সৈয়দা মুহাম্মদী বেগম ছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশের প্রথম মহিলা যিনি একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা ‘তেহজিব-ই-নিসওয়ান’-এর সম্পাদক ছিলেন। উর্দু পত্রিকাটি নারীদের মুক্তির জন্য নিবেদিত ছিল। ১লা জুলাই, ১৮৯৮ সালে ম্যাগাজিনটির প্রথম সংস্করণ বেরিয়েছিল।
মোহাম্মদী বেগম তার স্বামী মমতাজ আলির সঙ্গে মহিলাদের সচেতন করার কাজ শুরু করেন। মমতাজ, মহিলাদের অধিকারের উপর জোর দিয়ে একটি বইও লিখেছিলেন, ‘হুকুক-ই-নিসওয়ান’, তিনি ছিলেন একজন দারুল উলূম, দেওবন্দ শিক্ষিত লাহোর ভিত্তিক প্রকাশক।তিনি স্যার সৈয়দ আহমদ খানের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন। এএমইউতে একটি হোস্টেলের নামকরণ করা হয়েছে মমতাজ আলির নামে। মুহাম্মাদী এবং তাঁর স্বামী বুঝতে পেরেছিলেন যে মুসলিম পুরুষদের সাথে মুসলিম নারীদেরও আধুনিক শিক্ষা গ্রহণ করা গুরুত্বপূর্ণ। এটি অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে যখন পত্রিকাটি চালু হয়েছিল তখন আলীগড় কলেজ ছিল শুধুমাত্র একটি ছেলেদের প্রতিষ্ঠান এবং আলীগড়ে কোন মহিলা কলেজ ছিল না।
মোহাম্মদী বেগম, পাঞ্জাবের শাহপুরে ১৮৭৮ সালে জন্মগ্রহণ করেন, প্রথম স্ত্রীর মৃত্যু হলে ১৮৯৭ সালে মমতাজ আলির সঙ্গে বিয়ে হয় তাঁর। মুহাম্মদীর পিতা সৈয়দ মুহাম্মদ শফি ছিলেন ওয়াজিরাবাদ হাই স্কুলের অধ্যক্ষ এবং তিনি নিশ্চিত করেছিলেন যে বিয়ে হয়ে গেলেও তাঁর মেয়েরা আধুনিক শিক্ষা লাভ করবে।মোহাম্মদী ক্রিকেট খেলতেন এবং ঘোড়ায় চড়তেন। মমতাজের সঙ্গে যখন তাঁর বিয়ে হয়, তখন তিনি লাহোরে একটি প্রকাশনা সংস্থা এবং একটি ছাপাখানার মালিক ছিলেন।
বিয়ের এক বছরের মধ্যে, মুহাম্মদী তাঁর স্বামীর কাছ থেকে প্রকাশনা, সম্পাদনা এবং প্রুফরিডিংয়ের কাজ শিখেছিলেন। তিনি ইংরেজি, হিন্দি, উর্দু, ফারসি ও আরবি পড়তে পারতেন। শীঘ্রই নারীদের জন্য নিবেদিত প্রথম উর্দু সাপ্তাহিক চালু হয়, ‘তেহজিব-ই-নিসওয়ান’।
আরও পড়ুন: সর্বকালের শ্রেষ্ঠ চিন্তাবিদ, ইবনে সিনার বিস্ময়কর জীবন অবাক করবে আপনাকে
স্বাভাবিক ভাবেই প্রগতিশীল এই পত্রিকাকে সেই সময়কার মানুষ ইতিবাচকভাবে নেয়নি। মুহাম্মাদী ও মমতাজ সুপরিচিত শিক্ষিত ব্যক্তিদের বিনামূল্যে কপি পাঠাতেন। বিনিময়ে তাঁরা মুহাম্মাদীকে গালিগালাজ করা চিঠিসহ কপি ফেরত পেত। ম্যাগাজিনটির বিক্রি খুব ধীরে ধীরে হয়েছিল। প্রকাশিত হওয়ার তিন মাস পরেও মাত্র ৭০ জন ম্যাগাজিনে সাবস্ক্রাইব করেছিল, তিন বছর পর ৩৪৫ জন এবং পাঁচ বছর পর ৪২৮ জন।
মুহাম্মদী পরবর্তীতে ১৯০৫ সালে মহিলাদের জন্য আরেকটি ম্যাগাজিন ‘মুশির-ই-মাদার’ চালু করেন। যা তাঁর মৃত্যুর পর আর টিকেনি। তিনি মহিলাদের জন্য স্কুলও প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং হল – তিনি শুধুমাত্র মহিলাদের জন্য একটি দোকান খুলেছিলেন। মহিলারাই সেখানে ক্রেতা – বিক্রেতা ছিল। সব কাজ মহিলাদের দ্বারাই পরিচালিত ছিল এবং কোনও কাজের জন্য কোনও পুরুষকে দোকানের ভিতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হত না।
১৮৯৭ সাল থেকে মুহাম্মদী নিজেকে সামাজিক কাজে কাজে নিমজ্জত করেছিলেন।তিনি পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন, প্রবন্ধ, গল্প, কবিতা লিখেছেন এবং ভারতের নারীদের মুক্তির জন্য জনসভা করেছেন। এই কঠোর পরিশ্রম তার স্বাস্থ্যের উপর একটি বড় প্রভাব ফেলে এবং ১৯০৮ সালে মাত্র ৩০ বছর বয়সে তিনি এই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেন।
আরও পড়ুন: মেহবুব শামসের খান: ভারত ভুলে গিয়েছে প্রথম অলিম্পিক সাঁতারুকে