেছেন। হকি, ক্রিকেট, বক্সিং হোক বা কুস্তি – প্রত্যেক একক ক্রীড়াবিদই ভারতীয় খেলায় অনেক অবদান রেখেছেন।তাঁদের মধ্যে অনেকেই পদক এবং ট্রফি জিতেছেন আর অনেক ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব কোনো আন্তর্জাতিক ইভেন্ট না জিতেও ভারতীয় ক্রীড়াতে প্রচুর অবদান রেখেছেন। তাঁদের প্রভাব আগামী প্রজন্মের জন্য পথ তৈরি করেছে।

এমনটাই ছিলেন ভারতের প্রথম অলিম্পিক সাঁতারু শামসের খান। তিনিই প্রথম ভারতীয় যিনি ১৯৫৬ সালে গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকে সাঁতারে দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন। তিনি শুধু অলিম্পিকে জাতির প্রতিনিধিত্ব করেননি, ভারতীয় সেনাবাহিনীতেও কাজ করেছেন। শামসের ১৯৬২ সালে ভারত-চীন যুদ্ধ এবং ১৯৭১সালে পাকিস্তানের সাথে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন।

জীবনের প্রথমার্ধ

কিংবদন্তি সাঁতারু শামসের খান ১৯৩৩ সালে অন্ধ্র প্রদেশের গুন্টুরের কাইথেপল্লীতে জন্মগ্রহণ করেন। ১৬ বছর বয়সে
তিনি ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। শামসের ব্যাঙ্গালোরের মাদ্রাজ ইঞ্জিনিয়ার গ্রুপে অন্তর্ভুক্ত হন। তিনি কৃষ্ণা নদীতে ছোট থেকেই সাঁতার কাটতেন। সেই থেকেই সাঁতারের প্রতি তাঁর ভালোবাসা জন্মায়। ১৯৪৯ সালে সেনাবাহিনীতে থাকাকালীন তিনি পেশাদারভাবে সাঁতার কাটার সিদ্ধান্ত নেন।

১৯৪৯ সালে, মহীশূরে তিনি প্রথম সাঁতারের প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। সেখান থেকে শামসেরকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। ১৯৫৪ সালে ২০০ মিটার butterfly -তে জাতীয় রেকর্ড করেছিলেন এবং ১৯৫৫ সালে বেঙ্গালুরুতে তিনি সমস্ত রেকর্ড ভেঙে দিয়েছিলেন।

জাতীয় পর্যায়ে রেকর্ড ব্রেকিং কৃতিত্বের কারণে, শামসের খান ১৯৫৬ সালে মেলবোর্ন গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকের বাছাই পর্বের টিকিট অর্জন করেছিলেন। অলিম্পিকে তাঁর উপস্থিতি প্রথম ভারতীয় সাঁতারুর তকমা দিয়েছিল তাঁকে। তিনি কোয়ালিফায়ারে পঞ্চম স্থান অর্জন করতে সক্ষম হন এবং ব্রেস্টস্ট্রোক এবং বাটারফ্লাই উভয় ক্ষেত্রেই অংশগ্রহণ করেন। সেই সময় এতো বিজ্ঞাপন, স্পনসরশিপের ঝলমলে আলো ছিল না। অলিম্পিকে দারুন পারফর্ম করার জন্য ভারতীয় সেনাবাহিনী সেই সময় তাঁর খাবার এবং অন্যান্য খরচ মেটাতে ৩০০ টাকা ঋণ মঞ্জুর করে।

আরও পড়ুন: Remembering Raja Ram Mohan Roy :সর্বকালের অন্যতম সেরা বাঙালি রাজা রামমোহন রায়,

ভারতে ফিরে আসার পর, খান আরও ভালো প্রশিক্ষক এবং সুযোগ-সুবিধা সহ কঠোর প্রশিক্ষণে মনোনিবেশ করতে চেয়েছিলে। কিন্তু অর্থের অভাবে তাঁর সেই স্বপ্ন ভেঙে যায়। এরপর ভারতীয় সেনাবাহিনীর হয়ে তিনি দেশের সেবা করেন।

অবসর গ্রহণ এবং কঠিন অবস্থায় দিন গুজরান

তিনি ২৪ বছর সেনাবাহিনীতে চাকরি করেন এবং ১৯৭৩ সালে ৪৩ বছর বয়সে “সুবেদার” পদ থেকে অবসর গ্রহণ করেন। অবসর গ্রহণের পর তিনি তার স্ত্রী এবং পাঁচ সন্তানের সাথে কাইথেপল্লীতে বসবাস করতেন। সরকারের কাছ থেকে কোনো ধরনের সহায়তা না পাওয়ায় শামসেরের পরিবার আর্থিক সংকটে পড়ে এবং তাঁদের জীবিকা হয়ে ওঠে কৃষিকাজ।

১৯৯০ সালে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়। সেবছর অন্ধ্র প্রদেশের ঘূর্ণিঝড়ে তাঁর বাড়ি ভেঙে যাওয়া সত্ত্বেও তিনি কোনো ধরনের সরকারী সহায়তা পাননি। তারপরে এমন একটি ধাক্কা আসে যা তার হৃদয় ভেঙে দেয।শামসের জানতে পারেন যে তাঁর নাম সুইমিং ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ার ‘হল অফ ফেম’-এর তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শামসেরের হার্টের সমস্যা দেখা দেয়। ২০১০ সালে একটি স্ট্রোকে আক্রান্ত হন কিন্তু পরিবারের অর্থ বাঁচানোর জন্য চিকিৎসা নিতে অস্বীকার করেন।১৫ অক্টোবর, ২০১৫ সালে শামসের খান নিজের বাড়িতে হৃদরোগে আক্রান্ত হন এবং শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

অলিম্পিক অভিজ্ঞ এই ব্যাক্তি নিজের স্বীকৃতির জন্য কখনও লড়াই করেননি যা তাঁর প্রাপ্য ছিল। সময়ের সাথে সাথে শামসের খান ক্রীড়া জগতে একটি বিস্মৃত নাম হয়ে গেছেন। যদিও গত কয়েক দশক ধরে ভারতে ক্রীড়া বাস্তুতন্ত্র পরিবর্তিত হচ্ছে, এটি পরিকাঠামোতে উল্লেখযোগ্য উন্নতি এবং বিভিন্ন খেলায় প্রতিযোগিতামূলক লিগের প্রবর্তনও দেখিয়েছে। ভারতের খেলাধুলার উন্নতি অব্যাহত রয়েছে। এত কিছুর পরেও খানের রেকর্ড এখনও অক্ষত রয়েছে। শামসের খান একজন সত্যিকারের ভারতীয় নায়ক ছিলেন, যাঁর কৃতিত্ব ক্রীড়াবিদদের জন্য অনুপ্রেরণা নেওয়ার জন্য পথ রেখে গেছে।

আরও পড়ুন: ইংরেজদের কাছে বহুবার ক্ষমা প্রার্থনা, নিজেই নিজেকে দিয়েছিলেন ‘বীর’ উপাধি – জন্মদিনে জানুন সাভারকারের বিতর্কিত জীবন সম্পর্কে