মহান আল্লাহ বান্দার দয়াশীল। দয়া করে আমলের বরকতে তিনি রিজিক বাড়িয়ে দেন। কুরআন-সুন্নাহর কথা অনুযায়ী রিজিক(Rizq) বৃদ্ধির গুরুত্বপূর্ণ ১৫টি আমল আছে। মজবুত ঈমানের সঙ্গে এই আমলগুলি(Amal) করলে ফল মিলবেই।
অনেকে কঠোর পরিশ্রম করেন কিন্তু প্রাপ্তি সেভাবে আসে না। কাজে কোনো বরকত (Barakah)নেই। ধন-সম্পদ, সন্তান-সন্ততি কিংবা আমল-ইবাদতেও বরকত নেই।আবার এমন অনেক লোক আছেন, যারা কম হায়াত পেয়েছেন কিন্তু ধন-সম্পদ, সন্তান-সন্তুতি, আমল-ইবাদতে বরকত লাভ করেছেন। অনেক অল্প পূজিতে ব্যবসা এবং অল্প বেতনে চাকরি করার পরও তার রিজিকের অভাব নেই। পরিবারে অফুরন্ত বরকত।
বরকত বা শ্রীবৃদ্ধি লেভার উপায়
- তাওবাহ-ইসতেগফার (tawbah)
হরজত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, যারা বেশি বেশি তাওবাহ-ইসতেগফার করে; তাদের সামনে যত সংকটই (অভাব) থাকুক না কেন, মহান আল্লাহ তাআলা তা সমাধান করে দেন।’ (মুসতাদরেকে হাকেম)
- আল্লাহর রাস্তায় দান বা ব্যয় করা
যারা আল্লাহর রাস্তায় দান করে, আল্লাহ তাআলা তাদের অফুরন্ত রিজিক দান করেন। কুরআনুল কারিমে আল্লাহ ঘোষণা করেছেন, ‘(হে রাসুল! আপনি)বলুন, নিশ্চয়ই আমার রব তাঁর বান্দাদের মধ্যে যার জন্য ইচ্ছা রিজিক প্রশস্ত করেন এবং সঙ্কুচিত করেন। আর তোমরা যা কিছু আল্লাহর জন্য ব্যয় কর তিনি তার বিনিময় দেবেন এবং তিনিই উত্তম রিজিকতা।’ (সুরা সাবা : আয়াত ৩৯)
- আল্লাহর ওপর পূর্ণ বিশ্বাসে অটল থাকা (Iman)
আল্লাহর প্রতি সম্পূর্ণ বিশ্বাস এবং তাকে ভয় করলে তিনি বান্দার প্রতি বরকত বা কল্যাণ দান করেন।আল্লাহ তাআলা বলেন-
‘আর যে কেউ আল্লাহকে ভয় করবে, আল্লাহ তার নিষ্কৃতির পথ করে দেবেন। আর তাকে তার ধারণাতীত উৎস হতে রুযী দান করবেন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর নির্ভর করবে, তার জন্য তিনিই যথেষ্ট হবেন। নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর ইচ্ছা পূরণ করবেনই। আল্লাহ সবকিছুর জন্য স্থির করেছেন নির্দিষ্ট মাত্রা।’ (সুরা তালাক : আয়াত ২-৩)
‘আর যদি সে জনপদের অধিবাসীরা ঈমান আনত এবং পরহেযগারী অবলম্বন (তাকে ভয়) করত, তবে আমি তাদের প্রতি আসমানি ও দুনিয়ার নেয়ামতসমূহ উম্মুক্ত করে দিতাম। কিন্তু তারা মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে। সুতরাং আমি তাদেরকে পাকড়াও করেছি তাদের কৃতকর্মের বদলাতে।’ (সুরা আরাফ : আয়াত ৯৬)
- আত্মীয়-পরিজনের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রাখা
আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার মাধ্যমে বরকত ও কল্যাণ নেমে আসে। এটি অনেক পরীক্ষিত একটি আমল। আত্মীয়-স্বজন তথা মা-বাবা, ভাই-বোন তথা রক্তের সম্পর্কের আত্মীয়দের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখা।
হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কামনা করে যে, তার রিজিক বাড়াতে চায় বা প্রশস্ত করতে চায়; তার হায়াত বা আয়ুকে দীর্ঘ করতে সে যেন আত্মীয়-স্বজন, পরিবারের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখে।’ (বুখারি ও মুসলিম)
- ওমরাহ করা (umrah)
যারা অভাব কমাতে চায়, গোনাহ কমাতে চায় তাদের জন্য বার বার ওমরাহ করা জরুরি। হাদিসে এসেছে-
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ওমরাহ করে; ওমরাহ তার গোনাহ, তার অভাব অনেক দূরে পাঠিয়ে দেয়।’ (তিরমিজি)
- বিয়ে করা
যারা অবিবাহিত তারা নেক নিয়তে বিয়ে করলে মহান আল্লাহ তাদের অভাব দূর করে দেবেন।
‘তোমাদের মধ্যে যারা বিবাহহীন, তাদের বিবাহ সম্পাদন করে দাও এবং তোমাদের দাস ও দাসীদের মধ্যে যারা সৎকর্মপরায়ন, তাদেরও। তারা যদি নিঃস্ব হয়, তবে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে সচ্ছল করে দেবেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ।’ (সুরা নুর : আয়াত ৩২)
- আল্লাহর কাছে বেশি বেশি প্রার্থনা করা
অভাব থেকে মুক্ত থাকতে চাইলে, রিজিকে বরকত পেতে চাইলে আল্লাহর কাছে বেশি বেশি দোয়ার বিকল্প নেই।‘তোমাদের প্রতিপালক বলেন, ‘তোমরা আমাকে ডাক, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব। যারা অহংকারে আমার উপাসনায় বিমুখ, ওরা লাঞ্ছিত হয়ে জাহান্নামে প্রবেশ করবে।’ (সুরা গাফির/মুমিনুন : আয়াত ৬০)
- অসহায়দের প্রতি সদয় আচরণ ও দান করা
অসাহয়ের প্রতি দান ও সদাচরণে এ তাগিদ দিয়েছেন প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- ‘দান করার কিছু যদি না থাকে তবে একটি খেজুরের অংশ দিয়ে হলেও দান করার মাধ্যমে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচার চেষ্টা কর।’
- ইবাদতের জন্য নিজেকে ব্যস্ত রাখা
ইবাদত তথা নামাজে খুব বেশি মনোযোগী হওয়া। নিজে যেমন প্র্যত্যেক ওয়াক্তর নামাজ পড়তে হবে তেমনি পরিবারের লোকদের নামাজ পড়ানো ব্যাপারে বিশেষ ভূমিকা রাখতে হবে। আর তাতে আল্লাহ রিজিক বাড়িয়ে দেবেন।
- সালাম দেওয়া (Salam)
সুস্পষ্ট বিশুদ্ধ সালামের ব্যাপক প্রচলন করা বরকত লাভের অন্যতম মাধ্যম।সালামের পুরোটাই শান্তি, রহমত ও বরকতের দোয়া। যারা নিয়মিত বেশি বেশি সালামের ব্যাপক প্রচালন করার চেষ্টা করেন। ঠিক সালামের উত্তরদানকারী ব্যক্তিও ঠিক একই দোয়া করেন-
‘আপনার ওপরও শান্তি, রহমত ও বরকত নাজিল হোক।’